odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 24th October 2025, ২৪th October ২০২৫

বৈষম্যমূলক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তির প্রতিবাদে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে টানা তৃতীয় দিনের ‘শাটডাউন’ কর্মসূচি

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৩ October ২০২৫ ২১:১২

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৩ October ২০২৫ ২১:১২

 প্রকাশিত: ২৩ অক্টোবর ২০২৫

✍️ অধিকার পত্র ডেস্ক

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা টানা তৃতীয় দিনের মতো ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করছেন। তাদের প্রধান দাবি—বৈষম্যমূলক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন, ইন্টার্নশিপে ভাতা চালু করা এবং বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানকে টেকনিক্যাল ক্যাডার হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করা

শিক্ষার্থীরা জানান, তারা দীর্ঘদিন ধরে সরকারের বিভিন্ন দপ্তর, বিশ্ববিদ্যালয় ও স্বাস্থ্য খাতে চাকরির ক্ষেত্রে বৈষম্যের শিকার হচ্ছেন। অনেক ক্ষেত্রেই মনোবিজ্ঞান ও চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানের ডিগ্রিধারীদের মধ্যে কোনো স্পষ্ট পার্থক্য করা হয় না, ফলে যোগ্যতার তুলনায় সুযোগ সীমিত হয়ে পড়ে।


দাবিগুলোর পেছনের প্রেক্ষাপট ও বিশ্লেষণ

১️বৈষম্যমূলক নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি সংশোধন:
সাম্প্রতিক কিছু সরকারি নিয়োগ বিজ্ঞপ্তিতে চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানীদের বাদ দেওয়া বা অস্পষ্টভাবে উল্লেখ করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, এটি পেশাগত বৈষম্য সৃষ্টি করছে এবং তাদের কর্মসংস্থানের পথ রুদ্ধ করছে।

২️⃣ ইন্টার্নশিপ ভাতা চালু:
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানের শিক্ষার্থীরা হাসপাতাল ও মানসিক স্বাস্থ্যকেন্দ্রে ইন্টার্নশিপ করে থাকেন। কিন্তু অন্যান্য চিকিৎসা বিভাগ যেমন এমবিবিএস, ফিজিওথেরাপি বা নার্সিং শিক্ষার্থীদের মতো তারা কোনো ভাতা পান না। শিক্ষার্থীদের দাবি, “একই পরিশ্রম, একই দায়িত্ব—তবুও ভাতায় বৈষম্য কেন?”

৩️⃣ বিসিএসে টেকনিক্যাল ক্যাডার সংযোজন:
বর্তমানে বিসিএস পরীক্ষায় চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান নামে আলাদা কোনো টেকনিক্যাল ক্যাডার নেই। ফলে এই বিভাগের শিক্ষার্থীরা অন্যান্য সাধারণ ক্যাডারের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে বাধ্য হন, যা তাদের পেশাগত দক্ষতার সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ নয়।


শিক্ষার্থীদের বক্তব্য

অংশগ্রহণকারী এক শিক্ষার্থী বলেন,

“আমরা মানসিক স্বাস্থ্যসেবার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত। অথচ চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে আমাদের ডিগ্রি বারবার উপেক্ষিত হচ্ছে। এটি শুধু অবিচার নয়, রাষ্ট্রের মানসিক স্বাস্থ্য কাঠামোর জন্যও বড় ক্ষতি।”

আরেকজন যোগ করেন,

“আমাদের ইন্টার্নশিপ কোনো আনুষ্ঠানিক কাঠামোর মধ্যে নেই। ফলে আমরা পেশাগত অভিজ্ঞতা অর্জন করলেও আর্থিকভাবে পিছিয়ে পড়ি। সরকার যদি মনোবিজ্ঞানের গুরুত্ব স্বীকার করে, তবে এ দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা জরুরি।”


বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অবস্থান

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, “শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো যৌক্তিক। তবে কিছু বিষয় নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রয়োজন রয়েছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমাজের একাংশও বলছেন, চিকিৎসা মনোবিজ্ঞান আজকাল শুধু গবেষণার বিষয় নয়—এটি জনস্বাস্থ্য ও মানসিক সুস্থতা ব্যবস্থার গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছে। তাই বিসিএসসহ অন্যান্য জাতীয় কাঠামোতে এই বিষয়কে স্বীকৃতি দেওয়া সময়ের দাবি।


বিশ্লেষণাত্মক দৃষ্টিভঙ্গি

এই আন্দোলন কেবল বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের সীমিত প্রতিবাদ নয়—এটি বাংলাদেশে মানসিক স্বাস্থ্যসেবা ও নীতিনির্ধারণের মধ্যে একটি ফাঁককে তুলে ধরছে।
চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানের পেশাজীবীরা যদি সরকারি কাঠামোতে সঠিকভাবে অন্তর্ভুক্ত না হন, তাহলে দেশের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যবস্থার উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হবে।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন,

“মনোবিজ্ঞান ও চিকিৎসা মনোবিজ্ঞানের পার্থক্য স্পষ্টভাবে সংজ্ঞায়িত করে নিয়োগ নীতিমালা প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবি। এতে শিক্ষার্থীদের পেশাগত ভবিষ্যৎ যেমন সুরক্ষিত হবে, তেমনি জনগণও পাবে উন্নত মানসিক স্বাস্থ্যসেবা।”



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: