odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Monday, 10th November 2025, ১০th November ২০২৫
রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় বাড়ছে বিষধর সাপের উপদ্রব; চার মাসে উদ্ধার ৩৫২টি সাপ, বিশেষজ্ঞদের সতর্ক থাকার পরামর্শ

ঢাকায় বাড়ছে বিষধর সাপের আতঙ্ক: সতর্ক থাকার পরামর্শ

Special Correspondent | প্রকাশিত: ৯ November ২০২৫ ২৩:৩৯

Special Correspondent
প্রকাশিত: ৯ November ২০২৫ ২৩:৩৯

নিউজ ডেস্ক

রাজধানীর বিভিন্ন আবাসিক ও বহুতল ভবন থেকে গত চার মাসে ৩৫২টি সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। যার মধ্যে ৩৪৯টি বিষধর। মোহাম্মদপুর, উত্তরাখান, দক্ষিণখান, কাফরুল, বছিলা, মেরাদিয়া, মিরপুর, আফতাবনগর, আজমপুর নিকেতন, ক্যান্টনমেন্টসহ রাজধানীর নানা এলাকা থেকে সাপ উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধারকৃত সাপগুলোর মধ্যে পদ্মগোখরা, খৈয়া গোখরা, রাসেল ভাইপার উল্লেখযোগ্য। অ্যানিমেল ওয়েলফেয়ার অ্যাসোসিয়েশনের আহ্বায়ক আদনান আজাদ জানান, উদ্ধারকৃত সাপগুলো প্রজননকালীন সময়ে বেশি দেখা যাচ্ছে। সাপ উদ্ধারের পর এরা বনাঞ্চলে অবমুক্ত করা হয়েছে। ঢাকায় সাপে কাটা রোগীদের চিকিৎসার জন্য অ্যান্টিভেনম সরবরাহ সীমিত। বর্তমানে ঢাকা মেডিকেল কলেজ ও স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ মিটফোর্ড হাসপাতালে পর্যাপ্ত অ্যান্টিভেনম আছে। অন্যান্য হাসপাতালে সরবরাহ বা আবেদন ভিত্তিক ব্যবস্থা রয়েছে। সংগঠনটি রাজধানীবাসীর জন্য কিছু সতর্কতা অবলম্বনের পরামর্শ দিয়েছে, যেমন বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখা, আবর্জনা না ফেলা, সাপ দেখা গেলে রেসকিউ টিমে খবর দেওয়া। বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার মতো জনবহুল এলাকায় বিষধর সাপ, বিশেষত গোখরার উপদ্রব বৃদ্ধির পিছনে একাধিক কারণ রয়েছে বলে গবেষক ও উদ্ধারকারী সংস্থাগুলো মনে করছে। প্রধান কারণগুলো হলো:

জলাশয় ও খালবিল ভরাট: দ্রুত নগরায়ণের ফলে ঢাকার খালবিল, নদী ও জলাশয়গুলো ভরাট হয়ে যাচ্ছে। এই অঞ্চলগুলোই ছিল পদ্মগোখরার (Monocled Cobra) মতো জলপ্রেমী সাপের প্রধান আবাসস্থল। বাসস্থান হারানোর ফলে সাপগুলো এখন বাধ্য হয়ে আশ্রয়ের খোঁজে মানুষের বসতি বা ঘরে ঢুকে পড়ছে।

অপরিকল্পিত নগরায়ণ: আগে যেখানে সাপের আবাস ছিল (যেমন: আফতাবনগর, বনশ্রী, উত্তরা, দিয়াবাড়ি এলাকায় জলাশয়) এখন সেসব জায়গায় বহুতল ভবন তৈরি হওয়ায় সাপ তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ হারাচ্ছে।

বৃষ্টির প্রভাব: বাংলাদেশে বর্ষাকালে সাধারণত সাপ বেশি দেখা যায়। কারণ সাপের তৈরি করা গর্তে বৃষ্টির পানি ঢুকে পড়লে তারা শুকনো ও উঁচু স্থানের সন্ধানে মানুষের বাসাবাড়ি বা ভবনে আশ্রয় নেয়।

প্রজনন ঋতু: উদ্ধারকারী সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, এই সময়টি (সাধারণত আগস্ট থেকে অক্টোবর/নভেম্বর) পদ্মগোখরার প্রজননকাল হওয়ায় সাপের সংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং তাদের বেশি দেখা যাচ্ছে।

ইঁদুরের উপস্থিতি: অপরিকল্পিতভাবে উচ্ছিষ্ট খাবার বা ময়লা-আবর্জনা ফেলার কারণে বাসাবাড়ির আশেপাশে ইঁদুরের আনাগোনা বাড়ে। ইঁদুর সাপের প্রিয় খাদ্য হওয়ায় খাদ্যের সন্ধানে সাপ লোকালয়ে ঢুকে পড়ছে এবং পরবর্তীতে বাসাবাড়িতেও আশ্রয় নিচ্ছে।

গাছপালা: বহুতল ভবনে সাপ উদ্ধারের ঘটনা কিছুটা বিস্ময়কর হলেও ধারণা করা হয় ভবনগুলোতে থাকা গাছ, লতানো গাছ বা ঝোপঝাড় বেয়ে সাপ উপরে উঠেছে।

রাজধানীতে সাপের বাড়তি উপস্থিতি কেবল আতঙ্কের বিষয় নয় বরং প্রকৃতির ভারসাম্য নষ্ট হওয়ার এক স্পষ্ট ইঙ্গিত। দ্রুত নগরায়ণ, জলাশয় ভরাট, ও আবাসস্থল ধ্বংসের কারণে এই প্রাণীরা এখন মানুষের আশপাশে আশ্রয় খুঁজছে। তাই সাপ নিধন নয় বরং সচেতনতা, পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতা ও পরিকল্পিত নগর উন্নয়নই হতে পারে স্থায়ী সমাধান। মানুষ ও বন্যপ্রাণীর সহাবস্থান নিশ্চিত করলেই এই অনাকাঙ্ক্ষিত পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনা সম্ভব মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। 

-মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: