odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Wednesday, 29th October 2025, ২৯th October ২০২৫
প্রাণহানি, ধ্বংসযজ্ঞ ও জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাবে গঠিত ভয়াল ঝড়গুলো আজও সতর্ক করে মানবসভ্যতাকে।

ঝড় ও ঘূর্ণিঝড়ের রেকর্ডবুক: ইতিহাসের ভয়ঙ্করতম ঘূর্ণিঝড়গুলো

Special Correspondent | প্রকাশিত: ২৯ October ২০২৫ ১৮:১০

Special Correspondent
প্রকাশিত: ২৯ October ২০২৫ ১৮:১০

নিউজ ডেস্ক:

২০২৫ সালের অক্টোবর মাসে জ্যামাইকায় আছড়ে পড়ে ক্যাটাগরি-৫ ঘূর্ণিঝড় মেলিসা (Hurricane Melissa)। ঘণ্টায় ১৮৫ মাইল (২৯৫ কিমি) বেগে বয়ে যাওয়া বাতাসে দ্বীপদেশটির দক্ষিণ-পশ্চিম উপকূলে তাণ্ডব চালায় এটি। বিশ্ব আবহাওয়া সংস্থা একে আখ্যা দিয়েছে জ্যামাইকার শতাব্দীর ঝড় হিসেবে। মার্কিন ন্যাশনাল হারিকেন সেন্টারের পূর্বাভাস অনুযায়ী এটি ছিল বিধ্বংসী ও প্রাণঘাতী ফ্ল্যাশ ফ্লাড ঘটানোর মতো শক্তিশালী। মানব ইতিহাসে আরও অনেক ঝড় রয়েছে যেগুলো ভয়াবহতা ও ধ্বংসযজ্ঞের দিক থেকে রেকর্ড সৃষ্টি করেছে।

দ্য গ্রেট হারিকেন, ১৭৮০

১৭৮০ সালের ৯ অক্টোবর রাতে ক্যারিবিয়ান দ্বীপ বার্বাডোসে আঘাত হানে ইতিহাসের সবচেয়ে প্রাণঘাতী আটলান্টিক ঘূর্ণিঝড়। দ্য গ্রেট হারিকেন নামে পরিচিত এ ঝড়ে ২০,০০০ থেকে ২৭,৫০০ জনের মৃত্যু হয় বলে ধারণা করা হয়। ঘণ্টায় ২০০ মাইলেরও বেশি বেগে বয়ে যাওয়া বাতাসে দ্বীপজুড়ে মৃত্যু ও ধ্বংস নেমে আসে। পরবর্তীতে এটি মার্টিনিক, সেন্ট লুসিয়া ও সিন্ট ইউস্টাটিয়াসসহ একাধিক দ্বীপে আঘাত হেনে শত শত জাহাজ ও নৌবহর ডুবিয়ে দেয়।

গ্যালভেস্টন, ১৯০০

১৯০০ সালের সেপ্টেম্বর মাসে যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসের গ্যালভেস্টন শহরে আঘাত হানে ক্যাটাগরি-৪ ঝড়। এতে ৬,০০০ থেকে ৮,০০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে। পুরো শহরটিকে প্রায় ধ্বংস করে দেয় এই হারিকেন।

ভোলা সাইক্লোন, ১৯৭০

আটলান্টিকের বাইরে অর্থাৎ বঙ্গোপসাগরে ১৯৭০ সালের নভেম্বরে আঘাত হানা ভোলা ঘূর্ণিঝড় ইতিহাসের ভয়াবহতম প্রাকৃতিক দুর্যোগ হিসেবে পরিচিত। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তান (বর্তমান বাংলাদেশ) ও ভারতের উত্তর-পূর্বাঞ্চলে আঘাত হানা এই ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ৫ লাখ মানুষ নিহত হয় বলে ধারণা করা হয়। ৩৫ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে পুরো উপকূলীয় অঞ্চল তলিয়ে যায়।

ক্যাটরিনা ও মিচ

২০০৫ সালের হারিকেন ক্যাটরিনা যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে ব্যয়বহুল প্রাকৃতিক বিপর্যয়। ২ লাখেরও বেশি ঘরবাড়ি ধ্বংস বা ক্ষতিগ্রস্ত হয়, লুইজিয়ানায় ২৫-২৮ ফুট উঁচু জলোচ্ছ্বাসে নিউ অরলিন্স শহরের ৮০% অংশ পানিতে ডুবে যায়। মোট ক্ষয়ক্ষতি ধরা হয় প্রায় ২০১ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (২০২৪ সালের মুদ্রামানে)। এর আগে ১৯৯৮ সালের হারিকেন মিচ মধ্য আমেরিকার হন্ডুরাস, নিকারাগুয়া ও গুয়েতামালা জুড়ে ভয়াবহ ধ্বংসযজ্ঞ চালায়। ১০,০০০ থেকে ১৯,০০০ মানুষের প্রাণহানি ঘটে, ধ্বংস হয় ২ লাখেরও বেশি ঘরবাড়ি ও ৯২টি সেতু।

হারিকেন প্যাট্রিসিয়া, ২০১৫

২০১৫ সালের অক্টোবরে মেক্সিকোর উপকূলে তৈরি হওয়া হারিকেন প্যাট্রিসিয়া রেকর্ড সৃষ্টি করে ঘণ্টায় ২২১ মাইল (৩৫৬ কিমি) বেগে বাতাস বইয়ে। এটি পশ্চিম গোলার্ধের ইতিহাসে সর্বোচ্চ বায়ু গতিবেগের ঝড়। যদিও জনবসতিহীন এলাকায় আঘাত হানায় প্রাণহানি তুলনামূলক কম ছিল মোটে ছয়জনের মৃত্যু।

২০২৫ সালে গঠিত হারিকেন এরিন (Erin) ছিল বছরের প্রথম আটলান্টিক ঘূর্ণিঝড়, যা মাত্র ২৪ ঘণ্টায় ক্যাটাগরি-১ থেকে ক্যাটাগরি-৫-এ রূপ নেয়। এভাবে দ্রুত শক্তি অর্জনের ঘটনাকে বলা হয় Rapid Intensification, যা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বেড়ে গেছে বৈশ্বিক উষ্ণতার কারণে। ২০২৪ সালের হারিকেন মিল্টন ও হারিকেন বেরিল, ২০২৩ সালের হারিকেন লি ও জোভা সবকটিই রেকর্ড ভেঙে ফেলেছে দ্রুত শক্তি বৃদ্ধির দিক থেকে। ইতিহাসের প্রতিটি ঘূর্ণিঝড় মানবজাতিকে নতুন করে শিখিয়েছে প্রকৃতির শক্তি কতটা ভয়াবহ হতে পারে। প্রযুক্তি ও পূর্বাভাসের অগ্রগতি সত্ত্বেও, জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে ঘূর্ণিঝড়ের তীব্রতা ও অপ্রত্যাশিত আচরণ এখন আরও বড় বৈশ্বিক হুমকি হয়ে উঠছে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সাগরের পানির তাপমাত্রা গড়ে ১.১°C বেড়ে গেছে, যা এই ঝড়গুলোর শক্তি বাড়াতে বড় ভূমিকা রাখছে।

-মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: