odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Wednesday, 5th November 2025, ৫th November ২০২৫
সর্বশেষ পাকনার হাওরও পানির নিচে

১৪২টি হাওরের সব ফসল তলিয়ে গেল

Admin 1 | প্রকাশিত: ২৫ April ২০১৭ ২১:১৯

Admin 1
প্রকাশিত: ২৫ April ২০১৭ ২১:১৯

পানির তোড়ে আবারও বাঁধ ভাঙল। পুরোপুরি ডুবে গেল পাকনার হাওর। ভাঙা মন নিয়ে ফিরলেন হাওর রক্ষায় স্বেচ্ছাশ্রমে কাজ করা কৃষক আর গ্রামবাসী। সুনামগঞ্জের জামালগঞ্জ উপজেলার এই হাওর আগেই ডুবতে শুরু করেছিল। গতকাল সোমবার টিকে থাকা শেষ বাঁধটি ভেঙে হাওরে প্রবল বেগে পানি ঢুকে ধানি জমি তলিয়ে যায়। এর ফলে ১৪২টি ফসলি হাওরের সব কটির ফসল ডুবে গেছে।

এর আগের দিন রোববার ভোরে পাঁচটি স্থানে বাঁধ ভেঙে ডুবে যায় শনির হাওর। পানিতে তলিয়ে যায় ২২ হাজার একর জমির বোরো ধান। ২৫ দিনের প্রাণান্তকর চেষ্টা শেষ পর্যন্ত প্রকৃতির কাছে হার মানে।

পাকনার হাওরে প্রায় ২০ হাজার একর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। জামালগঞ্জ উপজেলা সদর, ভীমখালি ও ফেনারবাক ইউনিয়নের ৬০টি গ্রামের মানুষের জমি আছে এই হাওরে। গতকাল ভোরে হাওরের উড়ারকান্দি এলাকার বাঁধটি ভেঙে যায়।

জামালগঞ্জ উপজেলার বাসিন্দারা জানান, প্রায় ২৩ দিন ধরে স্থানীয় কৃষক-জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসনের লোকজন পাকনার হাওর রক্ষার চেষ্টা করছিলেন। ভীমখালি গ্রামের বাসিন্দা আক্তারুজ্জামান বলেন, ‘আমাদের সব শ্রম ভেসে গেল। চোখের সামনে তলিয়ে গেল সোনার ধান। অসহায়ের মতো চেয়ে চেয়ে দেখছি।’ ভীমখালি গ্রামের কৃষক মনির হোসেন বলেন, ‘হাওরে আমার চার একর জমি ছিল। ভাবছিলাম, এই ফসল কাটতে পারব। আর একটা সপ্তাহ সময় পেলেই হতো। কিন্তু সময় আর পেলাম না। আমরা নিঃস্ব হয়ে গেলাম।’

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক মো. জাহেদুল হক বলেন, সুনামগঞ্জে মোট ফসলি হাওরের সংখ্যা ছোট-বড় মিলিয়ে ১৪২টি। সব হাওরই ডুবে গেছে। তলিয়ে গেছে দেড় লাখ হেক্টর জমির বোরো ধান। এবার জেলায় ২ লাখ ২৩ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছিল। ধানের (চালে) লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৯ লাখ ৩০ হাজার মেট্রিক টন। তবে স্থানীয় কৃষকেরা বলছেন, আবাদ করা ধানের প্রায় ৯০ শতাংশ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তিনি জানান, জেলায় দেড় হাজার কিলোমিটার বাঁধ রয়েছে। পুরোটাই এখন পানির নিচে।

সুনামগঞ্জের জেলা প্রশাসক রফিকুল ইসলাম বলেছেন, ‘তাহিরপুর উপজেলার শনির হাওর তলিয়ে যাওয়ার পর জামালগঞ্জের পাকনার হাওরটিই ছিল আমাদের শেষ সম্বল। রোববার রাত প্রায় ১২টা পর্যন্ত হাওরের বাঁধে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও), জনপ্রতিনিধিসহ এলাকার কয়েক শ মানুষ ছিলেন। কিন্তু একসময় প্রবল বৃষ্টি শুরু হলে বাধ্য হয়ে তাঁদের ফিরে আসতে হয়। সোমবার সকালের মধ্যে খবর আসে, বাঁধ ভেঙে গেছে।

কমে আসছে হাওরের দূষণ

হাওরের পানি দূষণমুক্ত হওয়ার জন্য প্রকৃতিই অন্যতম ভরসা বলে জানিয়েছিলেন বিশেষজ্ঞরা। গত দুই দিনে টানা বৃষ্টিপাতে পানিতে দূষণের গন্ধ কমে এসেছে। হাওরপারের বাসিন্দারাও জানিয়েছেন, বৃষ্টি হলেই গন্ধ কম অনুভূত হচ্ছে। সুনামগঞ্জে হাওরে এবং নদীতে নতুন করে কোনো মরা মাছ ভেসে ওঠেনি, হাঁসও মারা যাওয়ার খবর পাওয়া যায়নি।

আবহাওয়া অধিদপ্তর সিলেট কার্যালয়ের কর্মকর্তা সাঈদ আহমদ চৌধুরী গতকাল বিকেলে জানান, সুনামগঞ্জে গত রোববার ৪২ মিলিমিটার ও গতকাল বিকেল পাঁচটা পর্যন্ত ৪৩ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। আজ মঙ্গলবার থেকে বৃষ্টিপাত কমলেও ২৯ এপ্রিল থেকে বৃষ্টির মাত্রা বাড়তে পারে।

চাল ও টাকা বরাদ্দ

জেলার ফসলহারা দেড় লাখ পরিবারকে প্রতি মাসে বিনা মূল্যে ৩০ কেজি করে চাল ও ৫০০ টাকা করে দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে। গতকাল বিকেলে জেলা প্রশাসক বলেন, ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য ৫২ লাখ ৬৫ হাজার টাকা এবং ১ হাজার ৭০ মেট্রিক টন চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। নতুন করে হাওর তলিয়ে ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় সাহায্যের পরিমাণ বাড়ানোর চেষ্টা করা হচ্ছে।

জেলার সিভিল সার্জন আশুতোষ দাশ জানিয়েছেন, পানিদূষণ থেকে জনস্বাস্থ্য ঝুঁকি এড়াতে জেলার ৮৭ ইউনিয়ন পরিষদে একটি করে মেডিকেল বোর্ড গঠন করা হয়েছে। গতকাল স্বাস্থ্য ও পরিবারকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের একটি প্রতিনিধিদল হাওর পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে এসে স্বাস্থ্য সচেতনতা বিষয়ে মতবিনিময় সভায় এ সিদ্ধান্তের কথা জানায়। সিভিল সার্জন বলেন, জেলা পর্যায়ে নিয়ন্ত্রণকক্ষ খোলা হয়েছে। প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুত আছে। উপজেলা পর্যায়ের সব কর্মকর্তাকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে। কেননা পানিদূষণের কারণে চর্মরোগ, ডায়রিয়াসহ নানা অসুখ ছড়িয়ে পড়তে পারে। তাই মেডিকেল প্রতিনিধিদল সবাইকে সচেতন করবে এবং সেবা দেবে।

হাওরে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধিদল

সার্বিক পরিস্থিতি দেখতে গতকাল সিলেট কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি প্রতিনিধিদল হাওর এলাকা পরিদর্শন করেছে। কৃষি অনুষদের ডিন এ এফ এম সাইফুল ইসলামের নেতৃত্বে ১৫ জনের একটি দল গতকাল সকালে দেখার হাওরের বিভিন্ন জায়গা ঘুরে পানি, মাটি, মরা হাঁস, মাছের নমুনা সংগ্রহ করে। সাইফুল ইসলাম বলেন, হাওর এলাকায় এভাবে অসময়ে ঢল সামনের দিনগুলোতেও আসতে পারে। তাই এখানে এমন ধান লাগাতে হবে যেগুলো অল্প দিনে পাকে।

নেত্রকোনায় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনামন্ত্রী

ভ্রাম্যমাণ প্রতিনিধি জানান, বন্যাকবলিত হাওরাঞ্চল পরিদর্শন ও ত্রাণ কার্যক্রম পর্যবেক্ষণে গতকাল নেত্রকোনায় এসেছেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, যুব ও ক্রীড়া উপমন্ত্রী আরিফ খান জয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব শাহ কামাল।

রাত আটটায় জেলা প্রশাসনের সভাকক্ষে জেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির সভা হয়েছে। জেলা প্রশাসক মুশফিকুর রহমানের সঞ্চালনায় সভায় প্রধান অতিথি ছিলেন ত্রাণমন্ত্রী। সভায় অধিকাংশ কর্মকর্তা হাওরে বন্যা পরিস্থিতির সঠিক তথ্য দিতে পারেননি। মন্ত্রী তাঁদের ভর্ৎসনা করেন। তিনি কর্মকর্তাদের সরাসরি মাঠে গিয়ে পরিস্থিতি দেখতে ও সাহসিকতার সঙ্গে মানুষের পাশে দাঁড়াতে বলেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: