odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 28th November 2025, ২৮th November ২০২৫
কেমব্রিজের নতুন গবেষণা জানাচ্ছে—৯ থেকে ৩২ বছর পর্যন্ত মস্তিষ্ক থাকে কিশোর অবস্থায়। ৪,০০০ ব্রেন স্ক্যান বিশ্লেষণে উঠে এলো মানব মস্তিষ্কের পাঁচ ধাপের বিকাশচিত্র।

বিজ্ঞানীদের নতুন দাবি: কিশোরাবস্থা ৩২ বছর পর্যন্ত

Special Correspondent | প্রকাশিত: ২৫ November ২০২৫ ২৩:৩০

Special Correspondent
প্রকাশিত: ২৫ November ২০২৫ ২৩:৩০

নিউজ ডেস্ক │অধিকারপত্র

মানব মস্তিষ্কের বিকাশ পাঁচটি ভিন্ন ধাপে এগোয় এবং এর মধ্যেই রয়েছে চারটি গুরুত্বপূর্ণ বয়স ৯, ৩২, ৬৬ এবং ৮৩। ইউনিভার্সিটি অব কেমব্রিজের একদল বিজ্ঞানীর পরিচালিত নতুন গবেষণায় উঠে এসেছে এই চমকপ্রদ তথ্য। গবেষকরা প্রায় ৪,০০০ মানুষের মস্তিষ্ক স্ক্যান বিশ্লেষণ করেছেন। যাদের বয়স নবজাতক থেকে ৯০ বছর পর্যন্ত। এতে দেখা গেছে মস্তিষ্কের নিউরনগুলোর সংযোগ বা নেটওয়ার্ক বিভিন্ন বয়সে নাটকীয়ভাবে বদলে যায় এবং পুরো প্রক্রিয়া একটি ধারাবাহিক, মসৃণ পথ অনুসরণ করে না। পাঁচ ধাপের মানব মস্তিষ্ক গবেষণা অনুসারে মস্তিষ্কের বিকাশ নিম্নলিখিত পর্যায়ে বিভক্ত-

শৈশব (জন্ম থেকে ৯ বছর): এ সময় মস্তিষ্ক দ্রুত বড় হতে থাকে এবং শুরুতে অতিরিক্ত তৈরি হওয়া সিন্যাপসগুলো ছেঁটে ফেলে। দক্ষতা কম থাকায় শিশুর মস্তিষ্কের কাজ অনেকটা এলোমেলো গতিতে চলে।

কিশোরাবস্থা (৯–৩২ বছর): ৯ বছর বয়স থেকে মস্তিষ্কে শুরু হয় সংযোগের কার্যকারিতা বৃদ্ধির নির্মম প্রক্রিয়া। এটিই সবচেয়ে বড় পরিবর্তন। গবেষকদের মতে কিশোরাবস্থা কেবল টিনএজেই শেষ হয় না বরং তা টেনে নিয়ে যায় ৩০ এর কোঠার শুরু পর্যন্ত। এই সময়েই মানসিক স্বাস্থ্যজনিত সমস্যার ঝুঁকি সর্বোচ্চ হয়।

প্রাপ্তবয়স্ক জীবন (৩২–৬৬): এই দীর্ঘ পর্যায়ে মস্তিষ্ক তুলনামূলক স্থিতিশীল থাকে। দক্ষতা বাড়ার বদলে ধীরে ধীরে কমতে থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলেন এটি মানুষের বুদ্ধিমত্তা, সিদ্ধান্ত গ্রহণ এবং ব্যক্তিত্বের স্থায়ীত্বের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

প্রারম্ভিক বার্ধক্য (৬৬–৮৩): এখানে মস্তিষ্ক একীভূতভাবে কাজ করার বদলে আলাদা অঞ্চলগুলো বেশি সক্রিয় হতে থাকে। এ বয়সে উচ্চ রক্তচাপ ও ডিমেনশিয়ার মতো সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে।

বিলম্বিত বার্ধক্য (৮৩ বছরের পর): মস্তিষ্কের পরিবর্তনগুলো আরও তীব্র হয়। তবে এই বয়সের সুস্থ মানুষের স্ক্যান কম পাওয়ায় তথ্য তুলনামূলক সীমিত।

গবেষণার প্রধান লেখক ড. অ্যালেক্সা মাউসলি জানান, মস্তিষ্ক সারাজীবন ধরে নিজেকে নতুন করে সাজায়। কখনও সংযোগ শক্তিশালী হয়, কখনও দুর্বল হয়—এটি কোনো এক ধাতব সরলরেখা নয়। কিশোরাবস্থা ৩২ বছর পর্যন্ত দীর্ঘ হওয়ার বিষয়টি মস্তিষ্কের সর্বোচ্চ কর্মক্ষমতার বয়সও ব্যাখ্যা করে। মস্তিষ্ক যেভাবে সংযুক্ত থাকে তার ওপর নির্ভর করে মনোযোগ, ভাষা, স্মৃতি এমন নানা ক্ষমতা। এই গবেষণা সেসব রোগ ও ব্যাধি বুঝতে সাহায্য করবে। আমাদের মস্তিষ্কের আজীবন পরিবর্তনের বাস্তব চিত্র তুলে ধরেছে। তবে সবার ক্ষেত্রে এই বয়সসীমা একই হবে না। নতুন এই গবেষণা স্পষ্ট করে দেখিয়েছে যে মানব মস্তিষ্কের বিকাশ একটি দীর্ঘ ও জটিল প্রক্রিয়া, যা পাঁচটি স্বতন্ত্র ধাপে বিভক্ত। কিশোরাবস্থা ৩০-এর কোঠা পর্যন্ত দীর্ঘ হওয়া এবং ৯, ৩২, ৬৬ ও ৮৩ এই নির্দিষ্ট বয়সগুলোতে বড় পরিবর্তন আসার বিষয়টি আমাদের মানসিক স্বাস্থ্য, শেখার ক্ষমতা ও বার্ধক্য সম্পর্কে প্রচলিত ধারণাকে নতুনভাবে ভাবতে বাধ্য করে। গবেষকদের মতে, মস্তিষ্কের এই সময়ভিত্তিক পরিবর্তনগুলো বুঝতে পারলে মানসিক সমস্যা, স্নায়ুবিক রোগ এবং বার্ধক্যজনিত জটিলতা সম্পর্কে আরও কার্যকর প্রস্তুতি নেওয়া সম্ভব হবে। মানব মস্তিষ্কের এই জীবনব্যাপী অভিযোজনক্ষমতাই প্রমাণ করে শেখা, বদলে যাওয়া ও বিকাশ কোনো বয়সেই থেমে থাকে না

-মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: