আন্তর্জাতিক ডেস্ক │ ৫ নভেম্বর ২০২৫
অভিনব রাজনৈতিক ইতিহাস রচনা করে নিউইয়র্ক সিটির মেয়র নির্বাচিত হয়েছেন বামপন্থী যুবনেতা জোহরান মামদানি। যুক্তরাষ্ট্রের বহুজাতিক ও প্রগতিশীল এ নগরীতে প্রথমবারের মতো কোনো মুসলিম প্রার্থী মেয়রের দায়িত্ব পেতে চলেছেন। মঙ্গলবার স্থানীয় সময় রাতে বিভিন্ন মার্কিন সংবাদমাধ্যম প্রাথমিক ফলাফলে জানান, মামদানি তাঁর প্রতিদ্বন্দ্বী সাবেক গভর্নর অ্যান্ড্রু কুয়োমোকে বিপুল ব্যবধানে পরাজিত করেছেন।
এই ফল শুধু নিউইয়র্ক নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় রাজনীতিতেও বড় বার্তা দিয়েছে বলে মনে করছেন বিশ্লেষকেরা।
ট্রাম্পের হুমকি সত্ত্বেও নিউইয়র্কের সিদ্ধান্ত
এর আগে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রকাশ্যে হুমকি দিয়েছিলেন—মামদানি নির্বাচিত হলে নিউইয়র্কে ফেডারেল তহবিল দেওয়া বন্ধ করবেন। তিনি মামদানিকে ‘কমিউনিস্ট’ বলে আখ্যা দিয়ে শহরের উন্নয়ন ব্যাহত করার অভিযোগ তোলেন।
টেলিভিশন সাক্ষাৎকারে ট্রাম্প বলেন,
“একজন কমিউনিস্ট মেয়র থাকলে নিউইয়র্কে অর্থ পাঠানো অর্থ অপচয়। তাই ওই শহরকে অর্থ সহায়তা দেওয়া কঠিন হবে।”
তবে ট্রাম্পের এই অবস্থান উল্টো প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে বলে বিশ্লেষকদের ধারণা। তরুণ ও অভিবাসী ভোটারদের বড় একটি অংশ ট্রাম্পের বক্তব্যকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধে হুমকি হিসেবে দেখেছেন।
কোন পথে এলেন মামদানি
৩৪ বছর বয়সী জোহরান মামদানি ভারতীয় বংশোদ্ভূত মুসলিম অভিবাসী পরিবারের সন্তান। বরাবরই শ্রমিক অধিকার, সাশ্রয়ী বাসস্থান, পুলিশ সংস্কার ও সামাজিক ন্যায়ের পক্ষে সোচ্চার তিনি।
নিউইয়র্ক আইনসভায় নির্বাচিত হয়ে জনপ্রিয়তা পাওয়ার পর তিনি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সংগঠনে তরুণদের সম্পৃক্ত করেন। প্রগতিশীল ডেমোক্র্যাটিক মহলের সমর্থন নিয়ে নিজেকে তুলে ধরেন ‘নাগরিকের মেয়র’ হিসেবে।
মামদানি নির্বাচনী প্রতিশ্রুতিতে ঘোষণা করেছেন—
- আবাসন সংকট নিরসনে সরকারি বিনিয়োগ
- গণপরিবহন সাশ্রয়ী ও আধুনিক করা
- ছোট ব্যবসা ও উদ্যোক্তা সহায়তা তহবিল
- পুলিশ জবাবদিহিতা ও কমিউনিটি সেফটি জোন
তিনি ভোট পরবর্তী এক বার্তায় বলেন—
“এ জয় নিউইয়র্কের মানুষের। ভয় নয়, ভালোবাসা ও সমতার রাজনীতি জিতেছে।”
কুয়োমোর প্রত্যাবর্তনের চেষ্টা ব্যর্থ
অ্যান্ড্রু কুয়োমো, যিনি চার বছর আগে কেলেঙ্কারির কারণে গভর্নর পদ থেকে পদত্যাগ করতে বাধ্য হয়েছিলেন, এই নির্বাচনের মাধ্যমে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন। ট্রাম্পও রিপাবলিকান প্রার্থী পাশ কাটিয়ে কুয়োমোকে সমর্থন দেন।
কিন্তু নিউইয়র্কবাসী শিশু, নারী, অভিবাসী অধিকার ও স্বাধীন সাংবাদিকতার প্রতি কঠোর অবস্থান নেওয়া মামদানিকেই সমর্থন জানান।
যুক্তরাষ্ট্রের রাজনীতিতে নতুন অধ্যায়
এ নির্বাচনে নিউইয়র্ক ছাড়াও নিউ জার্সি ও ভার্জিনিয়ার গুরুত্বপূর্ণ নির্বাচনে ডেমোক্র্যাটদের জয় হয়েছে। ফলাফল ঘোষণার পর হোয়াইট হাউসের এক্স-হ্যান্ডল থেকে স্মরণ করিয়ে দেওয়া হয়—
“দেশটির প্রেসিডেন্ট এখনো ডোনাল্ড ট্রাম্প।”
কিন্তু বিশ্লেষকদের মতে, মামদানির বিজয় যুক্তরাষ্ট্রের নির্বাচন রাজনীতিতে ভূমিকা রাখবে নতুন প্রজন্ম, অভিবাসী ও প্রগতিশীল ভোটারদের জন্য নতুন পথনির্দেশনা হিসেবে।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: