
ঢাকা, ১ মার্চ ২০২৩ : ব্যাটার ডেভিড মালানের অনবদ্য সেঞ্চুরিতে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডেতে পরাজিত হয়েছে স্বাগতিক বাংলাদেশ। আজ সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বিশ^ চ্যাম্পিয়ন ইংল্যান্ডের কাছে ৩ উইকেটে হেরেছে বাংলাদেশ। এই হারে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে গেল টাইগাররা। টস জিতে প্রথমে ব্যাট করে ১৬ বল বাকী থাকতেই ২০৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। দলের পক্ষে সর্বোচ্চ ৫৮ রান করেন ওপেন্রা নাজমুল হোসেন শান্ত। জবাবে ১৬১ রান তুলতেই ৭ উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। অষ্টম উইকেটে আদিল রশিদকে নিয়ে ৫১ রানের অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে ইংল্যান্ডকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দেন মালান। ১৪৫ বলে ১১৪ রানের অনবদ্য ইনিংস খেলেন মালান। ইংলিশদের পক্ষে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ২৬ রান করেন উইল জ্যাকস। মিরপুর শেরে বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত ম্যাচে টস জিতে প্রথমে ব্যাটিং করার সিদ্বান্ত নেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম ইকবাল। লিটন দাসকে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস শুরু করেন তামিম। প্রথম ওভারের পঞ্চম বলে ক্যাচ দিয়ে অল্পের জন্য রক্ষা পান তামিম। ইংল্যান্ড পেসার ক্রিস ওকসের বলে ঠিকঠাক খেলতে না পারায় নিচু ক্যাচ দেন তামিম। তবে নিচু হওয়া বলটি হাতে নিতে পারেননি বোলার ওকস। ইংল্যান্ডের আরেক পেসার জোফরা আর্চারের করা ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারে দু’টি ও চতুর্থ ওভারে ফ্রি-হিটে ১টি বাউন্ডারি মারেন তামিম। ৪ ওভারের মধ্যে তামিমের ব্যাট থেকে ৩টি চার এলেও অন্যপ্রান্তে সাবধানী ছিলেন লিটন। ১০ম বলে এসে রানের খাতা খুলেন লিটন। পঞ্চম ওভারের চতুর্থ বলে পুল করে স্কয়ার লেগ দিয়ে ছক্কা মারেন লিটন। ওকসের করা পরের ডেলিভারিতেই লেগ বিফোর আউট হন লিটন। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি ১৫ বলে ৭ রান করেন লিটন। দলীয় ৩৩ রানে প্রথম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। লিটনের বিদায়ে উইকেটে আসেন সর্বশেষ বিপিএলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাজমুল হোসেন শান্ত। প্রথম ১২ বলের মধ্যে ৩টি চার মারেন শান্ত। ১০ম ওভারে প্রথমবারের মত আক্রমনে এসেই তামিমকে বিদায় দেন ইংল্যান্ডের পেসার মার্ক উড। উডের ১৪৯ কিলোমিটার গতির বল তামিমের কনুইয়ে লেগে স্টাম্পে আঘাত হানে। ৪টি চারে ৩২ বলে ২৩ রান করে বিদায় নেন তামিম। ৫১ রানে তামিমকে হারানোর পর জুটি বাঁধেন শান্ত ও মুশফিকুর রহিম। সাবধানে এগোতে থাকেন তারা। ১৭তম ওভারে ফিল সল্টের ভুলে জীবন পান মুশি। স্পিনার মঈন আলির বলে মিড উইকেট দিয়ে উড়িয়ে মারেন মুশফিক। সেখানে বল হাতে নিলেও বাউন্ডারির লাইনে পা লেগে যায় সল্টের। ছক্কা পান মুশফিক। ৮ রানে জীবন পান তিনি। জীবন পেয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি মুশফিক। ২০তম ওভারে আরেক স্পিনার আদিল রশিদের চতুর্থ বলে স্লগে ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে উডকে ক্যাচ দেন ৩৪ বলে ১৬ রান করা মুশি। শান্তর সাথে ৬২ বলে ৪৪ রানের জুটি গড়তে পারেন মুশফিক। মুশফিকের বিদায়ে পাঁচ নম্বরে নামা সাকিব আল হাসান সুবিধা করতে পারেননি। মঈনের বলে সুইপ করতে গিয়ে ব্যাট-বলে স্পর্শ করাতে না পারায় সরাসরি বোল্ড হন ১২ বলে ১টি চারে ৮ রান করা সাকিব। ১০৬ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে বাংলাদেশ। দলকে চাপমুক্ত করতে বড় জুটির চেষ্টা করেন শান্ত ও ছয় নম্বরে নামা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ। ৩১তম ওভারের পঞ্চম বলে ১৬ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান শান্ত। এজন্য ৬৭ বল খেলেন তিনি। ৩৫তম ওভারে বাংলাদেশের রান দেড়শ পার করে দলকে খেলায় ফেরান শান্ত ও মাহমুদুল্লাহ। পরের ওভারে রশিদের বলে লেগ সাইড দিয়ে মারতে গিয়ে শর্ট মিড উইকেটে জেসন রয়ের দারুন ক্যাচে বিদায় নেয়ার আগে ৬টি চারে ৮২ বল খেলে ৫৮ রান করেন শান্ত। মাহমুদুল্লাহর সাথে জুটিতে ৫৩ রান যোগ করেন শান্ত। শান্তকে অনুসরণ করে পরের ওভারেই বিদায় নেন মাহমুদুল্লাহ। উডের লেগ স্টাম্পের বলে ব্যাট চালান মাহমুদুল্লাহ। বল গিয়ে জমা পড়ে উইকেটরক্ষক জশ বাটলারের হাতে। আউটের আবেদন করে ইংল্যান্ড। সফট সিগন্যালে নট আউট দিয়ে থার্ড আম্পায়ারের সিদ্বান্তের উপর ছেড়ে দেন অন-ফিল্ড আম্পায়ার। টিভি রিপ্লেতে দেখা যায়, বল মাহমুদুল্লাহর ব্যাট স্পর্শ করে। বিদায় ঘটে ৩টি চারে ৪৮ বলে ৩১ রান করা মাহমুদুল্লাহর। পরপর দুই ওভারে দুই সেট ব্যাটার শান্ত ও মাহমুদুল্লাহকে হারিয়ে আবারও চাপে পড়ে বাংলাদেশ। ১৬২ রানে ষষ্ঠ উইকেট হারায় টাইগাররা। টেল-এন্ডারে বাংলাদেশের দুই ভরসা আফিফ হোসেন ও মেহেদি হাসান মিরাজও দ্রুত প্যাভিলিয়নের পথ ধরেন। আফিফকে ৯ রানে বিদায় দেন অভিষেক ম্যাচ খেলতে নামা অকেশনাল স্পিনার উইল জ্যাকস। মিরাজকে ৭ রানে থামান আর্চার। ১৮২ রানে অষ্টম উইকেটের পতন ঘটে বাংলাদেশের। এতে ২শর নীচে গুটিয়ে যাবার শঙ্কায় পড়ে টাইগাররা। কিন্তু সেটি হতে দেননি তাসকিন আহমেদ ও তাইজুল ইসলাম। নবম উইকেটে ২৫ বলে ২৬ রানের জুটি গড়েন তারা। ২শ রান স্পর্শ করে বাংলাদেশ। ৪৭তম ওভারে তাসকিনকে ১৪ রানে থামিয়ে জুটি ভাঙ্গেন আর্চার। ১৮ বল খেলে ১টি করে চার-ছক্কা মারেন তাসকিন। পরের ওভারে মঈনের বলে শেষ ব্যাটার হিসেবে আউট হন ১৩ বলে ১০ রান করেন তাইজুল। ৪৭ দশমিক ২ ওভারে ২০৯ রানে গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ইংল্যান্ডের আর্চার-উড-মঈন ও রশিদ ২টি করে উইকেট নেন। ১টি করে শিকার করেন ওকস ও জ্যাকস। ২১০ রানের টার্গেট দিয়ে শুরুতেই বল হাতে সাকিবকে আক্রমনে আনলেন বাংলাদেশ অধিনায়ক তামিম। ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মারেন ইংল্যান্ডের ওপেনার জেসন রয়। তবে শেষ বলে রয়কে ফেরান সাকিব। মিড তামিমের সহজ ক্যাচে আউট হন ৬ বলে ৪ রান করা রয়। শুরুর ধাক্কা সামলে ৩১ রানের জুটি গড়ে আরেক ওপেনার ফিল সল্ট ও ডেভিড মালান। নবম ওভারে দ্বিতীয়বারের মত আক্রমনে এসেই সল্ট ও মালান জুটি ভাঙ্গেন স্পিনার তাইজুল। ১২ রান করা সল্টকে বোল্ড করেন তাইজুল। নিজের চতুর্থ ওভারে দ্বিতীয় উইকেটের দেখা পান তাইজুল। উইকেট ছেড়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্প আউট হন ৬ রান রান করা জেমস ভিন্স। ১৩তম ওভারে ৪৫ রানে ৩ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়ে ইংল্যান্ড। এ অবস্থায় ইংল্যান্ডের চাপ বাড়িয়ে বাংলাদেশকে ভালো অবস্থায় রাখেন পেসার তাসকিন। তাসকিনের দারুন এক ডেলিভারিতে স্লিপে শান্তকে ক্যাচ দিয়ে বিদায় নেন ইংল্যান্ডের দলনেতা বাটলার(৯)। দলীয় ৬৫ রানে বাটলারকে হারানোর পর তিন নম্বরে নামা ডেভিড মালান ও জ্যাকস সাবধানে খেলে দলের স্কোর ১শ স্পর্শ করেন। এই জুটি ভাঙ্গতে বোলিংয়ে বেশ কয়েকবার পরিবর্তন করেন তামিম। অবশেষে ২৬তম ওভারে মালান-জ্যাকস জুটি বিচ্ছিন্ন করেন মিরাজ। ছক্কা মারতে গিয়ে ডিপ মিড উইকেটে আফিফকে ক্যাচ দেন জ্যাকস। ৩টি চার ও ১টি ছক্কায় ৩১ বলে ২৬ রান করেন তিনি। পঞ্চম উইকেটে ৫৭ বলে ৩৮ রান যোগ করেন মালান- জ্যাকস। ১০৩ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় ইংল্যান্ড। এ অবস্থায় ষষ্ঠ উইকেটে মঈনকে নিয়ে জুটি গড়ার চেষ্টা করেন উইকেটে সেট ব্যাটার মালান। ৩২তম ওভারে ওয়ানডে ক্যারিয়ারের চতুর্থ হাফ-সেঞ্চুরি তুলেন মালান। এজন্য ৯২ বল খেলেছেন তিনি। হাফ-সেঞ্চুরির পর চড়াও হন মালান। মিরাজের করা ৩৩তম ওভারে ১টি করে চার-ছয় মারেন মালান। ঐ ওভারে ১২ রান দেন মিরাজ। তারপরও মিরাজের উপর আস্থা রাখেন তামিম। ৩৫তম ওভারের শেষ বলে মঈনের উইকেট উপড়ে ফেলেন মিরাজ। ৩২ বলে ১৪ রান করেন মঈন। এরপর আট নম্বরে নামা ওকসকে ৭ রানে ফিরিয়ে ম্যাচে নিজের তৃতীয় উইকেট নেন তাইজুল। এতে ম্যাচ জয়ের পথে ভালোভাবেই টিকে থাকে বাংলাদেশ। শেষ ১০ ওভারে ৩ উইকেট হাতে নিয়ে ৪৪ রান দরকার পড়ে ইংল্যান্ডের। এ অবস্থায় ক্রিজে মালানের সঙ্গী হন রশিদ। ৪৬তম ওভারে তাসকিনের তৃতীয় বলে চার মেরে ১৬তম ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে চতুর্থ সেঞ্চুরি পূর্ণ করেন মালান। তিন অংকে পা রাখতে ১৩৪ বল খেলেন মালঅন। ৪৯তম ওভারের চতুর্থ বলে বাউন্ডারি মেরে ইংল্যান্ডের জয় নিশ্চিত করেন মালান। ৮টি চার ও ৪টি ছক্কায় ১৪৫ বলে অপরাজিত ১১৪ রান করে ম্যাচ সেরা হন মালান। ১টি চারে ২৯ বলে অপরাজিত ১৭ রান করেন রশিদ। অষ্টম উইকেটে ৫৯ বলে অবিচ্ছিন্ন ৫১ রান যোগ করেন মালান-রশিদ জুটি। বাংলাদেশের তাইজুল ৩টি, মিরাজ ২টি ও সাকিব-তাসকিন ১টি করে উইকেট নেন। একই ভেন্যুতে আগামী ৩ মার্চ সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডে অনুষ্ঠিত হবে। স্কোর কার্ড : বাংলাদেশ ব্যাটিং : তামিম ইকবাল বোল্ড ব উড ২৩ লিটন দাস এলবিডব্লু ব ওকস ৭ নাজমুল হোসেন শান্ত ক রয় ব রশিদ ৫৮ মুশফিকুর রহিম ক উড ব রশিদ ১৬ সাকিব আল হাসান বোল্ড ব মঈন ৮ মাহমুদুল্লাহ ক বাটলার ব উড ৩১ আফিফ হোসেন ক রশিদ ব জ্যাকস ৯ মেহেদি হাসান মিরাজ ক বাটলার ব আর্চার ৭ তাসকিন আহমেদ ক বাটলার ব আর্চার ১৪ তাইজুল ইসলাম ক এন্ড ব মঈন ১০ মুস্তাফিজুর রহমান অপরাজিত ০ অতিরিক্ত (বা-১, লে বা-৯, নো-৪, ও-১২) ২৬ মোট (অলআউট, ৪৭.২ ওভার) ২০৯ উইকেট পতন : ১/৩৩ (লিটন), ২/৫১ (তামিম), ৩/৯৫ (মুশফিকুর), ৪/১০৬ (সাকিব), ৫/১৫৯ (শান্ত), ৬/১৬২ (মাহমুদুল্লাহ), ৭/১৭৫ (আফিফ), ৮/১৮২ (মিরাজ), ৯/২০৮ (তাসকিন), ১০/২০৯ (তাইজুল)। ইংল্যান্ড বোলিং : ওকস : ৮-০-২৮-১ (ও-১), আর্চার : ১০-০-৩৭-২ (ও-৪, নো-৩), উড : ৮-০-৩৪-২ (ও-৩, নো-১), মঈন : ৭.২-০-৩৫-২, রশিদ : ৯-০-৪৭-২ (ও-৩), জ্যাকস : ৫-০-১৮-১ (ও-১)। ইংল্যান্ড ব্যাটিং : জেসন রয় ক তামিম ব সাকিব ৪ ফিল সল্ট বোল্ড ব তাইজুল ১২ ডেভিড মালান অপরাজিত ১১৪ জেমস ভিন্স স্টাম্প মুশফিক ব তাইজুল ৬ জশ বাটলার ক শান্ত ব তাসকিন ৯ জ্যাকস ক আফিফ ব মিরাজ ২৬ মঈন বোল্ড ব মিরাজ ১৪ ওকস ক তামিম ব তাইজুল ৭ রশিদ অপরাজিত ১৭ অতিরিক্ত (লে বা-১, ও-২) ৩ মোট (অলআউট, ৪৮.৪ ওভার) ২১২ উইকেট পতন : ১/৪ (রয়), ২/৩৫ (সল্ট), ৩/৪৫ (ভিন্স), ৪/৬৫ (বাটলার), ৫/১০৩ (জ্যাকস), ৬/১৪১ (মঈন), ৭/১৬১ (ওকস)। বাংলাদেশ বোলিং : সাকিব : ১০-০-৪৫-১ (ও-১), তাসকিন : ৯-১-২৬-১, তাইজুল : ১০-০-৫৪-৩, মিরাজ : ১০-২-৩৫-২, মুস্তাফিজুর : ৮-০-৪২-০ (ও-১), শান্ত : ১-০-৩-০। ফল : ইংল্যান্ড ৩ উইকেটে জয়ী। ম্যাচ সেরা : ডেভিড মালান (ইংল্যান্ড)। সিরিজ : তিন ম্যাচের সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেল ইংল্যান্ড।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: