odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Sunday, 9th November 2025, ৯th November ২০২৫

'ভয়ানক পুকুর' হরর কাণ্ড!

Akbar | প্রকাশিত: ১৪ May ২০১৯ ১৯:৫৫

Akbar
প্রকাশিত: ১৪ May ২০১৯ ১৯:৫৫

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, ১৪ মে (অধিকারপত্র): একের পর এক ঘটনায় এলাকার মানুষের মধ্যে ভীতির সৃষ্টি করেছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার ওয়াপদা পুকুর। পরিচিত হয়ে উঠেছে ‘ভয়ানক পুকুর’ হিসেবে। আতঙ্কে এই পুকুরে গোসল করেন না কেউ। সর্বশেষ গেল মাসে (এপ্রিল) এক যুবক মারা গেলে ‘পুকুরটি আসলেই দোষী’- এমন বিশ্বাস জন্ম নেয় সবার মধ্যে। স্থানীয় আলেম-ওলামারা পুকুরটিকে দোষী হিসেবে ঘোষণা করেছেন। স্থানীয় মসজিদে জুমার নামাজের বয়ানেও সতর্ক করা হয় এই পুকুর সম্পর্কে।

গেল এপ্রিলের দ্বিতীয় সপ্তাহের সন্ধ্যায় ফরহাদ হোসেন নামে এক তরুণ পুকুরের পানিতে ডুবে মারা যাওয়ার উপক্রম হয়। তখন মানুষ চারপাশে দাঁড়িয়ে দোয়া-দরুদ পড়তে থাকেন। এরপরই সে ধীরে ধীরে সাঁতরে পাড়ে আসে।

এই পুকুর নিয়ে ভয়ভীতির গল্প অনেক দিনের। শুধু পুকুর নয় ওয়াপদার ওই গোটা এলাকা দোষী বলেই মনে করেন অনেকে।

ওয়াপদা মসজিদের খতিব মোজাম্মেল হক আকরামী বলেন, সেদিনের ঘটনার পর আমি সবাইকে সতর্ক করেছি এই পুকুর নিয়ে। বিশেষ করে যুবকদের। এসব ঘটনা জ্বিনজাতির কাজ বলেও মনে করেন তিনি।

এর আগে ২০১৭ সালে এই পুকুরে ডুবেই মারা যান শাকিব খান (১৬) নামে এক স্কুলছাত্র। পুকুরের পাশে মাঠে ক্রিকেট খেলছিল সে। বল ছিটকে গিয়ে পরে পানিতে। সেই বল কুড়াতে গিয়ে মারা যায় সে।

শাকিবের মৃত্যুর কারণ হিসেবে পুকুরের মধ্যে বিশেষ কোনো কিছু থাকাকেই দায়ী করেন তার সহপাঠী ও এলাকার মানুষ। তাদের দাবি দোষী পুকুরই কেড়ে নিয়েছে তার প্রাণ। পুকুরের ভেতর কিছু একটা আছে।

আজ থেকে ১৮-১৯ বছর আগে ওয়াপদার এক নৈশপ্রহরীকে পুকুরের পাড়ে মুমূর্ষু অবস্থায় পাওয়া যায়। তার জামাকাপড় ছিল ভেজা। একদিন বাদেই মৃত্যু হয় শামীম নামের ওই নৈশপ্রহরীর।

শহরের দাতিয়ারা এলাকায় বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিতরণ বিভাগের (ওয়াপদা) বৃহৎ আকারের এই পুকুর নিয়ে ভয়ভীতির গল্প অনেক দীর্ঘ। শুধু পুকুর নয় ওয়াপদার এই গোটা এলাকা দোষী বলেই জানান অনেকে। ওয়াপদার কর্মচারী বসবাসের বিল্ডিংয়ের ছাদে গভীর রাতে এখনো অনেকে শুনেন নাচ-গানের শব্দ।

বিদ্যুৎ বিভাগ সূত্র জানিয়েছে, বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিতরণ বিভাগের অফিস ও কর্মচারীদের আবাসস্থল করার জন্যে ১৯৬২ সালে দাতিয়ারায় প্রায় ২৩ একর জায়গা অধিগ্রহণ করা হয়। এরমধ্যে প্রায় ৮ একর আয়তনের পুকুরটি খনন করে স্থাপনা নির্মাণস্থলে মাটি ভরাট করা হয়। পুরো এলাকাজুড়ে রয়েছে এখনো পুরোনো অনেক গাছ। তবে এই গাছের দিকেও ইঙ্গিত রয়েছে কারো কারো। তাদের ধারণা এতেই বাসা বেঁধে আছে অন্যকিছু।

স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর ক্যাম্প ছিল এই ওয়াপদায়। সুরক্ষিত কয়েকটি বাংকার সেই স্মৃতি বহন করছে এখনো। এসব বাংকারে থাকতেন পাকবাহিনীর কর্মকর্তারা। বিভিন্ন স্থান থেকে মুক্তিযোদ্ধাদের ধরে এনে নির্যাতনও করা হতো এখানে।

হাজী ইউনুছ মিয়া। বয়স সত্তর। ওয়াপদার প্রবীণ কর্মচারী। ১৯৬৭ সালে চাকরি শুরু করে অবসরে গেছেন ২০০৪ সালে। দীর্ঘসময় ওয়াপদার ভেতরেই ছিল তার বাস। তারও বিশ্বাস নিশ্চয় এখানে কিছু আছে।

তিনি বলেন, ছেলেটা বল আনতে সাঁতরে পুকুরের মাঝখানে গেল। বলটা হাতে নিয়ে আর ফিরতে পারলো না! পানিতে তলিয়ে গেল সে চোখের সামনেই। এর আগেও আমাদের এক নাইটগার্ডকে পুকুরের পাড় থেকে টেনে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। আরো একটি ঘটনাও ঘটেছে।

নৈশপ্রহরী শামীম (৩৫) মারা যান সম্ভবত ১৯৯৮ সালের দিকে। রাত দেড়টার দিকে তাকে পাওয়া যায় পুকুরের উত্তর-পূর্ব কোণায়। নেতিয়ে পড়া ভেজা শরীর। লোকজন তাকে মুমূর্ষু অবস্থায় উদ্ধার করে। একদিন বাদেই মারা যান শামীম। তার মৃত্যুর পর স্ত্রী রফুজা বেগমকে ওয়াপদায় চাকরি দেয়া হয়।

রফুজা বলেন, আমারে অনেকদিনই বলতো তার (শামীম) সামনে এসে একটা মহিলা নাকি দাঁড়াইয়া থাকতো। তার বড় বড় দাঁত। বলতো- আমি বাঁচতাম না। তারে (শামীম) অনেকেই বলতো নামাজ পড়তে, মসজিদে যেতে। বলতো সব ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু লোকটা আর বাঁচলো না।

ওয়াপদার পুরান গেটের পাশের বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান। ১৯৮৫ সাল থেকে এই মহল্লায় রয়েছেন। বলেন মানুষের কাছ থেকে তো কতো কিছুই শুনি।

বিদ্যুতের ব্রাহ্মণবাড়িয়া বিতরণ বিভাগের কর্মচারী তাজুল ইসলাম বলেন, আমরা আগের লোকজনের কাছ থেকে শুনেছি বিল্ডিংয়ের (কর্মচারী কোয়াটার) ছাদে রাতে নাচ-গান হতো। তারা কারো ক্ষতি করে না। তবে নাচ-গানের এই শব্দ এখনো পান কোয়ার্টারের বাসিন্দারা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: