odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | শনিবার, ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২২ ভাদ্র ১৪৩২

খুদি বাড়ি: মেরিনা তাবাসুমের স্থাপত্যে জলবায়ু সংকটে টিকে থাকার লড়াই

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:৪৫

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৬ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ০৬:৪৫

ঢাকার এক গরম দুপুরে যখন শহর ভিজে যাচ্ছে আকস্মিক বৃষ্টিতে, তখন সংবাদমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়ল এক গর্বের খবর—বাংলাদেশ আবারও আন্তর্জাতিক স্থাপত্যের মানচিত্রে উজ্জ্বল হয়ে উঠেছে। প্রখ্যাত স্থপতি মেরিনা তাবাসুম দ্বিতীয়বারের মতো জিতেছেন বিশ্বের অন্যতম মর্যাদাপূর্ণ আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার। তাঁর হাতে গড়া “খুদি বাড়ি প্রকল্প” কেবল স্থাপত্যের জন্য নতুন সংজ্ঞাই তৈরি করেনি, বরং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে মানুষের টিকে থাকার সংগ্রামে এক অনন্য অস্ত্র হয়ে দাঁড়িয়েছে।

বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চলগুলোতে বছরের পর বছর ধরে ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস আর নদীভাঙন জীবনকে অনিশ্চিত করে তুলেছে। বিশেষ করে দরিদ্র মানুষেরা প্রতিটি দুর্যোগের পর মাথা গোঁজার ঠাঁই হারায়। ঠিক সেই মানুষের জন্য মেরিনা তাবাসুম ভেবেছেন সহজ, টেকসই ও মানবিক সমাধান—খুদি বাড়ি। ছোট্ট আকারের এই বাড়িগুলো সহজেই খোলা যায়, ভাঁজ করে অন্যত্র সরিয়ে নেওয়া যায়, আবার গড়ে তোলা যায় নতুনভাবে। স্থানীয় উপকরণে কম খরচে বানানো এসব ঘর বন্যা আর ঝড়ে টিকে থাকার মতো শক্তিশালী। জরুরি সময়ে এগুলো হয়ে ওঠে গৃহহীন মানুষের নিরাপদ আশ্রয়।

মেরিনা তাবাসুম বলেন, স্থাপত্য মানে শুধু ইট-সিমেন্টের নান্দনিক দালানকোঠা নয়; এটি মানুষের বেঁচে থাকার অস্ত্র। তাঁর নকশার ভেতর লুকিয়ে আছে সেই মানবিকতা—যা উপকূলের এক বিধ্বস্ত পরিবারকে আবার ঘর পাওয়ার স্বপ্ন দেখায়।

এটাই প্রথমবার নয়, আগেও তিনি বাংলাদেশের স্থাপত্যকে বিশ্বমঞ্চে নিয়ে গেছেন। ২০১৬ সালে বাইতুর রউফ মসজিদের নকশার জন্য পেয়েছিলেন একই পুরস্কার। সেই স্থপতি আবারও প্রমাণ করলেন, বাংলাদেশের মাটি থেকে উঠে আসা সৃজনশীলতা বিশ্বকে চমকে দিতে পারে।

আগা খান স্থাপত্য পুরস্কার নিজেই এক ইতিহাস। ১৯৭৭ সালে চালু হওয়া এই পুরস্কার প্রতি তিন বছর অন্তর দেওয়া হয়, মুসলিম সমাজ ও উন্নয়নশীল দেশে টেকসই, কার্যকরী এবং মানবিক স্থাপত্যকে স্বীকৃতি দিতে। পুরস্কারের কেন্দ্র সুদূর জেনেভায় হলেও এর প্রভাব ছড়িয়ে পড়ে বিশ্বের নানা প্রান্তে—যেখানে দরকার নতুন চিন্তা, পরিবেশবান্ধব নকশা এবং সামাজিক প্রভাবশালী সমাধান।

মেরিনা তাবাসুমের সাফল্য শুধু ব্যক্তিগত নয়; এটি বাংলাদেশেরও সাফল্য। খুদি বাড়ি প্রকল্পের মাধ্যমে তিনি দেখালেন, স্থাপত্য কেবল নকশার সৌন্দর্য নয়, বরং দুর্যোগে ক্ষতিগ্রস্ত কোটি মানুষের জন্য বাঁচার হাতিয়ার। এই প্রকল্প বিশ্বকে মনে করিয়ে দিল, জলবায়ু সংকটে ভুগতে থাকা দেশগুলোও উদ্ভাবন আর সৃজনশীলতায় মানবতার পথপ্রদর্শক হতে পারে।

আজ যখন বিশ্ব পরিবেশ সংকটে উদ্বিগ্ন, তখন বাংলাদেশের এক কন্যার হাতে গড়া ক্ষুদ্র “খুদি বাড়ি” হয়ে উঠেছে আশার প্রতীক। ছোট্ট এই বাড়ির ভেতর আছে বড় এক বার্তা—স্থাপত্য মানেই জীবন রক্ষার শিল্প, ভবিষ্যৎ বাঁচানোর অঙ্গীকার।

- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: