
ঢাবি প্রতিনিধি: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০২৩ - ২৪ সেশনের ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে “ট্রান্স জেন্ডার” শব্দটি প্রত্যাহার এবং ১ জানুয়ারীর মধ্যে সংশোধিত বিজ্ঞপ্তি প্রকাশের দাবি জানিয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ শিক্ষার্থীরা।
শনিবার (৩০ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে এ দাবি জানায় তারা।
সংবাদ সম্মেলনে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পক্ষে লিখিত প্রেস বিজ্ঞপ্তি পাঠ করেন আইন বিভাগের ২০২০-২১ সেশনের শিক্ষার্থী সাখাওয়াত জাকারিয়া।
বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, 'ট্রান্সজেন্ডার' শব্দটি আমাদের দেশীয় শব্দ নয়। এমনকি বাংলা একাডেমির অভিধান, বিশেষ করে Bangla Academy Bengali-English Dictionary (32nd Reprint: Paush 1422/December 2015, Edited by: Mohammad Ali), Bangla Academy English-Bangla Dictionary (Revised & Enlarged 2nd Edition, Seventh Reprint: Magh 1421/January 2015, Edited by: Zillur Rahman Siddiqui) ও বাংলা একাডেমি আধুনিক বাংলা অভিধান (পরিবর্ধিত ও পরিমার্জিত সংস্করণের দ্বিতীয় পুনর্মুদ্রণ: আশ্বিন ১৪২৪/ সেপ্টেম্বর ২০১৭, সম্পাদক- জামিল চৌধুরী) এই তিনটি অভিধানের কোথাও 'ট্রান্সজেন্ডার' শব্দটির কোনো উল্লেখ নেই। তবে হিজড়া শব্দের প্রতিশব্দ হিসেবে “Hermaphrodite” ও “Eunuch” এর উল্লেখ থাকলেও এগুলো ব্যতিত অন্যকোনো শব্দের উল্লেখ নেই। এমতাবস্থায় একটি বিতর্কিত শব্দকে কেনো ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে যুক্ত করা হলো তা- আমাদের বোধগম্য নয়। আমরা মনে করি ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে এই শব্দ সংযুক্তির মাধ্যমে দেশীয় কৃষ্টি ও সংস্কৃতির উপর আঘাত করা হয়েছে। আমাদের দেশজ সংস্কৃতি রক্ষায় এই শব্দটি প্রত্যাহার করা অত্যন্ত জরুরী। তাছাড়া হিজড়া সম্প্রদায়কে বোঝাতে ট্রান্সজেন্ডার শব্দটি ব্যবহার করলে হিজড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার খর্ব হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে। 'ট্রান্সজেন্ডার' শব্দের ব্যবহার হিজড়া ব্যতীত একটি ভিন্নগোষ্ঠীর জন্য সুযোগ তৈরী করে। যারা হিজড়াদের অধিকারকে ফসলের আগাছার ন্যায় ছিনিয়ে নিতে পারে। তাই আমরা হিজড়া জনগোষ্ঠীদের প্রকৃত অধিকার রক্ষায় অবিলম্বে ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে এই 'ট্রান্সজেন্ডার' শব্দটি প্রত্যাহার করা হোক।
আমরা চাই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে বিতর্কিত 'ট্রান্সজেন্ডার' শব্দের প্রত্যাহার করার মাধ্যমে চলমান বিতর্কের নিরসন করা হোক। যেহেতু আগামী ৫ জানুয়ারী'২৪ ভর্তি পরীক্ষার আবেদনের সময়সীমা শেষ হচ্ছে। আমরা বিশ্বাস করি, বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ অভিভাবক হিসেবে আমাদের দাবী মেনে নিবেন। এবং মাননীয় রেজিস্টার ১ জানুয়ারি' ২৪ সোমবারের মধ্যেই ভর্তি বিজ্ঞপ্তি থেকে 'ট্রান্সজেন্ডার' শব্দটি প্রত্যাহার করে সংশোধিত ভর্তি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করবেন। আমরা চলমান এই বিতর্কের শান্তিপূর্ণ সমাধান চাই। কিন্তু যদি তা-না করা হয় তবে শিক্ষার্থীরা বসে থাকবে না। শিক্ষার্থীরা পড়ার টেবিল ছেড়ে রাজপথে নেমে আসতে বাধ্য হবে। এবং দাবী আদায় করে তবেই পড়ার টেবিলে ফিরে যাবে।
শিক্ষার্থীরা আরো জানায়, সম্প্রতি ট্রান্সজেন্ডার ইস্যু নিয়ে জাতীয় মানবধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. কামাল উদ্দিন আহমেদ এর একটি বক্তব্য আমাদের নজরে এসেছে। তিনি তার বক্তব্যে জানিয়েছেন যে, "ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কিছু শিক্ষার্থী ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিলের দাবি করেছে। কমিশন মনে করে এ ধরনের কর্মকাণ্ড অমূলক এবং এক্ষেত্রে জ্ঞানের সীমাবদ্ধতা প্রতীয়মান।" বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে আমরা তার এই বক্তব্যের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাচ্ছি। আমরা দৃঢ়তার সাথে বলতে চাই তাঁর বক্তব্য সম্পূর্ণ অসত্য। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দাবী দাওয়া সম্পর্কে সম্পূর্ণ অজ্ঞতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কখনোই হিজড়া জনগোষ্ঠীর কোটার বিরোধীতা করে নি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা হিজড়া জনগোষ্ঠীর অধিকার রক্ষার জন্যই আন্দোলন করে যাচ্ছে। আমরা মনে করি, মানবধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান এর এই অবিবেচনা প্রসূত বক্তব্য শিক্ষার্থীদের ক্ষোভকে আরও উস্কে দিবে। যা বিশ্ববিদ্যালয়কে অস্থিতিশীল পরিস্থিতির দিকে ঠেলে দিতে পারে। সুতরাং দায়িত্বশীল জায়গা থেকে তাঁর এই ধরণের বক্তব্য কখনোই কাম্য নয়।
উল্লেখ্য, গত ২১ ডিসেম্বর ঢাবি শিক্ষার্থীরা ট্রান্সজেন্ডার কোটা বাতিলের ঢাবিতে রাজু ভাস্কর্যে মানববন্ধন পরবর্তী উপাচার্য বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: