প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এ এম এম নাসির উদ্দিন বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা নির্বাচন কমিশনকে সম্পূর্ণ স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দিচ্ছেন এবং এ পর্যন্ত কমিশনের কাজে কোনো ধরনের হস্তক্ষেপ বা চাপ প্রয়োগ করেননি।
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন যাতে নিরপেক্ষভাবে কাজ করতে সে লক্ষ্যে সরকার প্রয়োজনীয় পরিবেশ সৃষ্টি করেছে। কমিশনও জনগণকে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন উপহার দিতে সর্বাত্মক প্রস্তুতি নিচ্ছে।
আজ সোমবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নিজ কার্যালয়ে ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন দূতাবাসের চার্জ দ্য অ্যাফেয়ার্স ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসনের সাথে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের সিইসি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সিইসি বলেন, ‘প্রধান উপদেষ্টা এ পর্যন্ত আমাদের ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি করেননি, কোনো সিদ্ধান্তে প্রভাব খাটানোর চেষ্টা করেননি। একবারও বলেননি-এটা এভাবে করুন, ওটা ওভাবে করুন। তার দপ্তর থেকেও কোনো প্রকার প্রভাব আমরা পাইনি। বরং তিনি নির্বাচন কমিশনকে স্বাধীনভাবে কাজ করার পূর্ণ নিশ্চয়তা দিয়েছেন। আমি নিজেই তাকে (ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন) বলেছি, আমরা শতভাগ স্বাধীনভাবে দায়িত্ব পালন করছি।’
তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আয়োজনের ক্ষেত্রে সরকারের সহযোগিতা অপরিহার্য। নির্বাচন কমিশন একা কোনোভাবেই জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করতে পারবে না। আমাদের দায়িত্ব পালনের জন্য পুলিশ, সেনাবাহিনী, বিজিবি ও প্রশাসনিক কর্মকর্তা লাগবে। রিটার্নিং অফিসার, সহকারী রিটার্নিং অফিসার, প্রিজাইডিং অফিসার-সবাই সরকারি কর্মকর্তা। অর্থায়নের ব্যবস্থাও সরকার করে থাকে। তাই সরকারকে বাদ দিয়ে নির্বাচন করা সম্ভব নয়। সুতরাং সরকারের সহযোগিতা নিয়েই নির্বাচন আয়োজন করতে হবে। আশার কথা হলো, সরকার সব ধরনের সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত।’
নির্বাচন কমিশন এমনভাবে একটি নির্বাচন আয়োজন করতে চাইছে, যাতে কমিশনের প্রস্তুতির অভাব নিয়ে কোনো প্রশ্ন না ওঠে উল্লেখ করে সিইসি বলেন, আমরা চাই না, কেউ বলুক নির্বাচন কমিশন প্রস্তুত ছিল না। তাই আমরা পূর্ণ প্রস্তুতি নিচ্ছি। সরকারের পক্ষ থেকে তারিখ ঘোষণা করা হলে, আমরা যে কোনো সময় নির্বাচন আয়োজন করতে প্রস্তুত থাকব। বড় বড় কাজগুলোর অনেকগুলো ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে।
তিনি জানান, জাতির উদ্দেশ্যে প্রধান উপদেষ্টার ভাষণে দেওয়া ঘোষণার পরদিনই আমরা চিঠি পেয়েছি। সেই চিঠিতে আগামী বছরের রমজানের আগেই জাতীয় নির্বাচন আয়োজনের অনুরোধ জানানো হয়েছে। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে পরিকল্পনা সাজিয়েছি। কাজ দ্রুততর করা হচ্ছে, যাতে যথাসময়ে নির্বাচন আয়োজন করা সম্ভব হয়।
রাজনৈতিক দলগুলোর অবস্থান প্রসঙ্গে সিইসি বলেন, ‘এখন বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের মধ্যে নানা মত আছে, এটা স্বাভাবিক। তবে আমি বিশ্বাস করি, দেশের স্বার্থে শেষ পর্যন্ত তারা ঐক্যমতে পৌঁছাবে। দেশের স্বার্থই সর্বাগ্রে বিবেচনা করবেন নেতারা। প্রধান উপদেষ্টা ইতোমধ্যে এ বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছেন। আগে ঐকমত্য কমিশনকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল, এখন তিনি নিজেই রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে আলোচনা শুরু করেছেন। আমি দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করি, এক পর্যায়ে সবাই একটা সমঝোতায় পৌঁছাবে।’
বৈঠকে মার্কিন কূটনীতিক ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন মব কালচার প্রসঙ্গে প্রশ্ন তুললে প্রধান নির্বাচন কমিশনার বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচনের দিন একসাথে ৩০০ আসনে ভোট হবে। তখন এত বিপুল সংখ্যক লোক এক জায়গায় জড়ো হওয়ার সুযোগ নেই। লোকজন ছড়িয়ে পড়বে, ঢাকাসহ বড় শহর খালি হয়ে যাবে। অভিজ্ঞতাও বলছে, নির্বাচনের দিনে মব কালচার কার্যত ভেঙে যায়। তাই এই বিষয়ে খুব একটা উদ্বেগের কারণ দেখি না।’
তিনি বলেন, নির্বাচন কমিশন সব সময় সচেষ্ট থাকবে যাতে ভোটাররা নিশ্চিন্তে ভোট দিতে পারে। সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করতে নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হবে এবং প্রয়োজন হলে সেনাবাহিনীও মোতায়েন করা হবে। 
সিইসি নাসির উদ্দিন বলেন, নির্বাচন কমিশনের এ কার্যক্রম শুধু দেশের জনগণ নয়, আন্তর্জাতিক মহলও ঘনিষ্ঠভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। তাই কমিশন শুরু থেকেই জোর দিচ্ছে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার ওপর। 
তিনি বলেন, ‘আমরা চাই দেশে ও বিদেশে যেন এমন আস্থা সৃষ্টি হয় যে, বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচন হতে যাচ্ছে। এজন্য প্রতিটি ধাপে আমরা অত্যন্ত সতর্কভাবে এগোচ্ছি।’
সিইসি আরো বলেন, সর্বশক্তি দিয়ে একটা সুন্দর নির্বাচন করার চেষ্টা আমাদের থাকবে। আমাদের চেষ্টার কোনো ঘাটতি থাকবে না।  
তিনি বলেন, আমি উনাকে (ট্রেসি অ্যান জ্যাকবসন) বলেছি যে, আমাদের প্রধান উপদেষ্টা একজন নোবেল পুরস্কার বিজয়ী ব্যক্তিত্ব। উনি জাতির কাছে একটা ওয়াদা করেছেন। আমি চাই উনার (প্রধান উপদেষ্টা) ডিগনিটি, ইজ্জত, উনার যে কমিটমেন্ট বা ওয়াদাটা যেন সুরক্ষিত থাকে। আমার ওয়াদাটাও যাতে রক্ষিত হয়। আমিও জাতির কাছে ওয়াদা দিয়েছি।

                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                                    
                                            
                                            
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: