odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 24th October 2025, ২৪th October ২০২৫

গর্ভকালীন সময়ে নিয়ম মেনে ব্যায়ামে স্বাভাবিক প্রসব ত্বরান্বিত হয়

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৮ August ২০২২ ১৬:১৩

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৮ August ২০২২ ১৬:১৩

  সাড়ে চার মাসের অন্ত:সত্ত্বা রাহেলা খাতুন। বিয়ের পর কিছুদিন চাকরী করলেও অন্ত:সত্ত্বা হওয়ার পর থেকে সেই চাকরী ছেড়ে দিতে হয়েছে শাশুড়ীর নির্দেশে। শ্বাশুড়ীর একটাই কথা-তাদের বংশের প্রথম সন্তান আসছে। আর তাই এখন থেকে সম্পূর্ণ বিশ্রামে থাকে হবে রাহেলাকে। প্রথম প্রথম কয়েকদিন ভালো লাগলেও এখন কেমন জানি এক ঘেমেয়ি লাগছে তার। সারাক্ষণ শুয়ে-বসে থাকা অনেক কষ্টের। শরীরটাও কেমন জানি মুটিয়ে যাচ্ছে। আবার হাত-পাগুলো কেমন জানি অবশ অবশ লাগে।

একদিন হঠাৎ করেই ফোন করেন এক ডাক্তার বান্ধবীকে। বান্ধবী সব শুনে কিছু পরামর্শ দিলেন। বললেন গর্ভকালীন কিছু ব্যায়ামের কথা। জানালেন এসব ব্যায়ামে বিভিন্ন উপকারিতার কথাও। সব শুনে রাহেলা ঠিক করলেন শ্বাশুড়ীকে জানাবেন সব কথা। প্রয়োজনে নিয়ে যাবেন তার ওই ডাক্তার বান্ধবীর কাছে।
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালের গাইনোলজী বিভাগের প্রাক্তন বিভাগীয় প্রধান ডা. রোকেয়া বেগম বলেন, আগে আমাদের মধ্যে মায়েদের গর্ভকালীন সময় নিয়ে বিভিন্ন ধরনের ধারনা ছিল। আমরা ভাবতাম এসময় মায়েদের তেমন হাঁটা-চলা বারন। কিন্তু দিন যত পাল্টাচ্ছে ততই বিজ্ঞান নতুন নতুন তথ্য আমাদের দিচ্ছে।
তিনি বলেন, এখন অন্ত:সত্তা নারীদের বিভিন্ন ধরনের ব্যায়ামের পরামর্শ দেয়া হচ্ছে। নিয়মিত ব্যায়ামের ফলে হৃদযন্ত্রের কার্যকারিতা বাড়ে। গর্ভকালীন উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। এছাড়াও পেশিশক্তি বৃদ্ধি পায় এবং অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যাওয়া থেকে রেহাই পাওয়া যায়। পায়ে রগ টানা, কোমর ব্যথা, পা ফোলার মতো সমস্যা কম দেখা দেয়।
তিনি বলেন, গর্ভকালীন কোষ্ঠকাঠিন্য একটা খুব পরিচিত সমস্যা। নিয়মিত ব্যায়ামে এই সমস্যা দূর করা সম্ভব। যারা স্বাভাবিক প্রসব বা নরমাল ডেলিভারি আশা করছেন, তাদের জন্য ব্যায়ামের বিকল্প নেই। এতে শক্তি বাড়ে, মানসিক চাপও কমে। সব মিলিয়ে স্বাভাবিক প্রসব ত্বরান্বিত হয়। তবে একজন বিশেষজ্ঞের অধীনে ব্যায়াম করা ভালো।
ডা. রোকেয়া বলেন, গর্ভকালীন সময়ে নারীরা বিভিন্ন ধরনের ব্যায়াম করতে পারেন যেমন- সাঁতার, হাঁটাহাটি, স্টেশনারি সাইক্লিং, ইয়োগা ইত্যাদি। তবে এসব ব্যায়াম শুরু করার আগে অবশ্যই একজন নারীকে স্বাস্থ্য পরীক্ষা করিয়ের নিতে হবে এবং একজন গাইনী বিশেষজ্ঞের কাছ থেকে .পরামর্শ নিতে হবে যে তিনি এসব ব্যায়াম করতে পারবেন কিনা।
আরেক গাইনী বিশেষজ্ঞ ডা. মনোয়ারা হক বলেন, বিশ্বে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন বিষয় নিয়ে গবেষনা হচ্ছে। পুরনো অনেক ধারনাই এখন আর চলে না। কিন্তু আমরা এখনো সেই পুরনো ধ্যান-ধারনা নিয়েই চলছি। অন্যান্য উন্নয়নশীল দেশের মত আমাদের দেশেও গর্ভকালীন সময়ে মায়েদের নিয়ে বেশ কিছু ভুল ধারনা আমরা এখনো পোষণ করি। কেউ কেউ গর্ভকালীন সময়ে নারীদের অল্প অল্প খাবার খেতে দেন। এ বিষয়ে তাদের যুক্তি হল বেশী বেশী খাবার খেলে পেটের বাচ্চা বড় হয়ে যাবে এবং নরমাল ডেলিভারী হবে না।
এছাড়া অনেকে এসময় নারীদের কোন ধরনের কাজ করতে দেন না। একেবারে বিছানোয় শুইয়ে রাখতে চান। এটাও নারীদের জন্য ক্ষতি। কিছু কিছু নারীদের ক্ষেত্রে কমপ্লিট রেস্টে থাকতে হলেও অধিকাংশ ক্ষেত্রে নারীরা স্বাভাবিক কাজ চালিয়ে যেতে পারেন। এতে বাচ্চার কোন ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা থাকে না। এসময় নারীরা কিছু কিছু হাল্কা ব্যায়ামও করতে পারেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের কাছ থেকে পরামর্শ নিয়ে।
তিনি বলেন, এসব ব্যায়ামের ফলে নারীদের কর্মক্ষমতা আরো বৃদ্ধি পায়। বিশেষ করে হৃদযন্ত্রেও ক্রিয়া স্বাভাবিক থাকে এবং গর্ভকালীন সময়ে উচ্চ রক্তচাপ এবং ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কম থাকে। কারন গর্ভকালীন সময়ে নারীরা এসব ঝুঁকিতে বেশী থাকে। এসব ঝুঁকির কারনে অনেক সময় নারীদের মৃত্যু পর্যন্ত হয়।
আর তাই বিশেষজ্ঞ ডাক্তারের পরামর্শ অনুযায়ী গর্ভকালীন সময়ে ব্যায়াম করার পরামর্শ দেন ডা. মনোয়ারা।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: