odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | মঙ্গলবার, ২৬ আগস্ট ২০২৫, ১১ ভাদ্র ১৪৩২
মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক নূরজাহান বেগম ওরফে কাকন বিবি গতকাল রাতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন

বীর প্রতীক কাকন বিবির ইন্তেকাল

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০১৮ ১৮:১১

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২২ মার্চ ২০১৮ ১৮:১১

বীর প্রতীক কাকন বিবির ইন্তেকাল

 মুক্তিযোদ্ধা বীরপ্রতীক নূরজাহান বেগম ওরফে কাকন বিবি গতকাল রাতে না ফেরার দেশে চলে গেছেন। সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় বুধবার দিবাগত রাত ১১টা ৫ মিনিটে তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন (ইন্নালিল্লাহে...রাজিউন)।
আজ সকাল সাড়ে ৯টায় কাকন বিবির মরদেহ তার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। আজ বিকেল সাড়ে ৩টায় সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের জিরারগাঁও গ্রামে পারিবারিক কবরস্থনে তাকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় দাফন করা হবে বলে জানা যায়। বীর মুক্তিযোদ্ধা কাকন বিবিকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে রাষ্ট্রীয় মর্যাদা প্রদান ও জানাযার নামাজ বিকাল সাড়ে ৩ টায় অনুষ্ঠিত হবে বলে দোয়ারাবাজার উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা কমান্ডার মো. সফর আলী বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ।
মরদেহ হস্তান্তরের আগে পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ডা. মো. একে মাহবুবুল হক হাসপাতালে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নিয়ে এই মুক্তিযোদ্ধার কফিনে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। এছাড়া সিলেট জেলা প্রশাসন ও মহানগর মুক্তিযোদ্ধা সংসদের পক্ষ থেকে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা তার মরদেহে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানান। 
মরদেহ গ্রামের বাড়ি সুনামগঞ্জের দোয়ারাবাজারের জিরারগাঁও গ্রামে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। বেলা সোয়া ১১টায় তাঁকে বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স বাড়িতে গিয়ে পৌঁছায়। সেখানে স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধা, আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ ও এলাকাবাসী কাকন বিবির মরদেহে শ্রদ্ধা জানান। 
গত ১৯ মার্চ নিউমোনিয়ায় আক্রান্ত হয়ে কাকন বিবি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। দীর্ঘদিন ধরে তিনি শ্বাসকষ্ট সহ হৃদরোগে রোগে ভুগছিলেন। সোমবার রাতে তার অবস্থা বেশি খারাপ হলে তাকে ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নিবিড় পর্যবেক্ষণ কেন্দ্রে (আইসিইউ) রাখা হয়।
সেখানে তিনি হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের ডা. নাজমুল ইসলামের অধীনে ভর্তি হলেও আইসিইউতে ডা. সব্যসাচী রায়ের তত্ত্বাবধানে চিকিৎসাধীন ছিলেন।
কাকন বিবি ১৯৭১ সালে তিন দিনের কন্যা সন্তান সখিনাকে রেখে যুদ্ধে চলে যান। মুক্তিযোদ্ধাদের গুপ্তচর হিসেবে কাজ করতে গিয়ে তিনি রাজাকারদের হাতে ধরা পড়েন এবং নির্যাতনের শিকার হন। তিনি কেবল মুক্তিবাহিনীর গুপ্তচর হিসেবেই কাজ করেননি, সম্মুখ যুদ্ধেও অংশ নেন।
১৯৭১ এর জুন মাসে পাকিস্তান বাহিনীর কাছে ধরা পড়েন কাকন বিবি। তাদের বাঙ্কারে দিনের পর দিন অমানুষিকভাবে নির্যাতন সহ্য করতে হয় তাঁকে। এরপর ছেড়ে দেয়া হয়। 
তারপর মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী তার সঙ্গে সেক্টর কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল মীর শওকতের সঙ্গে দেখা করিয়ে দেন। তার ওপর দায়িত্ব পড়ে গুপ্তচর হিসেবে বিভিন্ন তথ্য জোগাড়ের। তার সংগৃহিত তথ্যের ওপর ভিত্তি করে মুক্তিযোদ্ধারা আক্রমণ চালিয়ে সফল হন।
গুপ্তচরের কাজ করতে গিয়েই দোয়ারাবাজার উপজেলার বাংলাবাজারে পাকিস্তানি বাহিনীর হাতে পুনরায় ধরা পড়েন তিনি। এবার একনাগাড়ে ৭ দিন পাকিস্তানি বাহিনী ও রাজাকাররা তাকে অমানুষিক নির্যাতন চালায়। লোহার রড গরম করে শরীরের বিভিন্ন স্থানে ছ্যাঁকা দেয়া হয়।
তখন কাকন বিবিকে মৃত ভেবে অজ্ঞান অবস্থায় পাকবাহিনীর সদস্যরা তাকে ফেলে রেখে চলে যায়। পরে তাকে উদ্ধার করে বালাট সাব-সেক্টরে নিয়ে যাওয়া হয়। সুস্থ হয়ে তিনি পুণরায় ফিরে যান বাংলাবাজারে। অস্ত্র চালনায় প্রশিক্ষণ নেন।
মুক্তিযোদ্ধা রহমত আলী তাকে প্রশিক্ষণ দেন। এর পরবর্তীকালে তিনি সম্মুখযুদ্ধ আর গুপ্তচর উভয় কাজই করেন। কাকন বিবি প্রায় ২০টি যুদ্ধে সক্রিয়ভাবে অংশ নেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: