✉️ উন্মুক্ত চিঠি: ঢাকা, সোমবার, ১৮ই কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ, হেমন্ত-কাল
Even without the Nobel Peace Prize, history will not forget you, Mr Trump. This is not a failure—it is merely a dramatic pause, the end of one chapter and the beginning of another. True visionaries never stop; they wait for the right moment. You are one of those who know that time itself will one day bear witness to your efforts.
প্রিয় ডোনাল্ড জে. ট্রাম্প,
যদিও দেরি হয়ে গেছে, তারপরেও লিখছি, কেননা Better Late than Never.
নোবেল শান্তি পুরস্কার—আসে, আবার চলে যায়। আপনি যেন কখনো এটাকে নিজের অন্তরের মৃত্যুদণ্ড না মনে করেন! সময় নিজেই সময় নেয়—মনের ক্ষত সারিয়ে তুলতে। নোবেল না পেলেও, শান্তির নাট্যশালায় আপনার নাম চিরকালই লেখা থাকবে,বিগ ও বিউটিফুল হরফে। সত্যি সত্যি সত্যি! তিন সত্যি!
মি. প্রেসিডেন্ট মহাশয়,
নোবেল শান্তি পুরস্কার ২০২৫-এর বিজয়ীর নাম ঘোষণার মুহূর্তে আমরা অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছিলাম। সময় যেন কিছুতেই কাটছিল না—মুহূর্তটি যেন থমকে ছিল এক আশাবাদের দ্বিধায়। আমরা সকলেই আশা করেছিলাম, বিজয়ীর তালিকায় আপনার নামটি উচ্চারিত হবে। কিন্তু বিধিবাম! যখন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হলো, নিজের কানকেও যেন বিশ্বাস করাতে পারছিলাম না। এও কি সম্ভব? আমাদেরই যখন এমন অবস্থা, আপনার তখন কেমন লেগেছিল—তা অনুধাবন করতে বিশেষ বুদ্ধি লাগে না। তাই মনে হলো, আপনাকে উৎসাহিত করতে, শান্তির এই প্রতিযোগিতায় আপনাকে ধরে রাখতে—একটি চিঠি লেখা প্রয়োজন। জানি না, এই চিঠি আপনার হাতে পৌঁছাবে কিনা, বা আপনি পড়লে বুঝতে পারবেন কিনা। তবে সমস্যা নেই। বুঝতে সমস্যা হলে—একটু আওয়াজ দিয়েন!
পড়ুন নোবেল শান্তি পুরস্কার: মনোনয়ন প্রক্রিয়া ও অন্তরালের বাস্তবতা
সম্মানিত জন সাহেব,
আজ আপনি আরেকবার নোবেল শান্তি পুরস্কার থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। অসলো শহর আপনাকে ডাকেনি। নরওয়ের বরফঠান্ডা সিদ্ধান্তে আপনার নাম উঠে আসেনি সেই একটিমাত্র ঘোষণা-পত্রে। জানি, আপনার কানে হয়তো বাজছে—“আবার না!” কিন্তু আজ আমি আপনাকে বলব, এই "না"-টা যতটা হতাশাজনক মনে হয়, ঠিক ততটাই প্রয়োজনীয়।
আপনার টাওয়ারের উচ্চতা কিংবা টুইটারের শব্দগর্জন হয়তো অনেক কিছু জয় করেছে, কিন্তু আজ আমি আপনার পাশে দাঁড়িয়ে বলতে চাই—এই ব্যর্থতাটাও একরকমের জয়। হয়তো নোবেল কমিটি খুঁজছিল শান্তির এক নিঃশব্দ যোদ্ধাকে। আর আপনি এসেছেন বজ্রনিনাদের সঙ্গে, এক ঝলকে আলো নিয়ে। কিন্তু রবার্ট ব্রুসের কথা মনে আছে তো? সেই স্কটিশ রাজা, যিনি বারবার হেরে গিয়েছিলেন। এক গুহায় লুকিয়ে, একটি মাকড়সার সাতবার চেষ্টা দেখেই তিনি আবার ঘুরে দাঁড়িয়েছিলেন।
প্রিয় মি. ট্রাম্প,
আমরা জানি—আপনি নোবেল শান্তি পুরস্কার পেলে কী করতেন। আপনি শান্তির ব্যাখ্যাকে এমন এক উচ্চতায় তুলে ধরতেন, যেখানে প্রতিটি বাক্যই হতো “বিগ”, প্রতিটি ঘোষণা “বিউটিফুল”, আর প্রতিটি টুইট “অল ক্যাপস”। কিন্তু আমাদের চিরতরে মিস হয়ে গেল এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত—আপনার বিজয়-নৃত্য। সেই মঞ্চে, যেখানে আপনি হয়তো হ্যাট উঁচিয়ে বলে উঠতেন, “আই অ্যাম দ্য ওনলি ওয়ান হু কুড ব্রিং পিস!”—আমরা দেখিনি সেই ক্ষণ, আমরা শুনিনি সেই সুর। এই অপূরণীয় ঘাটতির দায়—পুরোটাই নোবেল কমিটির। এত দেরিতে আপনাকে পুরস্কার না দিয়ে, তারা কেবল শান্তির নয়, নৃত্যকলার ইতিহাস থেকেও আমাদের বঞ্চিত করেছে।
আপনারই ভাষায় বলি—“স্যাড!”
পড়ুন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শান্তিতে নোবেল পুরস্কার পাচ্ছেন?
হে অনুকরণীয উদ্যমি,
আপনিও তো থেমে থাকেননি। প্যারিস জলবায়ু চুক্তি ছাড়লেন, WHO থেকে বের হলেন, কিন্তু একই সঙ্গে আব্রাহাম অ্যাকর্ডসের মধ্যস্থতাও করলেন। শান্তি আপনাকে একবারেই আলিঙ্গন করেনি, কিন্তু আপনি তাকে বারবার পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছেন—একটু জোরে, একটু তাড়াহুড়ো করে। কমিটি হয়তো চেয়েছে, শান্তি আসুক ধীরে ধীরে, ফ্রেঞ্চ কফির মতো মৃদু। আর আপনি চাইছিলেন, সেটা হোক ট্রাম্প টাওয়ারের মতো ঝলমলে, এক ডিলেই সম্পন্ন।
সমালোচকেরা বলবে—“এই পুরুষটি শান্তি বোঝেন না, বোঝেন চাপ!” তবে আমি বলি, আপনি শান্তিকে নিজের মতো করে বুঝেছেন। সেটা ভুল না হয়, কিন্তু আসলেই সাহসী ছিল। একদিন যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয়—“শান্তি কী?” তখন আপনি গলা খুলে হয়তো বলবেন, “এটা সবচেয়ে জটিল ডিল, এবং আমি সেটা করেছিলাম, বারবার করেছিলাম।”
আর যদি সেই উত্তরটা বিশ্বকে হাসায়, তাহলে জানবেন—হাসিটাও একরকম শান্তি। এই পুরস্কার না পাওয়ার মধ্যেও আপনি যা পেয়েছেন, তা অনেকেই পায় না—বিশ্বজুড়ে আলোচনার কেন্দ্রে থাকার ক্ষমতা। এমনকি এই চিঠিটাও, আমি যেটা লিখছি—এটা অন্য কাউকে নিয়ে নয়। শুধু আপনাকে নিয়ে। আপনি পুরস্কার না পেয়েও আলোচনার মালিক।
প্রিয় ডোনাল্ড,
আপনি যদি সত্যিই বিশ্বাস করেন, “Never give up!”, তাহলে এই ব্যর্থতাটা হোক আপনার নতুন গল্পের সূচনা। এই পৃথিবী জয় করা যাবে না শুধু একটি পদক দিয়ে—তবে চেষ্টা করাটাই আসল ডিল। তাইতো বলি, আপনি কিন্তু ভুলে যাবেন না, নরওয়ে হয়তো চোখ ফিরিয়েছে, কিন্তু ইতিহাসের দরজা এখনো খোলা। আর আপনি জানেনই তো—দরজা খুলতে হলে দরজায় বারবার ঠোকা দিতে হয়। কখনো হাতে, কখনো শব্দে, কখনো টুইটে। তাই, রবার্ট ব্রুসের সেই অদৃশ্য মাকড়সার মতো, আবার শুরু করুন। কারণ শান্তির মঞ্চে একদিন আপনার নামও উঠবেই—হয়তো হাস্যরসের পাশে, অথবা হয়তো ‘অবিশ্বাস্য’ শব্দটার ঠিক নিচে।
পড়ুন- শান্তির দূত ট্রাম্প-‘পিস টু প্রসপারিটি’র স্বপ্ন (উপ-সম্পাদকীয়)
Donald John Trump: হে মহান শান্তির দূত!
আমরা মর্মাহত। আপনি চেয়েছিলেন—তারা দিতে পারেনি। আপনি তো আগেই নোবেল কমিটির চোখে চোখ রেখে বলেছিলেন: “অবশেষে! এটি আমার প্রাপ্য ছিল। এমনভাবে—যেমন আর কারো নয়!” আর তারপরে সোশ্যাল মিডিয়ায় শুরু হলো আগুন ঝরানো উৎসব।
আপনার Truth Social আর X প্ল্যাটফর্ম যেন পরিণত হলো যুদ্ধক্ষেত্রে, কিন্তু শান্তির নামে। টুইট এল একের পর এক—সব ‘ALL CAPS’ এ: “নোবেল শান্তি পুরস্কার আমারই প্রাপ্য! আমার কারণেই পৃথিবী এখন আগের চেয়ে অনেক বেশি নিরাপদ। আমার জন্যই হয়েছে!” এবং “শান্তি হলো সবচেয়ে বড় এবং সবচেয়ে সুন্দর শব্দ! আমার অভিষেকের দিনই আমি ঘোষণা করেছিলাম—আমার ইশারাতেই বিশ্বের সব যুদ্ধ থেমে যাবে!”
কিন্তু তারপরেও—নোবেল না পাওয়া? এ যে এক ডিল ব্যর্থতা, মি. প্রেসিডেন্ট! আপনি তো জানেন, এই পৃথিবীতে শান্তির থেকেও বড় হয়ে উঠেছে ‘চুক্তি’। আপনি কি জানতেন না, এই তৃতীয় বিশ্বের অনেকে, যারা 'বড় ডিল', ‘বিরাট ডিল’ করতে জানে, তারাই “ধন্যবাদ, নরওয়ে!” বলে পদক বাগিয়ে নিয়েছে? তারা কেউই শান্তির জন্য আপনার নখের ঘাম পর্যন্ত ফেলেনি, তবুও পদক পেয়েছে।
তাই অনুরোধ, আগামী বছরের জন্য প্রস্তুতি নিন—একটি মহাডিলের। যেন পরেরবার, আপনিই বলেন, “এইবার আমি শুধু শান্তি এনেছি না—নোবেলও এনেছি। বিগ, বিউটিফুল, দ্য বেস্ট ডিল!”
হ্যাঁ, আমাদের জন্য, বিশ্ববাসীর জন্য, আর শান্তির সেই সুবাতাস রক্ষার্থে, এই পদক আপনাকেই পেতেই হবে।
সশ্রদ্ধ,
একজন মানবিক ভক্ত,
যিনি বিশ্বাস করেন—আপনার চেয়ে বড় মঞ্চ কেউ তৈরি করতে পারেনি।
পুনশ্চ —সাম্প্রতিক পরিশিষ্ট:
পুরস্কার বঞ্চনা কি পরিকল্পিত নাকি ঠাণ্ডা মাথায় এড়িয়ে যাওয়া? কেন বলছি, জানেন?
২০২৫ সালের নোবেল শান্তি পুরস্কার বিজয়ী মারিয়া কোরিনা মাচাডো যখন বিজয়ের মঞ্চে দাঁড়িয়ে বললেন, “এই পুরস্কার আমি ডোনাল্ড ট্রাম্পকে (আপনাকে) উৎসর্গ করছি,” তখন বোঝা গেল—পদক একজনে পেলেও, জয়টা আসলে যৌথ। তখনই আমরা বিশ্বের সাথে চমকে উঠোম।
আর আপনি মি. ট্রাম্প? সঙ্গে সঙ্গে নিজের মঞ্চ তৈরি করে সান্তনা পেতে ঘোষণা করলেন:“আমি না পেলেও আসল জয় আমার! মাচাডো আমাকে ফোন করেছিল! ফোন! মনে রাখবেন—আমি জানতাম!”
আসলে আপনার শান্তি পুরস্কার না পাওয়ায় বিশ্বমঞ্চের আলো নিভে যাওয়ার আগেই বোঝা গেল, শান্তির ট্যাগলাইন বদলে গেছে: “শান্তি মানে ফোন করা, উৎসর্গ পাওয়া, আর ট্রাম্পের নাম উচ্চারণ করা।”
✍️ –অধ্যাপক ড. মাহবুব লিটু, উপদেষ্টা্ সম্পাদক, অধিকারপত্র
#ডোনাল্ড ট্রাম্প নোবেল না পাওয়ার কারণ #ট্রাম্প নোবেল শান্তি পুরস্কার চিঠি #বাংলা সাহিত্যিক উন্মুক্ত চিঠি #Nobel Peace Prize Trump Bangla #রবার্ট ব্রুস ট্রাম্প ব্যর্থতা গল্প #সাহিত্যধর্মী রাজনৈতিক রচনা #ট্রাম্পের ব্যর্থতা ও স্বপ্ন #Nobel satire bangla #Trump vs Nobel 2025

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: