রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষকে পুকুরে ফেলে দেয়ার ঘটনার প্রতিবাদে প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা রোববার রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে মানববন্ধন করেছেন।
এছাড়া অধ্যক্ষের করা মামলায় রোববার সকালে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।
কী হয়েছিল রাজশাহী পলিটেকনিকে?
শনিবার সন্ধ্যে থেকে সামাজিক মাধ্যমে ভাইরাল হয় একটি ভিডিও, যাতে দেখা যায় কয়েকজন ছেলে একজন মানুষকে টেনে-ঠেলে-ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দিয়ে হেটে চলে যাচ্ছে।
পরে জানা যায়, ভিডিওটিতে যাকে দেখা যাচ্ছে তিনি রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ।
তিনি বলছেন, তাকে যারা পুকুরে ফেলে দিচ্ছে তারা পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ছাত্রলীগ নেতা ও কর্মী।
এক মিনিট ১৮ সেকেন্ড স্থায়ী ভিডিওটি রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের প্রধান ফটকের সামনের সিসিটিভি ফুটেজ এবং পরে অধ্যক্ষের কক্ষে সাংবাদিক সম্মেলনের প্রস্তুতিকালীন ফুটেজ বলে নিশ্চিত করেছেন অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ।

ফুটেজের শুরুতেই দেখা যায়, পলিটেকনিক চত্বরের পুকুর পাড় ঘেঁষা রাস্তা দিয়ে অধ্যক্ষ ফরিদ উদ্দীন আহম্মেদ হেটে আসতে দেখা যায়।
তার পেছন পেছন কয়েকজন ছাত্র হেটে আসছেন।
অল্পক্ষণের মধ্যেই দেখা যায় তারা অধ্যক্ষকে হাত ধরে টানছেন কয়েকজন, পেছন থেকে ঠেলছেন কয়েকজন।
কয়েক মূহুর্তের মধ্যেই অধ্যক্ষকে ধাক্কা দিয়ে পানিতে ফেলে দিয়ে হেটে চলে যান ১১জন ছাত্র।
এরপরের ক্লিপে দেখা যায়, ভেজা কাপড়ে পুকুর পাড় ধরে হেটে আসছেন অধ্যক্ষ মিঃ আহম্মেদ।
সর্বশেষ ক্লিপটিতে দেখা যায় অধ্যক্ষ মিঃ আহমেদের কক্ষে সাংবাদিক ও ক্যামেরাম্যানরা কথা বলছেন এবং ছবি তুলছেন।
'মানসিকভাবে দুর্বল এবং ডি-মর্যালাইজড বোধ করছি'
এ ঘটনার পর অধ্যক্ষ মিঃ আহম্মেদ মানসিকভাবে কিছুটা বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছেন।
বিবিসিকে তিনি বলছিলেন, "এ ঘটনায় আমি মানসিকভাবে দুর্বল এবং ডি-মর্যালাইজড বোধ করছি। আমার ভাবতেই কষ্ট হচ্ছে আমার নিজের ছাত্ররা আমার সঙ্গে এমন আচরণ করতে পারে।"
"তাদের কাছে অনৈতিক কিছু তো চায়নি প্রতিষ্ঠান, নিয়মের মধ্যেই থাকতে বলা হয়েছিল তাদের। কিন্তু তারা তা মানেনি।"
ঘটনার শুরু
রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ মিঃ আহম্মেদ বিবিসিকে জানিয়েছেন, ঘটনা ঘটিয়েছে ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠন ছাত্রলীগের কয়েকজন নেতাকর্মী।

তিনি বলেছেন, ক্লাসে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপস্থিতি না থাকায়, ঐ ছাত্রদের পরীক্ষা দিতে দেবার দাবি মানা হয়নি বলে এ হামলা চালানো হয়েছে।
"ক্লাসে প্রয়োজনীয় সংখ্যক উপস্থিতি না থাকায় কয়েকজন ছাত্রকে পরীক্ষার ফরম পূরণ করতে দেয়া হয়নি। তাদের বলা হয়েছিল অভিভাবক সহকারে বিভাগীয় প্রধানের সঙ্গে দেখা করার জন্য। কিন্তু শনিবার সকালে দুইজন ছাত্র আরো কয়েকজনকে নিয়ে আমার কাছে আসে।"
"আমি বলেছি তাদের অভিভাবক সাথে নিয়ে এসে বিভাগীয় প্রধানের সাথে যোগাযোগ করতে। তারা এ সময় উচ্চস্বরে কথা বলতে বলতে বেরিয়ে যায়। পরে আমি দুপুরে নামাজ পড়ে আমার অফিসে যাওয়ার পথে তারা আমাকে ঠেলে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলে দেয়। এরপর তারা পালিয়ে যায়।"
যারা তাকে ধাক্কা দিয়ে পুকুরে ফেলেছে, তাদের অধিকাংশই তার প্রতিষ্ঠানের ছাত্র, তবে দুয়েকজন তার প্রতিষ্ঠানের নাও হতে পারে বলে তিনি জানিয়েছেন।
মিঃ আহম্মেদ জানিয়েছেন, ছাত্রলীগের সঙ্গে তার বিরোধের শুরু ২০১৭ সালে তিনি অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকেই।
পলিটেকনিকের বিভিন্ন প্রশাসনিক ও অন্যান্য সিদ্ধান্তের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে এই বিরোধ বলে জানিয়েছেন তিনি।

তবে, তিনি বলেছেন, "ছাত্রলীগের সবাই হয়ত খারাপ নয়, কিন্তু কতিপয় ছাত্রলীগ নামধারী ছেলের কারণে সবার বদনাম হয়।"
কী করছে পুলিশ?
এ ঘটনায় রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের অধ্যক্ষ মিঃ আহম্মেদ শনিবার রাতে একটি মামলা করেছেন।
রাজশাহীর চন্দ্রিমা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ গোলাম মোস্তাফা বিবিসিকে জানিয়েছেন, মামলার এজাহারভুক্ত আসামি আটজন এবং অজ্ঞাত আসামি ৫০জন।
এদের মধ্যে পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে, এরা সবাই পলিটেকনিকের ছাত্র।
তবে, মূল অভিযুক্ত ব্যক্তি এখনো গ্রেপ্তার হননি বলে জানিয়েছেন মিঃ মোস্তাফা।
তিনি জানিয়েছেন, শনিবার রাত থেকেই পলিটেকনিকে অতিরিক্ত পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে।
পলিটেকনিকে বিক্ষোভ
এ ঘটনার প্রতিবাদে রোববার রাজশাহী পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের শিক্ষক শিক্ষার্থীরা রোববার রাজশাহী-নওগাঁ মহাসড়কে মানববন্ধন করেছেন। এতে বর্তমান শিক্ষার্থীদের সঙ্গে সাবেক শিক্ষার্থীরাও যোগ দেন।
সেই সঙ্গে রোববার পলিটেকনিকের শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করেছেন।
এদিকে, ছাত্রলীগের অভিযুক্ত নেতাকে সংগঠন থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে বলে সংগঠনটি এক বিবৃতিতে জানিয়েছে ।
রাজশাহী পলিটেকনিক ইনস্টিটিউট শহরের একটি প্রাচীন সরকারি বহুমুখী কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, বাংলাদেশ কারিগরি শিক্ষা বোর্ডের অধীনে চার বছর মেয়াদী ডিপ্লোমা-ইন-ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্স পড়ানো হয়।
বিবিসি
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: