odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Sunday, 9th November 2025, ৯th November ২০২৫
অর্ধকোটি টাকায় বাড়ি বানাচ্ছেন ছেলে!

ওষুধ কেনার টাকা পাচ্ছে না মা,কাপ দেবে মায়ের অধিকার?

odhikar patra | প্রকাশিত: ১৮ July ২০১৯ ১৩:৫৪

odhikar patra
প্রকাশিত: ১৮ July ২০১৯ ১৩:৫৪

 

 

হাকিমুন বেগম। সত্তরের বেশি বয়স। ন্যুব্জ। লাঠিতে ভর দিয়ে কোনো রকমে হাঁটতে পারেন। অন্যের সহযোগিতা ছাড়া প্রায়-নিরুপায় পথচলা তাঁর। রোগ-শোকে জর্জরিত বৃদ্ধাকে দেখলে মনে হবে যেন শতবর্ষী। অসুস্থ অথচ সামান্য ওষুধ কেনার টাকা নেই তাঁর, তবে ছেলে আনন্দ উল্লাসে ঘুরে বেড়াচ্ছেন। প্রায় অর্ধকোটি টাকা ব্যয়ে নির্মাণ করছেন তিনতলা বিশিষ্ট অট্টালিকা।

বেতাগী উপজেলা হোসনাবাদ ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা মৃত আব্দুল হামিদ হাওলাদার এর সন্তান থাকা সত্ত্বেও এমন মানবেতর জীবন যাপন করছেন স্ত্রী সত্তর বছরের বৃদ্ধা হাকিমুন বেগম। আর্থিকভাবে স্বচ্ছল এক ছেলে ও স্বামীর রেখে যাওয়া বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি থাকা সত্ত্বেও স্বামীহারা এই বৃদ্ধার মাথা গোঁজার জায়গা নেই। রাতে ঘুমানোর জন্য বারন্দায় ঠাঁই হয়েছে। ছেলের অবহেলা আর ছেলের বউয়ের অমানবিক অত্যাচারের মুখে নিস্তব্ধ হাকিমুন। নিদারুণ কষ্ট আর মানবেতর যন্ত্রণায় বছরের পর বছর মানুষের দরজায় ঘুরে বেড়াচ্ছেন। আবার অনেক সময় বাবার বাড়ি গিয়ে ভাইয়ের ছেলেদের কাছে থাকেন। অসুস্থ হলে ওষুধটুকু কিনে দেন না ছেলে আবদুল মন্নান ওরফে রাঙ্গামিয়া।

মানুষের দুয়ার আর হাসপাতালের বারান্দা তাঁর ঠিকানা। বাড়িতে যেখানে রাত্রিযাপন সেখানে আছে ভাঙা একটি চৌকি, চট আর কিছু পানির বোতল। বিদ্যুৎ থাকা সত্ত্বেও নেই বৈদ্যুতিক পাখার ব্যবস্থা। অসহ্য গরম আর মশার কামড় বৃদ্ধার নিত্যসঙ্গী। কোনোরকমে রাত পার হলেই লাঠিতে ভর করে বারান্দার ছাপড়া থেকে বেরিয়ে পড়েন তিনি। কখনো রাস্তার পাশে নতুবা হাসপাতালের এসে বসে থাকেন। এমন কষ্টের দৃশ্য সন্তানের চোখে না পড়লেও গ্রামের মানুষ ঠিকই উপলব্ধি করতে পারেন। স্থানীয়দের সাহায্য-সহযোগিতায় খাবার আর ওষুধ জোটে।

জীবনের শেষ প্রান্তে এসে হাকিমুন বেগম বুকভরা কষ্টগুলো চিৎকার করে বলতে চাইলেও বয়সের ভারে আর অত্যাচারের ভয়ে বলতে পারেন না। কথা বললে শুধু ফ্যাল ফ্যাল করে চেয়ে থাকেন। অনেক কষ্টে কথা বলেন। গত সোমবার দুপুরে উপজেলার হোসনাবাদ ইউনিয়নের জলিশা বাজারে অবস্থিত স্বাস্থ্যকেন্দ্রে বসে কথা বললে জানা যায় এক নিষ্ঠুর কাহিনি। হাকিমুন বলেন, কারো কাছে এসব কথা বললেই ছেলে মারে। দুপুরে পচা তরকারি দিয়ে ভাত দেয়, আরো বলেন, একবেলা খাবার দেয় তাও যদি পচা তরকারি দিয়ে দেয় তবে বাঁচব কি খেয়ে তাই ভয়ে বলিও না কারো কাছে। অসুস্থ হলে কোনো দিন এক পয়সার ওষুধও কিনে দেন না ছেলে রাঙ্গামিয়া। বিছানায় পোকা পড়ে গেছে, আবর্জনায় ভরা থাকার ঘরে। আর তাদের বিছানা কেমন সুন্দর করে সাজানো গুছানো।

তিনি আরো বলেন, ‘মোর পোয়া (ছেলে) রাঙ্গামিয়া আর পুতের বউ আমার কলিজাডা শ্যাষ কইরা দ্যাছে, মোন চাইলে যে কিছু খামু পারি না আলমিরায় তালা দিয়া রাখে।’
জানা গেছে, বৃদ্ধা হাকিমুন বেগম এর স্বামী মারা যাবার পর থেকে সন্তানের অনাদরে অন্যের দুয়ারে দুয়ারে ঘুরে বেড়াতেন। এমন অনেক বছর অতিক্রমের পরে মানুষের কথার প্রেক্ষিতে একসময়ে ছেলে রাঙ্গামিয়ার মায়ের প্রতি দয়া হয়। আর তাই মায়ের জন্য ঘরের পাশের আবর্জনাযুক্ত বারান্দায় ভাঙা একটি চৌকি ও চট বিছিয়ে থাকার ব্যবস্থা করে দেন।

নাম না প্রকাশের শর্তে এক প্রতিবেশী চাকরিজীবী বলেন, আমরা গ্রামবাসী সাধ্যমতো বৃদ্ধাকে সাহায্য-সহযোগিতা করি। তার ছেলে রাঙ্গামিয়া এখন প্রায় কোটি টাকার মালিক। ৫০ লাখ টাকা ব্যয়ে নির্মাণ কাজ শুরু করেছেন বাড়ির। (এত টাকার উৎস জানতে চাইলে গোপনসূত্রে জানা যায়, সাধারণ মানুষদের কাছে চড়া মুনাফায় সুদের টাকার ব্যবসা করেন রাঙ্গামিয়া।) আরো বলেন, তিনি যাই করুক না কেন মায়ের সাথে এমনটা করা অমানবিক এবং গুরুতর অন্যায়। সন্তান যেহেতু মাকে ঠাঁই দিতে পারছেন না, তাই বৃদ্ধাকে বৃদ্ধাশ্রমে রাখার ব্যবস্থা করতে সমাজের বৃত্তবানসহ সংশ্লিষ্ট সহায়তা চান তিনি।

হাকিমুন বেগম এর ছেলে রাঙ্গামিয়ার সঙ্গে কথা বলতে গেলে তার বাড়ি থেকে সটকে পড়েন। ফোনালাপে যোগাযোগ করতে চাইলে বার বার ফোন কেটে দেন এবং সংযোগ বিচ্ছিন্ন করেন।
এমন অমানবিক ব্যাপারে সংশ্লিষ্ট ইউপি সদস্য মো. মনিরুজ্জামান জামাল বলেন, আমি বৃদ্ধাকে বহুবার একাধিক লোকের সামনে আমার বাড়িতে নিয়ে আসতে চেয়েছি, কিন্তু ছেলে রাঙ্গামিয়ার ভয়ে সে আসেনি। তবে আমি সাধ্যমতো তাকে ওষুধ ও খাবার দিয়ে সহযোগিতার চেষ্টা করেছি।

এ ব্যাপারে বেতাগী উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান মাকসুদুর রহমান বলেন, মা-বাবার প্রতি শ্রদ্ধার ব্যাপারে এরই মধ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী সন্তানদের আইনের আওতায় নিয়ে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। আমি ব্যক্তিগতভাবে ওই বৃদ্ধাকে প্রায় ওষুধ কেনার টাকা দিয়ে সহযোগিতা করেছি। তার সন্তান থাকার পরও এভাবে বসবাস খুবই দুঃখজনক।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: