odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Monday, 10th November 2025, ১০th November ২০২৫

ব্যাংকের আগ্রাসী ঋণে লাগাম টানার সময়সীমা শিথিল করলো বাংলাদেশ ব্যাংক

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২০ February ২০১৮ ২১:০০

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২০ February ২০১৮ ২১:০০

নিজস্ব প্রতিবেদক
বাংকগুলোর আগ্রাসীভাবে যত্রতত্র গুণগত মানহীন ঋণ বিতরণ ঠেকাতে ঋণ-আমানত অনুপাত (এডিআর) কমিয়ে দেয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ব্যাপকহার ঋণ বিতরণের ফলে তারল্য সংকটের আশঙ্কায় জুনের মধ্যে এডিআর সীমা কমিয়ে আনতে বলা হয়। কিন্তু এখন কমিয়ে আনার সময়সীমা ডিসেম্বর পর্যন্ত বাড়িয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। এছাড়া আগের ‘কমিটমেন্ট’র বিপরীতে ঋণ দেওয়ার কারণে এডিআর বেড়ে গেলেও সেটি ধরা হবে না। আজ এ সংক্রান্ত সার্কুলার জারি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক।
সুত্র জানায়, কয়েক মাসের আগ্রাসীভাবে ঋণ বিতরণের কারণে ব্যাংকিং খাতের বিপুল পরিমান তারল্য নিঃশেষ হয়ে যায়। ব্যাংকগুলোতে নগদ টাকার টান পড়ে। এর ফলে ইতিহাসের সর্বনি¤েœ নেমে আসা আমানতের বিপরীতে সুদ হার হুহু করে বাড়তে থাকে। মাত্র দেড় মাসের ব্যবধানে ৩ শতাংশে নেমে আসা আমানতের সুদ হার ‘ডবল ডিজিট’ (১০ শতাংশের বেশি) হয়ে গেছে। এর ফলে ঋণের সুদ হারও ক্রমশ বাড়ছে। ঋণের সুদ বৃদ্ধি ঠেকাতে ঢাকা চেম্বারসহ বিভিন্ন ব্যবসায়িক সংঠন বাংলাদেশ ব্যাংকে চিঠি পাঠায়। এছাড়া নির্বাচনী বছরে অধিক ঋণ বিতরণের জন্য সুযোগ দাবি করে এডিআর না কমানো অনুরোধ করে ব্যাংকগুলোর শীর্ষ নির্বাহীরা। এসব বিষয় বিবেচনা করে সংশোধিত এডিআর পরিপালনের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে। এছাড়া চলতি বছরের ৩০ জানুয়ারী আগে দেওয়া ‘কমিটমেন্ট’ বা নন-ফান্ডেড দায় কোন কারণে ফান্ডেড দায়ে রুপান্তরিত হলে তার জন্য এডিআর বেড়ে গেলেও আইনের লঙ্ঘণ হিসেবে ধরবে না বাংলাদেশ ব্যাংক।
আজ জারি করা সার্কুলারে বলা হয়, আগের নির্দেশনার আংশিক পরিবর্তন করে পরিপালনের সময়সীমা ৩০ জুনের পরিবর্তে ২০১৮ সালের ৩১ ডিসেম্বর পর্যন্ত পুনঃনির্ধারণ করা হলো। এ ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের ৩০ জানুয়ারি বা তার পূর্বে ব্যাংক কর্তৃক গ্রাহকের অনুক‚লে প্রদত্ত কমিটমেন্ট বর্ণিত সময়সীমার মধ্যে ( অর্থাৎ ৩১ ডিসেম্বর ফান্ডেড ঋণে পরিণত হলে এবং এর এডিআর/আইডিআর সাময়িক বৃদ্ধিজনিত বিষয়টি সার্কুলারের নির্দেশনার লংঘন হিসেবে বিবেচনা করা হবে না। তবে ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে তা সীমার মধ্যে নামিয়ে আনতে হবে।
আগের বিধান অনুযায়ী, সাধারণ ব্যাংকগুলো সংগৃহীত আমানতের ৮৫ শতাংশ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলো ৯০ শতাংশ ঋণ বিতরণ করতে পারে। গত বছরের শেষার্ধ থেকে ব্যাংকগুলো ঋণ বিতরণের প্রতিযোগিতা শুরু করে। অন্তত ১৯টি ব্যাংক নির্ধারিত সীমার বাইরে ঋণ বিতরণকরে। ফলে ডিসেম্বর পর্যন্ত লক্ষ্যমাত্রার তুলনায় বেশি হারে বেসরকারি খাতের ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়। অতিরিক্তহারে ঋণের কারণে তারল্য সংকট ঠেকাতে এবং মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণে রাখতে ৩০ জানুয়ারি সার্কুলার জারি করে বাংলাদেশ ব্যাংক। ওই সার্কুলারে সাধারণ ব্যাংকগুলোর জন্য সর্বোচ্চ ৮৩ দশমিক ৫০ এবং ইসলামী ব্যাংকগুলোর এডিআর ৮৯ শতাংশ নির্ধারণ করা হয়। যাদের এর চেয়ে বেশি আছে তাদেরকে জুনের মধ্যে নামিয়ে আনতে নির্দেশ দেওয়া হয়।
গত শনিবার অগ্রণী ব্যাংকের অনুষ্ঠানে বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ফজলে কবির বলেন, একটি বেসরকারি ব্যাংক খারাপ অবস্থায় পড়েছে। পুঁজিবাজারে প্যানিক ছিল। এখন সেটা ব্যাংকিং খাতেও চলে আসছে। সে কারণে সরকারি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বেসরকারি ব্যাংক থেকে আমানত তুলে নিচ্ছে। তিনি অর্থমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ চেয়ে এটি বন্ধ করার আহŸান জানান। তিনি বলেন, এডিআর সীমা লঙ্ঘন করে প্রায় ১১ হাজার কোটি টাকার বেশি ঋণ বিতরণ করেছে বেশ কিছু ব্যাংক। সেটি কমিয়ে আনতে বলা হয়েছে। তা পুরো ব্যাংক খাতকে প্রভাবিত করার কথা নয়। কারণ ১১ হাজার কোটি টাকার মধ্যে মাত্র চার ব্যাংকের রয়েছে ৬ হাজার কোটি টাকা। এডিআরের কারণে আমানতের সুদহার বেড়েছে। একই সঙ্গে খরচ বেড়ে যাওয়ায় ঋণের সুদহারও বাড়াচ্ছে কেউ কেউ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: