বিশেষ প্রতিনিধি, অধিকার পত্র ডটকম.
বাংলাদেশের রাজনীতি এখন এক গভীর পরিবর্তনের মোড়ে দাঁড়িয়ে। দেশের প্রতিষ্ঠাতা রাষ্ট্রপতি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মস্থান গোপালগঞ্জজুড়ে রাজনৈতিক স্মৃতি এখনও অটুট থাকলেও জাতীয় পর্যায়ে আওয়ামী লীগ কার্যত নিষিদ্ধ। ২০২৬ সালের ফেব্রুয়ারির আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে দলটিকে বাইরে রাখার সম্ভাবনা নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে চলছে ব্যাপক আলোচনা।
এই পরিস্থিতিতে আওয়ামী লীগের অবস্থান নিয়ে সজীব ওয়াজেদ বিবিসি বাংলাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেন—
“অর্ধেক ভোটারকে বাদ দিয়ে সাজানো নির্বাচন আমরা হতে দেব না। আমাদের সামনে আর কোনো পথ নেই; জনগণের অধিকার রক্ষায় আমরা আন্দোলন করবো।”
জুলাই আন্দোলন ও হতাহতদের দায়—ক্ষমা চাইবে কি আওয়ামী লীগ?
জুলাই আন্দোলনের সময় হতাহতের ঘটনায় আওয়ামী লীগের অনুশোচনা না থাকা নিয়ে সমালোচনা রয়েছে দীর্ঘদিন। ক্ষমা চাওয়ার প্রশ্নে সজীব ওয়াজেদ বলেন,
“ভুল অবশ্যই হয়েছে—শুরুর দিকেও, শেষ দিকেও। এগুলোর তদন্ত হওয়া উচিত। প্রধানমন্ত্রী থাকা অবস্থায় আমার মা ৫ আগস্টের আগেই একটি জুডিশিয়াল কমিশন গঠন করেছিলেন হত্যাকাণ্ডগুলোর তদন্তের জন্য।”
তিনি উল্লেখ করেন, ওই সময় শুধুমাত্র ছাত্র বা সাধারণ মানুষের প্রাণহানি হয়নি;
“পুলিশ সদস্য, আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী—অনেকেই নিহত হয়েছেন। কে দায়ী, সেটার নিরপেক্ষ তদন্ত হওয়া জরুরি।”
পুলিশের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ ও ইনডেমনিটির প্রশ্ন
সজীব ওয়াজেদ দাবি করেন যে জুলাই আন্দোলনের সময় দায়ী আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যদের বিরুদ্ধে আওয়ামী লীগ সরকার ব্যবস্থা নিয়েছিল।
তবে তিনি পাল্টা প্রশ্ন তুলে বলেন—
“৫ আগস্ট থেকে ১৫ আগস্ট পর্যন্ত যে হত্যাকাণ্ডগুলো হয়েছে, তার তো ইনডেমনিটি দিয়েছে ইউনূস সরকার। পুলিশ হত্যা হোক, আওয়ামী লীগ কর্মী হত্যা হোক—যারা এসব করেছে, তাদের অপরাধ যখন সরকারই মাফ করে দিল, তখন শুধু আওয়ামী লীগের কাছেই কেন ক্ষমা চাওয়ার দাবি?”
তার মতে, একদিকে আওয়ামী লীগের কাছে ক্ষমা চাওয়ার চাপ, অন্যদিকে অপরাধীদের ইনডেমনিটির মাধ্যমে দায়মুক্তি—এই দ্বৈত মানসিকতা জনগণের সামনে আরও বিভ্রান্তি তৈরি করছে।
রাজনৈতিক ভবিষ্যৎ—শেখ হাসিনার অধ্যায় কি শেষের পথে?
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের এক অংশের মতে, দল নিষিদ্ধ থাকা এবং নেতৃত্বের বিরুদ্ধে আদালতের রায়—এসব বিষয় আওয়ামী লীগের ভবিষ্যৎ পথকে কঠিন করছে। তবে বিরোধীরা মনে করে, আওয়ামী লীগ বৃহত্তম রাজনৈতিক শক্তি হওয়ায় তারা পুনরায় ফিরতে পারে—যদি আন্দোলন ও মামলা–সংক্রান্ত জটিলতা কাটিয়ে উঠতে পারে।
বাংলাদেশের রাজনীতিতে পরবর্তী অধ্যায় কী দাঁড়ায়—তা নির্ভর করবে আগামী নির্বাচন ও চলমান রাজনৈতিক উত্তেজনার পরিণতির ওপর।
BBC Bangla

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: