ঢাকা | মঙ্গলবার, ২২ এপ্রিল ২০২৫, ৯ বৈশাখ ১৪৩২

দাবি মানার পরও আন্দোলনের পেছনে ‘ছাত্রদের আবেগ পুঁজি করে ফায়দা লোটার মহল’-তথ্যমন্ত্রী

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ১৮:২৮

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৩ অক্টোবর ২০১৯ ১৮:২৮

 

ঢাকা: রোববার, ১৩ অক্টোবর ২০১৯

তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ বলেছেন, ‘বুয়েটে আবরার হত্যাকান্ডের ঘটনায় ছাত্রদের আবেগ পুঁজি করে একটি মহল ফায়দা লুটতে চায়। আর সেকারণেই দাবি মানার পরও আন্দোলনের কথা তোলা হচ্ছে।’

রোববার দুপুরে ঢাকায় সচিবালয়ে নিজ দপ্তরে সাংবাদিকদের সাথে মতবিনিময়কালে এ সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে মন্ত্রী বলেন, ‘বুয়েটে যে ঘটনাটি ঘটেছে, তা অত্যন্ত ন্যাক্কারজনক, নৃশংস, নিন্দনীয়। কিন্তু বাংলাদেশে একটি মহল আছে, যারা দেশ অস্থিতিশীল হলে ফায়দা লুটতে পারে। আমরা লক্ষ্য করছি ছাত্রদের আবেগ অনুভূতিকে পুঁজি করে বিএনপি এবং তাদের মিত্রদের মহল ছাত্র অঙ্গণকে অশান্ত রেখে দেশকে অশান্ত করার দুরভিসন্ধি চালাচ্ছে। ছাত্রদের মধ্যে তারা তাদের এজেন্ট তৈরি করছে, যে কারণে দাবি মেনে নেয়ার পরও আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা আসছে।’

‘স্বাভাবিকভাবে প্রশ্ন জাগে, যেখানে সমস্ত ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে, সেখানে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা কেন?’ -উল্লেখ করে তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আমরা লক্ষ্য করছি, সেখানে শিবির সক্রিয় হয়েছে, শিবির হচ্ছে রগ-কাটা বাহিনী। যখন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের সভাপতি ছিলাম, শিবির আমাকে দুইবার হত্যাচেষ্টা চালিয়েছিল। আমি দুইবার মৃত্যুর হাত থেকে, শিবিরের হাত থেকে ফিরে এসেছি।’

মন্ত্রী বলেন, ‘সেখানে (বুয়েটে) শিবির সক্রিয় হয়েছে, ছাত্রদল সক্রিয় হয়েছে। স্বনামে নয়, বেনামে সক্রিয় হয়েছে। তারা বিষয়টাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার জন্য চেষ্টা চালাচ্ছে। আমি ছাত্রদের আবেগের সাথে সম্পূর্ণ একমত পোষণ করে এমন ঘটনা যেন আর না হয়, সেজন্য তাদের প্রতিবাদের সাথেও একমত পোষণ করে অনুরোধ জানাবো, কেউ যাতে এটিকে পুঁজি করে রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিল করতে না পারে, সেজন্য আমাদের সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।’

ড. হাছান বলেন, ‘আপনারা জানেন, আমরা প্রথম থেকেই এ ঘটনার প্রতিবাদ করেছি এবং কেউ দাবি তোলার আগেই সরকার এ ব্যাপারে কঠিন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। পুলিশ কোনো মামলা হওয়ার আগেই ১০ জন আসামীকে গ্রেপ্তার করেছে। এখন পর্যন্ত ১৯ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সরকার বা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ ছাত্রদের সব দাবি মেনে নিয়েছে। এবং বালাদেশের ইতিহাসে এত ত্বরিৎ গতিতে ব্যবস্থা নেয়া হয়নি। আপনাদের নিশ্চয়ই মনে আছে, বুয়েটে ছাত্রদলের দুই গ্রুপের ক্রসফায়ারে বিশ্ববিদ্যালয়ের মেধাবী ছাত্রী সনি যখন হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছিল, পুলিশ টিয়ার গ্যাস ছুঁড়ে হত্যাকান্ডের সাথে যুক্তদেরকে পালিয়ে যাবার সুযোগ করে দিয়েছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে মহসীন হলের ছাত্র মাহমুদ মামুনকে হত্যা করে যে পানির ট্যাংকের মধ্যে ফেলে রাখা হয়েছিল এবং বেশ কয়েকদিন ধরে সেই পানি ছাত্ররা খেয়েছে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রদলের কারণে অপরাপর হত্যাকান্ডের শিকার হয়েছে চুন্নু, বশিরেরা। এবং এই সমস্ত হত্যাকান্ডের পর বিএনপি কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করে নাই। সাংগঠনিকভাবে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি এবং প্রশাসনিকভাবেও যে ধরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করার কথা ছিল কিন্তু তা করেনি।’

‘বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি সাময়িক বন্ধ পরিস্থিতি উত্তরণে সহায়ক’

বুয়েটে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ করা বিষয়ে মন্তব্য চাইলে মন্ত্রী বলেন, ‘সাময়িকভাবে যেটি বন্ধ হয়েছে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, তা পরিস্থিতি উত্তরণের ক্ষেত্রে সহায়ক ভূমিকা রাখবে। তবে দীর্ঘদিন বন্ধ থাকলে, নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। তবে এটি একান্তই বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনের ব্যাপার। তারা সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এবং ছাত্রদেরও সেই দাবি ছিল।’

তবে দেশে ছাত্র রাজনীতি বন্ধ বা নিষিদ্ধ করা সমীচিন হবে বলে মনে করেন না মন্ত্রী। তিনি বলেন, বাংলাদেশে অনেক অর্জনের সাথে ছাত্রদের আন্দোলন, ছাত্র সংগঠন জড়িয়ে আছে। আজকে যারা প্রতিষ্ঠিত নেতা তারা বেশির ভাগই এসেছেন ছাত্র রাজনীতি থেকে। সুতরাং ছাত্র রাজনীতি একেবারেই বন্ধ করে দিলে ভালো হবে না।’

‘বিএনপি’র ভারতবিরোধী রাজনীতির পুরোনো ট্যাবলেট অকেজো’

ভারতের সাথে সম্পাদিত সাম্প্রতিক চুক্তি বিষয়ে বিএনপি’র বিরূপ মন্তব্য সংক্রান্ত প্রশ্নের জবাবে তথ্যমন্ত্রী ড. হাছান বলেন, ‘বিএনপি’র রাজনীতির মূল প্রতিপাদ্য হচ্ছে ভারত বিরোধিতা। তবে এই পুরোনো ট্যাবলেট আর কাজ করবে না।’

‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বৃহৎ প্রতিবেশি ভারতের সাথে সম্পর্ককে যেমন নতুন উচ্চতায় নিয়ে গেছেন, একইসাথে তাদের কাছ থেকে স্বার্থে আদায় করার ক্ষেত্রেও অতীতের সমস্ত রেকর্ড ভঙ্গ করেছেন’ উল্লেখ করে
মন্ত্রী বলেন, ‘ভারত সফরে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বাংলাদেশের স্বার্থে, বাংলাদেশের অর্থনীতির স্বার্থে অনেকগুলো সমঝোতা স্মারক এবং চুক্তি স্বাক্ষর করেছেন। প্রত্যেকটা চুক্তি বা সমঝোতা স্মারকের মাধ্যমে বাংলাদেশের স্বার্থ শুধু সংরক্ষণ নয়, বরং ভারতের কাছ থেকে আমরা স্বার্থ আদায় করেছি।’

তথ্যমন্ত্রী বলেন, ‘আপনারা অতীতেও দেখেছেন ৬৮ বছরের পুরোনো ছিটমহল সমস্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বেই এই সমস্যার সমাধান হয়েছে। আন্তর্জাতিক আদালতে মামলার মাধ্যমে প্রায় বাংলাদেশের সমান আয়তনের সমুদ্রসীমা বিজয়ের ক্ষেত্রে একচুলও ছাড় ভারতকে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেননি।’

‘সিঙ্গাপুর, নেদারল্যান্ড সমৃদ্ধ কেন ? বন্দরকে পৃথিবীর দেশগুলোর জন্য খুলে দেয়ার জন্য’ উল্লেখ করে আওয়ামী লীগের প্রচার সম্পাদক বলেন, ‘পৌনে দুইশত বছর আগে যখন আমাদের দেশে চট্টগ্রাম বন্দর গড়ে তোলা হয়, তখন মুল উদ্দেশ্য ছিল ভারতের পূর্বাঞ্চলের ব্যবসা বাণিজ্য। এখন চট্টগ্রাম বন্দর ভারত ব্যবহার করলে আমাদের রয়ালিটি দিতে হবে। তাদের যত পণ্য আসবে তার এবং পরিবহনের জন্যও আমাদের রয়ালিটি দিতে হবে। আমরা আয় করবো। যেভাবে সিঙ্গাপুর নেদারল্যান্ড ও অন্যান্য দেশগুলো বন্দর থেকে আয় করে. সেভাবে আমরা আয় করবো। চালনা বন্দর ব্যবহার করলে আমরা সেখান থেকে আয় করবো, মংলা বন্দর ব্যবহার করলে সেখান থেকে আয় করবো। সহজ বিষয়টা বিএনপি নেতারা যে বোঝেন না তা নয়, বোঝেন। বুঝেও জনগণকে বিভ্রান্ত করার জন্য কথা বলেন।’

রাডার চুক্তি প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘আমি অত্যন্ত দুঃখিত যে কয়েকটি সংবাদ মাধ্যমে এই নিয়ে ভুল ও অসত্য সংবাদ পরিবেশিত হয়েছে। প্রকৃতপক্ষে চুক্তি অনুসারে ভারত ২০টি রাডার কেনার জন্য গ্রান্ট দিবে অর্থাৎ এককালীন টাকা, যা ফেরত দিতে হবে না। সেই গ্রান্ট থেকে বাংলাদেশের কোস্ট গার্ড ২০টি রাডার কিনবে। কারণ কোস্ট গার্ডের ভালো রাডার নেই। আমাদের সমুদ্রসীমায় থাইল্যান্ডের জাহাজ আসে, মায়ানমারের জাহাজ আসে, দেশের মাছ চুরি করে নিয়ে যায়, ভারত থেকেও আসে, আসে না যে, তা নয়। এদের ধরার জন্য আমাদের ভালো রাডার সিস্টেম নাই, সেই রাডার সিস্টেম উন্নত করার জন্য এটির মালিকানা আমাদের থাকবে। এটির পরিচালনাও আমরা করবো। সুতরাং এটি নিয়ে যে মিথ্যা বক্তব্য দেয়া হচ্ছে, সেটি প্রচন্ড ক্ষোভের উদ্রেককারী।’

তথ্যমন্ত্রী এসময় ফেনী নদীর পানি প্রবাহের দুইশত ভাগের এক ভাগ পানি ছোট্ট শহর সাবরুমে খাবার পানি হিসেবে ব্যবহার এবং আমদানিকৃত ও উপজাত হিসেবে প্রাপ্ত এলপিজি গ্যাস ‘ভ্যালু-এড’ করে ভারতে রপ্তানি আমাদের অর্থনীতির জন্য সহায়ক হবার বিষয়ও ব্যাখ্যা করেন।

-মীর আকরাম PRO



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: