
বাংলাদেশের ফুটবলের সোনালি সময়ের অন্যতম সেরা মিডফিল্ডার তিনি। ১৯৭৮ থেকে ১৯৯০ পর্যন্ত টানা খেলেছেন জাতীয় দলে। চট্টগ্রাম আবাহনী দিয়ে শুরু। এরপর খেলেছেন রহমতগঞ্জ, ঢাকা আবাহনী ও ঢাকা মোহামেডানে। জাতীয় দলের সাবেক অধিনায়ক আশীষ ভদ্র কাল বিকেলে চট্টগ্রাম ক্লাবে খুলে দিলেন মনের অর্গল
* চট্টগ্রাম আবাহনীর পরাজয়ে নিশ্চয়ই কষ্ট পেয়েছেন?
আশীষ ভদ্র: এটি আমার প্রাণের ক্লাব। প্রিয় দলের হার দেখতে কার ভালো লাগে? আমারও খারাপ লেগেছে। আসলে কোরিয়ার এই দলটা খুব শক্তিশালী। আমরা যখন খেলতাম তখনো ওরা কঠিন ছিল। কোরিয়ার চতুর্থ স্তরের চ্যাম্পিয়ন বলে হয়তো সাধারণ দল হিসেবেই নিয়েছি আমরা। কিন্তু পোচন শ্রেয়তর দল হিসেবে জিতেছে।
* শেখ কামাল গোল্ডকাপে বাংলাদেশের তিন ক্লাবই এখন দর্শক। বিষয়টিকে কীভাবে দেখছেন?
আশীষ: আমাদের ফুটবলের বেসিকই এখন দুর্বল। আগের চেয়ে সুযোগ-সুবিধা বেড়েছে, কিন্তু মান বাড়েনি। শুনেছি, ক্লাবগুলো ধারের ফুটবলার নিয়ে খেলতে এসেছে। এটা তো অ্যাথলেটিকস না যে, দৌড় দিলাম আর ১০০ মিটার জিতে গেলাম। আমাদের অ্যাটাকিং ফুটবলার নেই। আগে যেমন সালাউদ্দিন, এনায়েত, চুন্নু ছিল, এখন বিদেশিরা সেই জায়গা দখল করেছে। কিন্তু ওরাও অত ভালো না। এ জন্যই এমন পরিণতি।
* জাতীয় দলের মাঝমাঠে এখন ভালো ফুটবলারের অভাব। এটা কেন?
আশীষ: আমাদের পাইপলাইনে কোনো ফুটবলার নেই। জুনিয়র ফুটবল, স্কুল ফুটবল, শেরেবাংলা কাপ হচ্ছে না। এখন বি-লিগ হচ্ছে, ২৫ জন ফুটবলার নিয়ে জাতীয় দলের ক্যাম্প হচ্ছে। এভাবে হোসে মরিনহোকে আনলেও উন্নতি হবে না।
* বাংলাদেশ ইদানীং ভুটান-নেপালের কাছে হারছে। আপনাদের সময় তো এটি কল্পনাও করা যেত না...
আশীষ: স্বাভাবিকভাবেই খারাপ লাগে এসব দেখে। কাল (পরশু) দারুণ একটা সেমিফাইনাল হলো। কিন্তু দর্শক আসেনি। আমাদের সময় বিকেল চারটায় খেলা শুরু হতো। অথচ বেলা ১১টায় গ্যালারি ভরে যেত। এখন সন্ধ্যায় বাজি পোড়াতে হচ্ছে, যাতে দর্শক আসে। এতেও দর্শক টানা যাচ্ছে না।
* খেলোয়াড়ি জীবন নিয়ে কোনো আক্ষেপ...
আশীষ: সত্যি বলতে কী চট্টগ্রাম আবাহনীর সঙ্গে একটা ভুল-বোঝাবুঝি হয়েছে। দূরত্ব তৈরি হয়েছে। তাই এখন ওখানে যাই না। কিন্তু আমার রক্তে চট্টগ্রাম আবাহনী। এমনও হয়েছে, আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচের আগে রাতে এসে এখানে খেলে গেছি। সকালের ফ্লাইটে এসে রাতের ফ্লাইটে ঢাকায় ফিরেছি। কিন্তু এখন ওরা সাবেকদের মূল্যায়ন করে না।
* আবাহনী-মোহামেডান দ্বৈরথ এখনো কতটা স্মৃতিকাতর করে তোলে?
আশীষ: তখনকার আবাহনী-মোহামেডান সংস্কৃতি বলে বোঝানো যাবে না। দেশ দুই ভাগ হয়ে যেত। মাঠে প্রচুর স্লেজিং হতো। মোহামেডানই সেটা বেশি করত। স্লেজিং করতে করতেই একসময় ক্লান্ত হয়ে পড়ত ওরা।
* কার সঙ্গে আপনার বোঝাপড়া সবচেয়ে ভালো ছিল?
আশীষ: আমাদের সময়টা ছিল সোনালি প্রজন্ম। ওই সময় আবাহনীতে খেলত বাবুল, জনি, টুটুল, পাকির আলী, মনি, চুন্নু, আনোয়ার, সালাউদ্দিন। আমি বেশি স্বচ্ছন্দে খেলতাম খোরশেদ বাবুলের সঙ্গে। তবে আসলাম আমাদের জন্য বেশি কার্যকর ছিল। আমি গোলকিপার ও ডিফেন্ডারের মাঝে বল ছেড়ে দিলে ও কানেক্ট করত। ও খুব শক্তিশালী স্ট্রাইকার ছিল। হেডিংও ভালো ছিল।
* আপনার জায়গায় পরের প্রজন্মের কাকে দেখতে ভালো লাগত?
আশীষ: মাঝমাঠে আমার পছন্দ ছিল আরমান মিয়াকে। এই প্রজন্মে মামুনুল খুব ভালো খেলোয়াড়। বাঁ পায়ে ও খুব ভালো খেলে।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: