
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ প্রযুক্তিতে নূতন নূতন উদ্ভাবন এবং তার যথাযথ ব্যবহার নিশ্চিতের মাধ্যমে সর্বস্তরে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত করতে সংশ্লিষ্ট সকলের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন।
তিনি আজ বিকেলে যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (জেএসটিইউ) তৃতীয় সমাবর্তন অনুষ্ঠানে বক্তৃতাকালে বলেন, ‘যথাযথভাবে প্রযুক্তি ব্যবহার করে চলমান উন্নয়ন ত্বরান্বিত করুন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য রাষ্ট্রপতি বিশ্বব্যাপী তথ্য প্রযুক্তি সম্প্রসারণ বিপ্লবের সঙ্গে প্রতিযোগিতার জন্য দক্ষ জনশক্তি তৈরির ওপরও গুরুত্বারোপ করেন।
রাষ্ট্রপতি বলেন, ‘বিশ্ব দ্রুতগতিতে পরিবর্তন এবং আরো বেশি প্রতিযোগিতামূলক হওয়ায় সময়ের চাহিদা মেটাতে শিক্ষার্থীদের প্রযুক্তিভিত্তিক দক্ষ মানবসম্পদ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। তিনি শিক্ষক, শিক্ষার্থী, গবেষক, অভিভাবক এবং সকল ছাত্র সংগঠনকে পারস্পরিক শ্রদ্ধা এবং জীবনের সর্বক্ষেত্রে সহনশীলতা ও অসাম্প্রদায়িক চেতনা বজায় রাখার আহ্বান জানান।
বিশ্ববিদ্যালয় শুধুমাত্র পাঠদানের কেন্দ্র নয়, বরং তা উচ্চতর শিক্ষা ও গবেষণার পাদপীঠ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা তরুণ প্রজন্মকে যোগ্য ও বিশ্ব নাগরিক হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।
তিনি নতুন প্রজন্মের মধ্যে মানবিক মূল্যবোধ বৃদ্ধি এবং জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আকাঙ্খিত আধুনিক বাংলাদেশ গড়ার ওপরও গুরুত্ব আরোপ করেন।
রাষ্ট্রপতি হামিদ শিক্ষা পাঠ্যক্রমের পাশাপাশি মুক্তচিন্তা, সমসাময়িক চিন্তাভাবনা, সাংস্কৃতিক কার্যক্রম ও বিভিন্ন সৃজনশীল কাজের অনুশীলন করার ওপর গুরুত্ব দেন, বিশ্বমানের জ্ঞান অর্জন করার ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের সহায়ক হয়। সৃজনশীল কার্যক্রমকে শিক্ষার অংশ হিসেবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, আঞ্চলিকতা, উগ্রতা ও অসহিষ্ণুনতা বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তচিন্তার পরিবেশকে ব্যাহত করে।
আচার্য বলেন, ‘আমাদেরকে এমন পরিবেশ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে।’ রাষ্ট্রপতি বলেন, দেশ এখন মাথাপিছু আয়, জাতীয় প্রবৃদ্ধি, নারীর ক্ষমতায়ন, স্যানিটেশন, কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বহুমুখী পদ্মা সেতু নির্মাণ ও বঙ্গবন্ধু স্যাটেলাইটসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে। তিনি বিজ্ঞান শিক্ষা ও আইটি সেক্টরে আন্তর্জাতিক মান অর্জন এবং দেশের সর্বোচ্চ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান থেকে গ্র্যাজুয়েট হিসেবে সর্বোচ্চ ডিগ্রি অর্জনকারীদের সর্বদা সততা ও ন্যায়পরায়নতার পাশাপাশি তাদের ডিগ্রির মর্যাদা রক্ষা, ব্যক্তিগত সম্মানবোধ ও নৈতিকতা সমুন্নত রাখার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রপতি ছাত্র-ছাত্রীদের উদ্দেশে বলেন, ‘দেশের ভবিষ্যৎ তোমাদের ওপর নির্ভরশীল। তোমরা সব সময় দুর্নীতি ও অন্যায়ের বিরুদ্ধে সোচ্চার থাকবে।’
অনুষ্ঠানে নোবেল বিজয়ী প্রফেসর রোবার্ট হিউবার সমাবর্তন বক্তা হিসেবে বক্তৃতা করেন। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান প্রফেসর আবদুল মান্নান, জেএসটিইউ উপাচার্য প্রফেসর ড. মো. আনোয়ার হোসেন অনুষ্ঠানে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন।
স্থানীয় সংসদ সদস্য স্বপন ভট্টাচার্য্য, রিজেন্ট বোর্ড সদস্য প্রফেসর ড. শরীফ এনামুল কবির, ট্রেজারার প্রফেসর শেখ আবুল হোসেন, শিক্ষক সমিতির সভাপতি প্রফেসর ড. আনিসুর রহমান, বিভিন্ন অনুষদের ডিন, ঊর্ধ্বতন রাজনীতিবিদ, রাষ্ট্রপতির সচিব এবং উচ্চপদস্থ সামরিক ও বেসামরিক কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
অনুষ্ঠানে মোট আটজন শিক্ষার্থীকে স্বর্ণ পদক প্রদান করা হয়। এই সমাবর্তনে ৫৭০ জনতক ডিগ্রিধারী রেজিস্ট্রেশন করেন। ২০০৭ সালের ২৫ জানুয়ারি জেএসটিইউ প্রতিষ্ঠিত হয়।
বর্তমানে এই বিশ্ববিদ্যালয়ে ১৯২ জন শিক্ষক ও চার হাজার ২৩৪ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।-খবর বাসসের
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: