— অধিকারপত্র ধারাবাহিক সম্পাদকীয় বিশেষ কলাম (প্রথম পর্ব) |
বঙ্কিম ও নজরুলের সাহিত্যিক দৃষ্টিতে আজকের ডিজিটাল বাংলাদেশে পথ হারানো, রাজনীতি, মধ্যবিত্ত সংকট, ট্রাফিক জ্যাম ও ভাইরাল বিপ্লবের বিশ্লেষণ। এই লেখায় আমরা বঙ্কিমের রোমান্টিক দিকভ্রান্তি আর নজরুলের বিপ্লবী পথচলার মাঝখানে দাঁড়িয়ে আজকের বাংলাদেশের পথ হারানোকে একটু ঝালাই করে দেখব। বনপথ বদলে গেছে, এসেছে ফ্লাইওভার আর হাইওয়ে। কিন্তু প্রশ্নটা এখনো রয়ে গেছে—আমরা কি সত্যিই পথ হারিয়েছি?
প্রস্তাবনা: বনপথ থেকে হাইওয়ে—হারিয়ে যাওয়ার চিরন্তন কাব্য
বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়ের ঝাউবনের কথা বাঙালি ভুলতে পারে না। সমুদ্রের গর্জন, নোনা বাতাসের দীর্ঘশ্বাস, আর তার মাঝখানে হঠাৎ এক নারীকণ্ঠ—“পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছো?” এই একটি প্রশ্ন দেড় শতাব্দী ধরে বাঙালির কানে শুধু নয়, মনোজগতে গেঁথে আছে। নবকুমার সেদিন পথ হারিয়েছিলেন—ভৌগোলিক অর্থে, মানসিক অর্থে, আর জীবনের দিক থেকেও। সেই হারিয়ে যাওয়াই ছিল বঙ্কিমের কাছে রোমান্টিক, নিয়তির ইঙ্গিত, এক নতুন জীবনের দ্বার।
আজ এত বছর পর, ২০২৪–২৫ সালের বাংলাদেশে দাঁড়িয়ে যদি কেউ এই প্রশ্ন করে, ধরে নিতে হবে সেটা আর উপন্যাসের দৃশ্য নয়। সেটা হয়তো কোনো সিএনজি চালকের বিরক্ত স্বর, কোনো রাইড শেয়ার চালকের কাঁচুমাচু হাসি, কিংবা কোনো ভ্লগারের ক্যামেরাবন্দি ‘রিয়্যাকশন মুহূর্ত’। পথ হারানো আজ আর একক কোনো মানুষের গল্প নয়; এটি হয়ে উঠেছে একটি জাতীয় অভ্যাস, কখনো ট্র্যাজেডি, কখনো রম্য, আবার কখনো ভয়ংকর বাস্তবতা।
বাঙালি পথ হারিয়ে তালগোল: ব্যক্তিগত থেকে সামষ্টিক বিভ্রান্তি
বঙ্কিমচন্দ্রের সাহিত্যজগতে পথ হারানো ছিল ব্যক্তিগত। একজন মানুষ, একটি বন, একটি মুহূর্ত। সেই বিভ্রান্তি ছিল সৌন্দর্যময়, প্রায় আশীর্বাদের মতো। কিন্তু সময় বদলেছে। আজকের বাংলাদেশে পথ হারানো আর ব্যক্তিগত নয়; এটি কাঠামোগত, সামষ্টিক, প্রায় প্রাতিষ্ঠানিক।
শিক্ষা ব্যবস্থা দিশেহারা, স্বাস্থ্য খাত দিশা খুঁজে পায় না, বিচার ব্যবস্থায় বিলম্ব যেন স্বাভাবিক নিয়ম, আর কর্মসংস্থান এক অনিশ্চিত গোলকধাঁধা। আমরা আর প্রকৃতির বনে পথ হারাই না, হারাই দুর্নীতি, অব্যবস্থাপনা আর নীতিহীনতার কংক্রিট অরণ্যে।
এই বাস্তবতার বিপরীতে নজরুল ইসলাম দাঁড় করান শক্তি ও প্রতিরোধের ভাষা। তাঁর লেখায় ‘কাপালিক’ শুধু কোনো চরিত্র নয়, সে ক্ষমতার প্রতীক—যে সাধারণ মানুষের ওপর দাঁড়িয়ে নিজের উৎসব চালায়। তাঁর ‘অগ্নিরথ’ উন্নয়নের প্রতিশ্রুতি, যা ওপর দিয়ে গড়িয়ে যায়, কিন্তু নিচের মানুষের জীবনে খুব কমই আলো ফেলে। ফলে বঙ্কিমের নবকুমারের মতো সাধারণ মানুষ আজও অসহায়—রোমান্টিক উদ্ধার নেই, আছে কেবল টিকে থাকার লড়াই।
[Enjoy the 🎬 প্রোমো - অধিকারপত্র সম্পাদকীয় সিরিজ — পথিক, তুমি কি আসলেই পথ হারাইয়াছো?| বাংলা সাহিত্য × ডিজিটাল বাস্তবতা ]
নবকুমারের বিভ্রান্তি বনাম গুগল ম্যাপের গোলকধাঁধা
নবকুমার যখন পথ হারিয়েছিলেন, তাঁর সামনে ছিল নির্জন বন আর সমুদ্র। ভয় ছিল বাঘের, অনিশ্চয়তার। আজকের নবকুমাররা পথ হারায় গুগল ম্যাপে। বনানীর সিগন্যাল, পুরান ঢাকার গলি, কিংবা হাতিরঝিলের মোড়—সবখানেই ‘Head East’ লেখা দেখে আমরা উত্তর না দক্ষিণ বুঝে উঠতে পারি না।
ভাবুন তো, কপালকুণ্ডলার হাতে যদি একটি স্মার্টফোন থাকত! তিনি হয়তো প্রশ্ন করতেন না, “পথিক, তুমি পথ হারাইয়াছো?” বরং বলতেন, “লোকেশন পাঠাও, উবার ডেকে দিচ্ছি।” বঙ্কিমের কাছে পথ হারানো ছিল জীবনের মোড় পরিবর্তন। আমাদের কাছে পথ হারানো মানে বাড়তি ভাড়া, দেরি, আর বিরক্তি।
নজরুলের কাছে আবার পথ হারানো ছিল সচেতন সিদ্ধান্ত। তিনি বলেছিলেন, “আমরা পথ হারাই নাই, ঘরের পথ হারাইয়াছি, বনের পথ হারাই নাই।” আজ এই কথার মর্ম আমরা নতুন করে বুঝি। আমরা হয়তো স্বস্তির পথ হারিয়েছি, কিন্তু অনিশ্চিত গোলকধাঁধায় চলতে শিখে গেছি।
উল্টো রথে চড়ে গন্তব্যের খোঁজে
আজকের বাংলাদেশে “উল্টো রথ” আর রূপক নয়, নিত্যদিনের দৃশ্য। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুমে যাঁরা বছরের পর বছর গবেষণা করেন, তাঁদের সিদ্ধান্তের কোনো মূল্য নেই; অথচ ফাইলের ওপর কলম চালানো এক আমলা সেই গবেষণার ভাগ্য নির্ধারণ করেন। একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপক নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি হয়, কিন্তু শেষ পর্যন্ত নিয়োগ পান সেই ব্যক্তি, যিনি সবচেয়ে ভালো গবেষণা করেননি, বরং সবচেয়ে ভালো যোগাযোগ রেখেছেন। এখানে মেধা পেছনের সারিতে, ক্ষমতা সামনে—রথটা তাই উল্টো দিকেই গড়ায়।
আরও মজার ব্যাপার হলো, এই উল্টো রথের যাত্রীরা সবাই গন্তব্যে পৌঁছানোর দাবি করেন। কেউ বলেন “উন্নয়ন হচ্ছে”, কেউ বলেন “সংস্কার চলছে”, কিন্তু সাধারণ মানুষ দেখে—রাস্তা কেবল ঘুরছে, এগোচ্ছে না। যেন আমরা গোলচক্করে উঠেছি; গাড়ি চলছে, তেল খরচ হচ্ছে, কিন্তু গন্তব্য বদলাচ্ছে না।
মনে হয়, আমরা যেন ঢুকে পড়েছি নচিকেতার সেই উল্টো রাজার দেশে। যুক্তি চলে উল্টো পথে, ক্ষমতা থাকে পেছনের সারিতে। এই উলটপুরাণের মাঝেই বাঙালির পথ হারানো রোমান্টিক থেকে বিদ্রোহী হয়ে আজ রম্য-ট্র্যাজিক বাস্তবতায় এসে দাঁড়িয়েছে।
নজরুলের 'দুর্দিনের যাত্রী': বিপ্লব যখন ভাইরালে
কাজী নজরুল ইসলাম তাঁর 'দুর্দিনের যাত্রী' প্রবন্ধে এই একই বাক্যকে টেনে নিয়ে গিয়েছেন এক অন্য উচ্চতায়। তাঁর কাছে পথ হারানো মানে মোহগ্রস্ত হওয়া নয়, বরং প্রথাগত নিরাপদ পথ ছেড়ে বিপ্লবের কঠিন পথে পা বাড়ানো। নজরুল যখন হুঙ্কার দিয়ে বলেন, "আমরা পথ হারাই নাই, ঘরের পথ হারাইয়াছি, বনের পথ হারাই নাই", তখন মনে হয় তিনি যেন আজকের ফ্রিল্যান্সার বা স্টার্টআপ উদ্যোক্তাদের কথা বলছেন। যারা নয়টা-পাঁচটার 'ঘরের পথ' বা চেনা ছক হারিয়ে অনিশ্চিত কিন্তু রোমাঞ্চকর 'বনের পথে' হাঁটছে।
নজরুলের সেই 'ভৈরবী' মেয়েটি, যার চোখে অসংকোচ দৃষ্টি আর হাতে অভয় তরবারি—সে আজ যেন আমাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সে রোজ সকালে নোটিফিকেশনের মাধ্যমে আমাদের জিজ্ঞেস করে, "পথিক, আজ কোন ইস্যুতে পথ হারাইয়াছো? আজ কি লবণের দাম বাড়ল নাকি খেলা হেরে বাংলাদেশ দল পথ হারাল?" নজরুলের তরুণরা রক্ত-আঁকা পথে চলতে চেয়েছিল শিব জাগাতে। আজকের তরুণরা কি-বোর্ডের ঝনঝনানি দিয়ে সমাজ জাগাতে চায়। তবে ট্র্যাজেডি হলো, নজরুলের তরুণরা জানত তারা কোন মন্দিরে যাচ্ছে। আমাদের ডিজিটাল পথিকের দল ফেসবুক স্ক্রল করতে করতে এমন এক গোলকধাঁধায় ঢুকে পড়ে যে, আধঘণ্টা পর তারা ভুলেই যায় কেন তারা ফোনটা হাতে নিয়েছিল!
[শৈুনুন 🎵 পথিক, তুমি কি আসলেই পথ হারাইয়াছো? | Lok-Rock Satire Song | Lyric Video | অধিকারপত্র সম্পাদকীয় সিরিজ Video]
ট্রাফিক জ্যাম: যেখানে সময় ও পথ সমার্থক
আজকের বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে 'পথ হারানো'র সবচেয়ে বড় গ্যালারি হলো আমাদের ট্রাফিক জ্যাম। মহাখালী ফ্লাইওভারের ওপর যখন একটা বাস তিন ঘণ্টা দাঁড়িয়ে থাকে, তখন বাসের জানলার পাশে বসা যাত্রীর মনে বঙ্কিমী চেতনা উঁকি দেয়। সে পাশের ট্রাক চালককে দেখে মনে মনে বলতে চায়— "পথিক, তুমি কি পথ হারাইয়াছো, নাকি ইঞ্জিন বিকল হইয়াছে?"
নজরুল লিখেছিলেন, "সিংহ-শার্দূল-শঙ্কিত কণ্টক-কুণ্ঠিত বিপথে আমাদের চলা।" আমাদের বাসে চড়া মানেই তো সিংহ-শার্দূল নয়, বরং লেগুনা আর লোকাল বাসের কসরত সয়ে এগিয়ে চলা। বনানীর সিগন্যালে যখন আপনি আটকে থাকেন, তখন আপনার চারপাশের জগতটা নজরুলের সেই কাপালিকের রক্ত-পূজার মন্দিরের মতোই হিংস্র মনে হতে পারে। চারপাশে হর্নের শব্দ যেন সেই "তাতা থৈথৈ" তান্ডব নৃত্য। আর সিগন্যাল যখন ছাড়ে, তখন মনে হয় যেন "মন্দির দ্বার খুলে গেল", কিন্তু আদতে আমরা এক জ্যাম থেকে আরেক জ্যামের দিকেই ধাবিত হই।
ফেসবুকের কাপালিক ও ভাইরাসের তিলক
নজরুলের প্রবন্ধে এক 'ভৈরবী' মেয়ে ছিল, যার চোখে ছিল অসংকোচ দৃষ্টি আর হাতে অভয় তরবারি। আজকের বাংলাদেশে সেই ভৈরবী যেন আমাদের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম। সে রোজ সকালে টাইমলাইনে আমাদের জিজ্ঞেস করে, "পথিক, আজ কোন ইস্যুতে পথ হারাইয়াছো?"
কাজী নজরুল ইসলামের সেই কাপালিকের রক্ত-তিলক এখন পরিবর্তিত হয়ে রূপ নিয়েছে 'ভাইরাল' ট্রেন্ডে। নজরুলের তরুণরা রক্ত-আঁকা পথে চলে শিব জাগাতে চেয়েছিল। আর আজকের তরুণরা? তারা কি-বোর্ডের ঝনঝনানি দিয়ে ঘুমন্ত সমাজকে জাগাতে চায়। তবে সমস্যা হলো, নজরুলের সেই তরুণরা জানত তারা কোথায় যাচ্ছে। কিন্তু আমাদের ডিজিটাল পথিকেরা রিলস আর শর্টসের এমন এক গোলকধাঁধায় ঢুকেছে যে, 'সুইপ' করতে করতে তারা ভুলেই গেছে আদি গন্তব্য আসলে কোথায়!
রাজনীতির গোলকধাঁধা ও পথিকের বিভ্রম
আমাদের রাজনীতির অঙ্গনেও এই 'পথ হারানো'র খেলা বেশ জমজমাট। একেকজন রাজনৈতিক নেতা যখন দল বদল করেন, তখন জনতা বঙ্কিমী ঢঙে প্রশ্ন করে— "নেতা, আপনি কি আপনার আদর্শের পথ হারাইয়াছেন?" তখন উত্তর আসে নজরুলের স্টাইলে— "আমি পথ হারাই নাই, আমি নতুন পথে শিব জাগাতে যাচ্ছি!"
জনসাধারণ এখানে সেই বোকা নবকুমারের মতো, যাদেরকে সহযাত্রীরা (নেতারা) নদীর ধারে ফেলে চলে যায়, আর তারা একা একা বনের মধ্যে (নির্বাচনী ইশতেহারের গোলকধাঁধায়) ঘুরতে থাকে। কাপালিকের খড়্গের মতো এখানে আছে টকশোর বাচনভঙ্গি। কাপালিক যেমন বলি দেওয়ার আগে রক্ত-তিলক পরাত, আমাদের বুদ্ধিজীবীরাও সাধারণ মানুষকে নানা তত্ত্বে ভিজিয়ে ভোটের বলি দিতে মন্দিরে নিয়ে যান। আর শেষমেশ সাধারণ মানুষ আকাশ পানে তাকিয়ে দেখে— অগ্নিরথ নয়, বরং বিলাসবহুল পাজেরো গাড়ি ঊর্ধ্বে (ফ্লাইওভারে) চলে যাচ্ছে, আর তারা নিচে ধুলোবালি মেখে দাঁড়িয়ে আছে।
মধ্যবিত্তীয় তাতা থৈথৈ
বাজার করতে গিয়ে সাধারণ মানুষ যখন চাল, ডাল আর তেলের দাম দেখে দিশেহারা হয়ে যায়, তখন তাদের কাছে 'পথ হারানো'র মানেটা অন্যরকম। পকেটের টাকা আর বাজারের তালিকার মধ্যে কোনো মিল খুঁজে না পেয়ে যখন তারা ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে থাকে, তখন মনে হয় বাজারের ব্যাগটাই যেন সেই নির্জন জঙ্গল। সেখানে আলু আর পেঁয়াজ যেন বাঘ আর ভাল্লুক হয়ে সাধারণ মানুষকে তাড়া করে বেড়াচ্ছে।
আজকের বাজারে পেঁয়াজের দাম যখন সেঞ্চুরি হাঁকায়, কিংবা পাবলিক বাসে পকেটমার যখন সুকৌশলে মানিব্যাগটি সরিয়ে নেয়, তখন সাধারণ মানুষের মনে হয়— আমরা কি আসলেই সঠিক পথে আছি? নজরুল লিখেছিলেন, "সিংহ-শার্দূল-শঙ্কিত কণ্টক-কুণ্ঠিত বিপথে আমাদের চলা।" আমাদের বর্তমান জনজীবনের বাস জার্নি বা দ্রব্যমূল্যের বাজারের চেয়ে বড় কণ্টকাকীর্ণ বিপথ আর কী-ই বা হতে পারে!
বঙ্কিমের কপালকুণ্ডলা নবকুমারকে পথ দেখিয়েছিল। আর আজ আমাদের পথ দেখায় টকশোর মহাজ্ঞানীরা। তারা প্রতিদিন স্টুডিওর চার দেয়ালের মাঝে বসে চিৎকার করে আমাদের বোঝান আমরা পথ হারাইনি। অথচ আমজনতা সিগন্যালে দাঁড়িয়ে পকেটে হাত দিয়ে দেখে—পথ তো দূরস্থান, পকেটের কড়িও হারিয়েছে!
নজরুলের সেই "রক্ত-ভুখারিনির তৃষ্ণাবিহ্বল জিহ্বা" আজ যেন বাজারের সিন্ডিকেট। তারা সাধারণ মানুষের কষ্টের রোজগার টপটপ করে গিলে ফেলছে। আর মধ্যবিত্ত পথিক তখন মনে মনে বঙ্কিমকে গালি দেয়— "পথ হারানো যদি এতই রোমান্টিক হতো, তবে বাজারের তালিকায় পথ হারিয়ে দেখুন তো কত ধানে কত চাল!"
শেষ কথা: পথ হারানোই কি তবে গন্তব্য নাকি আমাদের নিয়তি?
বঙ্কিম আর নজরুল—দুইজন দুই মেরুর লেখক হলেও বাঙালির পথ হারানোর সংকটকে তারা চিরন্তন করে গেছেন। একজন শিখিয়েছেন সৌন্দর্যের মোহে পথ হারালে নতুন জীবনের শুরু হয়, অন্যজন শিখিয়েছেন সত্যের সন্ধানে পথ হারানোই হলো প্রকৃত বীরত্ব।
আজকের বাংলাদেশে আমরা হয়তো সত্যিই পথ হারিয়েছি। আমরা হারিয়েছি নদী, হারিয়েছি শুদ্ধ বাতাস, আর হারিয়েছি ধৈর্য। কিন্তু মজার ব্যাপার হলো, আমরা এই পথ হারানোটাকেও এখন উপভোগ করি। আমরা জ্যামে বসে রিলস দেখি, ম্যাপ ভুল পথ দেখালে হাহা রিঅ্যাক্ট দিই, আর রাজনীতিতে গোলকধাঁধা দেখলে চায়ের কাপে ঝড় তুলি।
বঙ্কিম দেখিয়েছেন, সৌন্দর্যের মোহে পথ হারানো নতুন জীবনের শুরু। নজরুল শিখিয়েছেন, সত্যের পথে পথ হারানোই বীরত্ব। আজ আমরা হয়তো পথ হারিয়েছি, কিন্তু হাসতে শিখেছি। জ্যামে বসে রিলস দেখি, ম্যাপ ভুল হলে হাহা দিই। তাই হয়তো বলা যায়—আমরা পথ হারাইনি। আমরা শুধু ডাইভারশনে আছি। স্মার্টফোনের চার্জ কম, কিন্তু রসবোধ এখনো বাকি। হে বাংলার পথিক, পকেটে চার্জার রাখুন, মনে রাখুন একটু হাসি। কারণ এই দেশে পথ না হারিয়ে গন্তব্যে পৌঁছানো কৃতিত্ব নয়; পথ হারিয়েও যারা রম্য করে হাঁটতে পারে, তারাই সত্যিকারের দুর্দিনের যাত্রী।
আগামীর ইঙ্গিত
এই পথ হারানোর দৃশ্য মিলিয়ে আজকের বাংলাদেশ এক বিশাল আখ্যান—যেখানে রথ উল্টো চলে, মধ্যবিত্ত নাচে তাতা থৈথৈ, রাজনীতি ঘোরে গোলকধাঁধায়, ফেসবুক বলি নেয় মনোযোগে, জ্যামে সময় থেমে যায়, আর বিপ্লব ভাইরাল হয়ে মিলিয়ে যায়। এই বাস্তবতাই আমাদের আজকের “পথ হারানো”। প্রশ্নটা তাই এখন আর শুধু সাহিত্যিক নয়—এটা নিত্যদিনের জীবনের আয়না। আগামী পর্বে পড়ড়ুন 'পথিক, তুমি কি আসলেই পথ হারাইয়াছো?' : শিক্ষা ব্যবস্থার কারিকুলাম ও জিপিএ-৫ এর গোলকধাঁধায় পথ হারানো শিক্ষা: বঙ্কিম ও নজরুলের সাথে াধিকারপত্র উপদেষ্টা সম্পাদকের একটি কাল্পনিক আলোচনা
একনজরে পর্ব সমূহ

👉 পরের পর্বে: শিক্ষা, জিপিএ-৫ ও কারিকুলামের গোলকধাঁধা
(আপনার মতামত আমাদের জন্য অত্যন্ত মূল্যবান। কমেন্ট বক্সে জানান আপনার ভাবনা। তবে অনুরোধ—বিনা কারণে রিলস বা অপ্রাসঙ্গিক ভিডিও শেয়ার করবেন না!)
- ড. মাহবুব লিটু, উপদেষ্টা সম্পাদক, আমাদের অধিকারপত্র (odhikarpatranews@gmail.com)
#CulturalShift #BengaliHeritage #SocialCritique #FeatureStory #HybridCulture #AmaderOdhikarPatra #পথ_হারানো #দুর্দিনের_যাত্রী #কপালকুণ্ডলা #নজরুল_ইসলাম #বঙ্কিমচন্দ্র #বাংলা_সাহিত্য #ডিজিটাল_বাংলাদেশ #মধ্যবিত্ত_জীবন #রাজনীতির_গোলকধাঁধা #ট্রাফিক_জ্যাম #সামাজিক_সমালোচনা #বাংলাদেশ_সমাজ #EditorialFeature #CulturalCritique #BanglaLiterature #SocialSatire #OdhikarpatraEditorial

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: