ঢাকা | বুধবার, ২১ মে ২০২৫, ৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২
শিশু সজীবের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া

নেত্রকোনায় শিশু সজীবকে বলাৎকারের পর গলা কেটে হত্যা করে রবিন

gazi anwar | প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০১৯ ২৩:২০

gazi anwar
প্রকাশিত: ২৪ জুলাই ২০১৯ ২৩:২০

নেত্রকোনায় শিশু সজীবকে বলাৎকারের পর গলা কেটে হত্যা করে রবিন। প্রতিবেশীর ছেলে সজীবকে ফুসলিয়ে নির্মাণাধীন ভবনের তিনতলার একটি কক্ষে নিয়ে বলাৎকার করা হয়। পরে ভয় ও আতঙ্কে গলা কেটে হত্যা করে শিশুটির মাথা ব্যাগে নিয়ে মদ খেতে যায় রবিন।

শিশু সজীবের ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসব তথ্য পাওয়া গেছে বলে জানিয়েছেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়া। নেত্রকোনা পুলিশ সুপার কার্যালয়ে বুধবার দুপুরে মতবিনিময় সভায় এসব তথ্য জানান তিনি।

ডিআইজি আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, পদ্মা সেতুতে মাথা লাগবে এটা গুজব। যারা এ ধরনের গুজব ছড়াচ্ছে তারা দেশে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি সৃষ্টি করতে চায়। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে গুজব সৃষ্টিকারীদের আইনের আওতায় আনা হবে।

গত বৃহস্পতিবার দুপুরে (১৮ জুলাই) সজীবের (৭) কাটা মাথা ব্যাগে নিয়ে ঘোরাফেরা করার সময় নেত্রকোনা শহরের নিউ টাউন এলাকায় জনতার হাতে ধরা পড়ে গণপিটুনিতে নিহত হয় রবিন।

নিহত রবিন শহরের পূর্ব কাটলি এলাকার এখলাছুর রহমানের ছেলে। সে মাদকাসক্ত ছিল। গলা কেটে হত্যার শিকার শিশু সজীব একই এলাকার রিকশাচালক রইছ উদ্দিনের ছেলে। এ ঘটনায় থানায় দুটি মামলা হয়েছে। গত বৃহস্পতিবার গভীর রাতে নেত্রকোনা মডেল থানায় এ দুটি মামলা হয়।

শিশু সজীব মিয়া হত্যা মামলার বাদী বাবা রইছ উদ্দিন। গণপিটুনিতে নিহত রবিন মিয়ার মামলায় অজ্ঞাতদের আসামি করা হয়। রবিনকে হত্যার ঘটনায় নেত্রকোনা মডেল থানা পুলিশের এসআই রফিক বাদী হয়ে মামলা করেন।


বুধবার জেলা পুলিশ সুপারের সম্মেলন কক্ষে পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী বলেন, এটি একটি বিচ্ছিন্ন ঘটনা। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে এসেছে শিশু সজীবকে বলাৎকারের পর হত্যা করা হয়। তবে পারিবারিক দ্বন্দ্ব থেকেও এ হত্যাকাণ্ড ঘটতে পারে। এ নিয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকসহ বিভিন্ন মাধ্যমে ছেলেধরা ও পদ্মা সেতুতে মাথা দরকার গুজব ছড়ানোর কারণে জনমনে বিভ্রান্তির সৃষ্টি হয়েছে। যারা এমন মনগড়া ও অসত্য তথ্য দিয়ে প্রচারণা চলানোর চেষ্টা করবে তাদের বিরুদ্ধে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে মামলা হবে।

পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরী আরও বলেন, রবিন মিয়া মাদকাসক্ত ছিল। তার নামে একাধিক মামলা রয়েছে। রবিনের জব্দকৃত মুঠোফোন প্রযুক্তি ব্যবহার করে তদন্ত করা হচ্ছে। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, হত্যার আগে শিশু সজীবকে বলাৎকার করে রবিন।

পুলিশ সুপার জয়দেব চৌধুরীর সভাপতিত্বে এতে প্রধান অতিথি ছিলেন ময়মনসিংহ রেঞ্জের অতিরিক্ত ডিআইজি আক্কাস উদ্দিন ভূঁইয়া, পৌর মেয়র নজরুল ইসলাম খান, জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি সীতাংশু বিকাশ আচার্য, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার এসএম আশরাফুল আলম ও অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) মো. ফখরুজ্জামান জুয়েল প্রমুখ।


গত বৃহস্পতিবার দুপুরে শহরের কাটলি এলাকায় রাস্তার পাশে একটি নির্মাণাধীন ভবনের তিনতলার টয়লেটে শিশু সজীবকে গলা কেটে হত্যা করা হয়। এরপর সজীবের মাথা একটি ব্যাগে চকপাড়া সুইপার কলোনিতে নিয়ে যায় রবিন। সেখানে মদ খেতে গেলে স্থানীয়দের নজরে পড়ে বিষয়টি। এ সময় রবিন দৌড়ে পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা ধাওয়া করে নিউটাউনের অনন্তপুকুর পাড়ে তাকে ধরে গণপিটুনি দেয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়।

এদিকে শহরের উত্তর কাটলি এলাকায় শিশু সজীব ও রবিন মিয়াদের ভাড়া বাসায় গিয়ে দেখা যায় উভয় পরিবারের বাসায় তালা ঝুলছে।

স্থানীয় অন্তত ১৫ জন বাসিন্দার সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, রবিন মিয়ার বাবা এখলাস উদ্দিন কাটলি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা। তিনি পেশায় রিকশাচালক। একসময় এখলাছ উদ্দিন সচ্ছল ছিলেন। তার নিজস্ব বাড়িসহ প্রচুর জায়গা-জমি ছিল। কিন্তু বর্তমানে নিঃস্ব। কয়েক বছর ধরে তিনি ভাড়া বাসায় থাকেন। বর্তমানে রাজু মিয়ার বাসার একটি কক্ষ এক হাজার টাকা ভাড়া নিয়ে ১০ মাস ধরে আছেন। পাঁচ ছেলের মধ্যে রবিন মিয়া সবার বড়। এক ছেলে বিয়ে করে নরসিংদী থাকেন। আরেক ছেলে সিলেটে থাকেন। ছোট দুই ছেলে পায়েল মিয়া ও হাসান মিয়া বাবা-মার সঙ্গে থাকে।


বাড়ির মালিক রাজু মিয়ার স্ত্রী সুফিয়া আক্তার ও প্রতিবেশী সৌকত হোসেন জানান, রবিন মিয়া প্রায় পাঁচ বছর আগে সদর উপজেলার মইষাখালী গ্রামের মারুফা আক্তারকে বিয়ে করে। বিয়ের পর মাদকাসক্ত হয়ে পড়ে। তাদের একটি মেয়েসন্তান রয়েছে। বছর খানেক আগে স্ত্রী রবিনকে ছেড়ে চলে যায়। মাদক সেবনের কারণে রবিনকে তার বাবা চার মাস আগে পুলিশে দিয়েছিলেন। মাস দেড়েক আগে জেল খেটে বাইরে আসে রবিন। মাসখানেক আগে তাকে শিকলে বেঁধে পুলিশে খবর দিতে যান বাবা। এ সময় পালিয়ে যায় রবিন। এরপর থেকে আর বাড়ি আসেনি। এরই মধ্যে শিশু সজীবকে হত্যা করে রবিন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: