বিশেষ প্রতিনিধি, অধিকার পত্র ডটকম
জুলাই আন্দোলনকারীদের ওপর ভবিষ্যতে কোনো ধরনের আক্রমণ হলে পাল্টা আক্রমণে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন জুলাই অভ্যুত্থানের অন্যতম নেতা ও অন্তর্বর্তী সরকারের সাবেক উপদেষ্টা মাহফুজ আলম। তিনি বলেন, আন্দোলনকারীদের ওপর হামলা আর সহ্য করা হবে না।
সোমবার (১৫ ডিসেম্বর) রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে ইনকিলাব মঞ্চের আয়োজনে ‘সর্বদলীয় প্রতিরোধ সমাবেশে’ বক্তব্য দিতে গিয়ে মাহফুজ আলম বলেন,
“আমাদের গায়ে হাত দেওয়া যাবে না। একটা লাশ পড়লে আমরা কিন্তু লাশ নেব। অত সুশীলতা করে লাভ নেই। অনেক ধৈর্য ধরা হয়েছে।”
ইনকিলাব মঞ্চের আহ্বায়ক শরিফ ওসমান হাদির ওপর গুলিবর্ষণের প্রতিবাদে আয়োজিত এই সমাবেশে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও জুলাই আন্দোলনের নেতারা অংশ নেন। জুলাই অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবির আন্দোলনের অগ্রভাগে থাকা শরিফ ওসমান হাদির ওপর গত শুক্রবার ঢাকার বিজয়নগরে মোটরসাইকেল আরোহী দুই দুর্বৃত্ত গুলি চালায়। মাথায় গুলিবিদ্ধ হাদিকে উন্নত চিকিৎসার জন্য সরকারি ব্যবস্থাপনায় এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে সিঙ্গাপুরে নেওয়া হয়েছে। তিনি ঢাকা–৮ আসনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে প্রচার চালাচ্ছিলেন।
পুলিশের প্রাথমিক তদন্ত অনুযায়ী, আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় ত্রয়োদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন ও গণভোট বানচাল করতেই এই হামলা চালানো হয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। গুলিবর্ষণকারী হিসেবে পুলিশ ফয়সল করিম মাসুদকে শনাক্ত করেছে, যিনি নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির সহসভাপতি। তার সঙ্গে থাকা সন্দেহভাজন আরেক হামলাকারী শেখ আলমগীর ভারতে পালিয়ে গেছেন বলে মনে করা হচ্ছে।
নির্বাচনের আগে ১০ ডিসেম্বর তথ্য ও সম্প্রচার মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টার দায়িত্ব ছেড়ে দেওয়া মাহফুজ আলমকে এই সমাবেশে প্রথমবার প্রকাশ্যে দেখা যায়। তিনি দেশের সামনে একটি ‘সংকটময় পরিস্থিতি’ তৈরি হচ্ছে বলে মন্তব্য করেন।
মাহফুজ আলম বলেন,
“৫ আগস্টের পর মুজিববাদী, আওয়ামী লীগ ও ১৪–দলীয় সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কঠোর প্রতিক্রিয়া জানানোর সক্ষমতা থাকলেও আমরা সংবরণ করেছিলাম। সেই সংযমকেই আজ দুর্বলতা ভাবা হচ্ছে। আমরা যদি ক্ষমা করে ভুল করে থাকি, তাহলে আর সেই ভুল করব না।”
ভারত ও ভিনদেশি স্বার্থ রক্ষাকারীদের প্রতিও হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন,
“দেশের রাজনৈতিক লড়াই যারা দেশের বাইরে নিয়ে গেছে, তাদের জানিয়ে দিতে চাই—লড়াই যদি দেশের বাইরে যায়, মুক্তির লড়াইও দেশের বাইরে যাবে। আমরা নিরাপদ না থাকলে আমাদের শত্রুরাও নিরাপদে থাকতে পারবে না।”
ভারতে অবস্থানরত সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বক্তব্যের প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন,
“ভারত থেকে সন্ত্রাসের উসকানি দিয়ে আমার ভাইয়ের ওপর গুলি চালানো—এটা আমরা বরদাশত করব না।”
শেষে তিনি জুলাই অভ্যুত্থানের চেতনাকে শক্তিশালী করতে জেলা পর্যায়ে সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড জোরদারের আহ্বান জানান এবং বলেন, গঠনমূলকভাবে জুলাইয়ের শক্তি বাড়াতে পারলে ভবিষ্যতের সব লড়াই মোকাবিলা করা সম্ভব হবে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: