ঢাকা | রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

বাংলাদেশের সাহিত্য সমৃদ্ধ: স্লোভেনিয়ার কবি

Akbar | প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০১৯ ১২:২১

Akbar
প্রকাশিত: ৬ এপ্রিল ২০১৯ ১২:২১

ডেস্ক: স্লোভেনিয়ার কবি গ্লোরিয়ানা ভিবার। অমর একুশে বইমেলার সময় বাংলাদেশ ঘুরে গেলেন। ‘নৈঃশব্দ্যের কাছাকাছি’ নামে স্লোভেনিয়া থেকে তার বাংলা-স্লোভেন দ্বিভাষিক কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে ঢাকায় এসেছিলেন তিনি। বইটির প্রকাশক সাহিত্য সংস্কৃতির ওয়েবজিন বা অনলাইন পত্রিকা ‘তীরন্দাজ’।

স্লোভেনিয়ার রাজধানী ইউবিয়ানা ও ঢাকা থেকে বইমেলার সময় একই দিনে প্রকাশিত হয় এটি। এই দ্বিভাষিক গ্রন্থটির কবিতাগুলো স্লোভেন থেকে বাংলায় অনুবাদ করেছেন রাজিয়া সুলতানা।

ভূমিকা লিখেছেন ও সম্পাদনা করেছেন কবি মাসুদুজ্জামান। বলা বাহুল্য, ভিবারই হচ্ছেন স্লোভেনিয়ার প্রথম কবি যিনি ঢাকায় এসেছেন। ভিবারের এই ঢাকার বইমেলায় আগমন এবং ওই কাব্যগ্রন্থের প্রকাশনা উপলক্ষে লেখক-সাংবাদিক সাইফ বরকতুল্লাহ তার মুখোমুখি হন। এখানে তাদের আলাপচারিতার চুম্বক অংশ তুলে ধরা হল।

কবিতা লেখা শুরু কীভাবে?

গ্লোরিয়ানা ভিবার: যুগোস্লাভিয়ায় যুদ্ধ শুরু হয়েছে। চার বছরের মেয়ে গ্লোরিয়ানা ভিবারকে একা ফেলে তার বাবা-মা বাড়িছাড়া হলেন। চার বছরের বাচ্চা মেয়েটা অদ্ভুত এক কাণ্ড করল। দিনভর সে বাড়ির গ্রন্থাগারে রক্ষিত শত শত বই ঘাঁটা শুরু করল। অক্ষরের সঙ্গে পরিচিত না হলেও এক একটা শব্দের ভিন্ন ভিন্ন রঙকে সে শনাক্ত করতে সক্ষম হল! তার মনে হল এক একটা শব্দ এক একটা বর্ণের। বর্ণ তার কাছে নানা রঙের বৈভব নিয়ে হাজির হল।
একের পর এক শব্দকে বইয়ের পাতা থেকে কেটে কেটে ছোট্ট আমি সেগুলোকে পাশাপাশি বসিয়ে শব্দগুলোর ভাষা বুঝতে শিখলাম। শব্দগুলোর কম্পনকেও ধরতে শিখলাম! শব্দের রং চিনতে চিনতে স্বপ্নের ঘোরে আমি কবিতার লাইনও পেয়ে গেলাম। এই স্বল্প জীবনেই আমি গ্লোরিয়ানা ভিবার হয়ে উঠেছি স্লোভেনিয়ার এক কবি। আমার প্রকাশিত কবিতার বই তিনটা। কিন্তু আমার কবিতা সবমিলেয়ে অনূদিত হয়েছে বাইশটি ভাষায়।
প্রথম কবিতা কবে প্রকাশিত হয়?

গ্লোরিয়ানা ভিবার: যখন আমার বয়স আট বছর। তখন আমি স্কুলে পড়ি। একদিন আমার স্কুলশিক্ষক আমাকে নোটিশ বোর্ডে দেখালেন স্কুল ম্যাগাজিনে লেখা প্রকাশের জন্য লেখা আহ্বান করা হয়েছে। আমি একটা কবিতা জমা দিই। পরে সেটি প্রকাশিত হয়।

সেই কবিতাটির বিয়ষবস্তু কী ছিল, মনে পড়ে?

গ্লোরিয়ানা ভিবার: আমার পরিবার, দেশ, যুদ্ধ এবং প্রকৃতির বিভিন্ন অনুষঙ্গ। এরপর নিয়মিত বিভিন্ন স্থানীয় পত্রিকা এবং স্কুল ম্যাগাজিনে আমার কবিতা প্রকাশিত হতে থাকে।

কথাটা পুরনো তবু জিজ্ঞেস করি, আপনি অন্য কিছু না লিখে কবিতা কেন?

গ্লোরিয়ানা ভিবার: কবিতা এমন একটি মাধ্যম যা দিয়ে মানুষের সঙ্গে সহজেই কমিউনিকেট করা যায়। মানুষের সঙ্গে সম্পর্ক স্থাপন করা যায়। আইডিয়া শেয়ার করা যায়। নিজের স্বাধীন সত্বাকে সবার মাঝে ছড়িয়ে দেওয়া যায়।

এই প্রথম বাংলাদেশে এলেন। স্লোভেনিয়া থেকে বাংলাদেশে আসা প্রথম লেখক আপনি। তো বইমেলা কেমন দেখলেন?

গ্লোরিয়ানা ভিবার: যখন আমি প্রথম বইমেলায় প্রবেশ করলাম, দেখলাম প্রচুর মানুষের সমাগম, যা আমাকে দারুণভাবে উৎসাহিত করলো। বিশেষ করে এখানকার মানুষের যে সাংস্কৃতিক বোধ ও ঐতিহ্য, লেখক, পাঠকের এরকম মিলনমেলা সত্যিই অসাধারণ। আমি খুবই অনুপ্রাণিত।

বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বইমেলা দেখেছেন। অমর একুশে বইমেলাও দেখলেন। কী পার্থক্য মনে হল আপনার কাছে?

গ্লোরিয়ানা ভিবার:: আমি বিশ্বের কয়েকটি বইমেলা দেখেছি। ফ্রাঙ্কফুট বইমেলার কথা নিশ্চয়ই জানেন। কিন্তু একুশে বইমেলার মতো এত দীর্ঘদিন ধরে চলা বইমেলা বিশ্বের কোথাও হয় না। এই একমাস ধরে লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের যে এত উদ্যম, সত্যিই তুলনাহীন। আরেকটি বিষয় ভালো লেগেছে, এখানকার বইমেলায় প্রচুর মানুষের অংশগ্রহণ- যা গর্ব করার মতো।

বাংলাদেশের কোনো লেখকের বই পড়েছেন?

গ্লোরিয়ানা ভিবার: আমি পিএইচডি গবেষণার সময় বাংলা সাহিত্যের খোঁজ নিয়েছি। এছাড়া ইন্টারনেটে সার্চ করে খোঁজখবর রাখি বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কে। বিশেষ করে বাংলাদেশের সাহিত্য সম্পর্কে জেনেছি রাজিয়া সুলতানা ও অধ্যাপক কবি মাসুদুজ্জামানের কাছে। বাংলা সাহিত্য নিয়ে অনেক কথা হয়েছে তাদের সঙ্গে। বাংলা একাডেমি থেকে নির্মলেন্দু গুণের ইংরেজিতে অনূদিত কবিতার বই কিনেছি। বাংলাদেশের ইতিহাস ও ভাষা আন্দোলনের উপরও ইংরেজিতে লেখা সংকলন কিনেছি দেশে ফিরে পড়ব বলে। ধারণা হয়েছে যে, বাংলাদেশের সাহিত্য অনেক সমৃদ্ধ।

স্লোভেনিয়ায় কী বাংলাদেশের সাহিত্যের কোনো বই অনূবাদ করার কাজ হচ্ছে?

গ্লোরিয়ানা ভিবার: আপনি জানেন যে, ‘নৈঃশব্দ্যের কাছাকাছি’ নামে আমার একটি কবিতার বই বাংলায় অনূদিত হয়ে প্রকাশিত হয়েছে। এতে বাংলায় অনূদিত ৪১টি কবিতা রয়েছে। কবিতাগুলো বাংলায় অনুবাদ করেছেন মার্কিন প্রবাসী কবি রাজিয়া সুলতানা। ভূমিকা লিখেছেন ও সম্পাদনা করেছেন প্রাবন্ধিক কবি ও অনুবাদক মাসুদুজ্জামান। বইটি আমি বায়ান্নোর ভাষা শহীদদের উৎসর্গ করেছি। ভাষা আন্দোলনের মতো ঘটনা, ভাষার জন্য প্রাণবিসর্জন সত্যি এক বিরল ঘটনা। আপনারা সেই ঐতিহ্য বহন করছেন। মাতৃভাষার প্রতি আপনাদের মমত্ববোধ আমাকে বইটি ভাষা-শহীদদের উৎসর্গ করতে অনুপ্রাণিত করেছে।

সাধারণত আপনার কবিতার বিষয়বস্তু কী ধরনের, একটু ধারণা দেবেন?

গ্লোরিয়ানা ভিবার: প্রতিদিনের জীবনযাপন, সমাজ-বাস্তবতা এই হচ্ছে আমার কবিতার বিষয়আশয়। একটু দর্শনাশ্রিত বলতে পারেন। সাধারণ মানুষের সংগ্রামকেও কবিতায় ফুটিয়ে তোলার চেষ্টা করি।

আগামীতে আপনার কী বই আসছে?

গ্লোরিয়ানা ভিবার: আগামীতে আমার ছয়শ’ কবিতা নিয়ে একটি গ্রন্থ বের হওয়ার কথা রয়েছে।

বাংলাদেশ সম্পর্কে কী ধারণা নিয়ে যাচ্ছেন?

গ্লোরিয়ানা ভিবার: অসাধারণ একটি দেশ ও এর মানুষজন, কবি লেখক। ‘আবার আসিব ফিরে’- সামনের বইমেলাতেই আবার আসছি।

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: