ঢাকা | রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১
শ্রমিকের বকেয়া বেতন আদায়ের দাবী, নিউজ শিরোনামে দেই, আমাদের কারো বেতন ১২ মাস বাকী।

আমাাদের অধিকার আমরা ভূলে গেছি ! পথই পথ চেনাবে.......

কাইসার রহমানী | প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১০

কাইসার রহমানী
প্রকাশিত: ২৮ এপ্রিল ২০১৯ ০১:১০

পথই পথ চেনাব


কাইসার রহমানী :

গল্পটা আমার, কিন্তু কষ্টটা আমাদেরই মনে হয়। চার বছর আর ছয় বছর করে প্রায় ১০ বছর দুটি টেলিভিশনে সাংবাদিকতা করলাম। সংবাদের খোঁজে ছুটেছি দিনরাত, ৮ ঘন্টার জায়গায় ১৪ ঘন্টা। খেয়ে, আধপেটা খেয়ে আবার না খেয়েও নিউজের রান ডাউনে দিয়েছি সর্বোচ্চটা। অনেকের মার খেয়েছি, গালি পেয়েছি আবার সম্মানও পেয়েছি।

আমাদের জীবনটা এমনই, প্রাইম নিউজে নিউজ জীবন বাজি রেখে ধরিয়েছি। কিন্তু প্রাইম টাইমে বেতনের টাকাটা দশ বছরে কখনো পাইনি বলে, বাড়ির মালিক শুয়োরের বাচ্চা বলে বাসা ছাড়তেও বলেছে, এ অভিজ্ঞতাও আছে অনেকেরই।

আমরা বাসা ছেড়ে দি, তারপরো অফিস ছাড়িনা। সব কিছু নিয়ম মেনেই করি। সরকারী ছুটি পাইনা, ওভার টাইম পাইনা, বীমা পাইনি, প্রভিডেন্ট ফান্ড পাইনি, যা যা সুবিধা আছে তার কিছুই পাইনি। অল্প বেতন আমরা পাই, তাও অনেক দেরিতে। তারপরো কোন আক্ষেপ নেই। সাংবাদিকতা করে গেছি।

গার্মেন্টস শ্রমিকরা বেতন পাচ্ছেনা। নিউজ নিউজ করতে আমরা নিজেরাই ভুলে গেছি, কত মাসের সেলারী আমাদের পাওনা। অমুক প্রতিষ্ঠানে কর্মী ছাটাই, না না এটা ঠিক নয়, নিউজ করতে করতে ভুলে গেছি আমাদের আগে পরে কতজন ছাটাই হলো। হা হা হা, মজার বিষয় সবাই যখন নিরাপদ জায়গা খোঁজে, আমরা যাই বিপদের সামনে নিউজ জানাবো বলে। কতজন নিজের ভাইযে পঙ্গু হয়ে, চিকিৎসা করাতে পারেনা, তার খবর কেউ রাখেনা।

পেয়েছি অনেক, ঈদের আগে চাকরিচ্যুতি, বকেয়া বেতন না দেয়ার টাল বাহানা। ইনক্রিমেন্টের নামে পরিহাস। অসম্মান আর অনিশ্চিতের জীবনে। যে সময়ে মানুষ স্বপ্নের ফল ঘরে তোলে, সে সময়ে আমরা নিস্ব, পথে।

অনেকেই আছেন, পরিবার পাঠিয়ে দিয়েছে গ্রামের বাড়িতে। অনেকে আছেন, চিকিৎসা করাতে পারেননা মা বাবার, অনেকে আছেন ভাল স্কুল থেকে বাচ্চাকে সরিয়ে নিম্ন স্কুলে ভর্তি করিয়েছেন। কম বেশি এ অবস্থা অনেকেরই।

তবু আমরা ভেঙ্গে পড়িনা। কারণ, সব কিছু বুঝে, জেনে, সৃষ্টি ও সৃজন শীলতার মাদকতায় আমরা এসেছি সাংবাদিকতায়।

তবে একটা জিনিস জানতে ইচ্ছা করে কত টাকা ব্যবসা হলে, মালিকরা বলেন ব্যবসা হলো। কাউকেতো গরীব হতে দেখলাম না। দিনকে দিন ধনী হচ্ছেন, কিন্তু ব্যবসা নেই বলে, সাংবাদিকদের চাকরিচ্যুতি। তাও বড় অসময়ে।

পথে পথে পথ চেনাবে। কোন কিছুই নষ্ট হবার নয়। নষ্ট থেকেই আবার জন্ম নেবে সৃষ্টির শক্তি। পথেই থাকবো, না হলে পথযে চলে যাবে বেপথে। আর সাংবাদিকরাই পথকে পথ দেখায়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: