ঢাকা | শনিবার, ১৮ মে ২০২৪, ৪ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

অটিস্টিক শিশু ও খাবার

odhikar patra | প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:২৯

odhikar patra
প্রকাশিত: ১৪ নভেম্বর ২০১৯ ১৫:২৯

বাবা-মায়ের অনেক স্বপ্ন থাকে, তারা তাদের সন্তানকে সুন্দরভাবে মানুষ করে বড় করবে। তাদেরকে ভবিষ্যতে একটি ভালো অবস্থানে দেখতে সব বাবা-মাই চান। কিন্তু যখন একটি সন্তান একটু ভিন্নভাবে ব্যতিক্রম একটি বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্ম নেয়, তখন স্বাভাবিকভাবেই সেই বাবা-মায়েরা একটু বেশি চিন্তিত হয়ে পড়েন। তারা শুরুতে বুঝে উঠতে পারেন না যে, তাদের সন্তানকে কীভাবে স্বাভাবিক জীবনে নিয়ে আসবেন।

এখন আমাদের সমাজের চারপাশে একটু খেয়াল করলেই চোখে পড়বে, এমন নানা সমস্যায় জড়িত কিছু কিছু পরিবার। তারা তাদের সন্তানকে নিয়ে কোথায় যাবেন, কী করবেন বুঝে উঠতে পারেন না। তারা খুবই মানসিক কষ্টে থাকেন। হ্যাঁ, আমি তাদের কথাই বলছি, যারা অটিজম শিশুদের বাবা-মা। আমাদের সমাজে এখন এ ধরনের শিশু খুব সহজেই চোখে পড়ে। তাদের প্রত্যেকের ধরন এক নয়। একেকজন একেক বৈশিষ্ট্য নিয়ে জন্মগ্রহণ করে। যেমন কারও স্পিচ ডিলে, কারও মনোযোগ কম, কেউ অনেক বেশি অস্থির, কেউবা অন্যান্য সমস্যা নিয়ে জন্ম নেয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে দেখা যায়, এরা খুব বেশি অস্থির থাকে অন্যান্য শিশুর তুলনায়। এসব শিশুর একটি জিনিস খুবই গুরুত্বপূর্ণ- এদের খাবার। এসব শিশুর রক্তে এক ধরনের অ্যালার্জি থাকে, যেটাকে ইংরেজিতে বলা হয় 'Food intolerance', যা তাদের উন্নতিতে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। এ ছাড়াও এসব শিশুর কিছু ভিটামিন মিনারেলসের ঘাটতি থাকে। খাবারের মধ্যে বিদ্যমান কিছু উপাদান আছে, যেগুলোতে অ্যালার্জি থাকে। খাবারগুলো হলো- গল্গুটেন, কেজিন, সয়। এসব উপাদানে বেশিরভাগ শিশুর ইনটলারেন্স থাকে। যেসব শিশুর খাবারে ইনটলারেন্স থাকবে, সেগুলো তাদের জন্য নিষিদ্ধ করা হয়। যদি এই খাবারগুলো বাবা-মায়েরা মেনে চলেন, তাহলে এদের উন্নতি হবে। 

শুধু যে নিষিদ্ধ খাবার তা নয়। এদের যেহেতু ভিটামিন, মিনারেলসের ঘাটতি থাকে, সেহেতু এদের ভিটামিন জাতীয় খাবার বেশি পরিমাণে খাওয়াতে হবে। এ ছাড়াও Dr Bernard Rimland of the Institute for Child Behaviour Research in San Diego, California, , তিনি প্রমাণ করেন, ভিটামিন বি৬, সি, ম্যাগনেশিয়াম সাপিল্গমেন্ট অটিজম শিশুদের লক্ষণের উন্নতি করে। এই শিশুদের এনজাইমেটিক ডিফেক্ট থাকে, যা Omega-3 fat ঠিক করতে পারে। আর সামুদ্রিক মাছে এই উপাদান পাওয়া যায়। তাই এগুলো প্রচুর পরিমাণে খেতে হবে। এমনকি এই ফ্যাট তাদের আচরণ, মানসিক অবস্থা, মনোযোগ, দ্রুত কথা বলা সবকিছুরই উন্নতি করে।

এ ছাড়াও এই শিশুদের রক্তে অস্বাভাবিক গল্গুকোজ অক্ষমতা থাকে, যার কারণে হাইপার একটিভিটি বৃদ্ধি পায়। তাই এই শিশুদের অস্থিরতা কমানোর জন্য সবার আগে কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার কম খেতে হবে। এ ছাড়াও এদের বেশি পরিমাণে ফল খেতে হবে; যেমন- কলা এদের জন্য ভালো। কারণ কলাতে আছে পটাশিয়াম, যা এদের মনোযোগ বৃদ্ধিতে সাহায্য করে। এ ছাড়াও ডাবের পানি এবং অন্যান্য ভিটামিন সি জাতীয় ফল খাওয়াতে হবে।

বাদাম এদের জন্য খুবই উপকারী। তেলের ক্ষেত্রেও একটু সাবধানতা অবলম্বন করতে হবে; যেমন- সয়াবিন তেল এদের জন্য ক্ষতিকর। এ জন্য এদের খাবার, অলিভ অয়েল, রাইস ব্রান অয়েল, সানফ্লাওয়ার অয়েল, সরিষার তেল প্রভৃতি তেল দিয়ে রান্না করতে হবে। তাহলে এদের অবস্থার উন্নতি হবে; যেমন- দ্রুত কথা বলা, মনোযোগ বৃদ্ধি পাওয়া, আচরণগত সমস্যা দূর হওয়া প্রভৃতি। এ ছাড়াও এসব শিশুর সমস্যার ভিন্নতার কারণে এদের ডায়েট পল্গ্যানও ভিন্ন হয়। তাই এদের খাবার সম্পর্কে বিশদভাবে জানার জন্য একজন অটিজম পুষ্টিবিদের কাছে পরামর্শ নেওয়া ভালো।

পুষ্টিবিদ, ল্যাব এইড হাসপাতাল পলল্গবী শাখা (সংগৃহীত)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: