ঢাকা | মঙ্গলবার, ১ জুলাই ২০২৫, ১৭ আষাঢ় ১৪৩২
১১১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী সাভারে ঘাপটি মেরে থাকা নোয়াখালীর কুখ্যাত মুনসুর রাজাকার

সাভার থানায় অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার রাজাকারের পুত্র কিভাবে বহাল তবিয়তে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরছে ?

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:৩৫

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২৩ ডিসেম্বর ২০১৯ ০৮:৩৫

১১১ জন বীর মুক্তিযোদ্ধা হত্যাকারী সাভারে ঘাপটি মেরে থাকা নোয়াখালীর কুখ্যাত মুনসুর রাজাকার এবং ২০১৬ সালে সাভার থানায় অস্ত্র ও গুলিসহ গ্রেফতার হওয়া এই রাজাকারের পুত্র এ,এইচ,এম শামসুদ্দিন পলাশ স্বাধীনতার এত বছর পরেও কিভাবে বহাল তবিয়তে প্রকাশ্য দিবালোকে ঘুরসে?
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে একজন দু’জন নয় ১১১ জন মুক্তিযোদ্ধাকে সরাসরি হত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত এই আবুল কালাম ওরফে এ কে এম মনসুরই হলো সাভারে ঘাপটি মেরে থাকা জাসাস নেতা রাজাকার মনসুর।

ধ্বসে পড়া রানা প্লাজার ঠিক উল্টো দিকে থাকা মনসুর মার্কেটটির মালিক রাজাকার মনসুর। মার্কেটটির নাম "মনসুর মার্কেট হলেও স্থানীয়রা কেউ সে নামে ডাকে না, ডাকে রাজাকারের মার্কেট হিসেবেই।

সাভারের বাজার রোড ও বিরুলিয়া রোডেও এই রাজাকারের রয়েছে বিলাসবহুল বহুতল ভবন।

অস্ত্রসহ ২০১৬ সালে গ্রেফতার হওয়া তার কু পুত্রের বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ বানচাল করার অভিযোগও রয়েছে। মাদক এবং নারীলিপ্সুক এই পলাশ তার দুই চারজন সাঙ্গোপাঙ্গ নিয়ে সব ধরনের কু-কর্ম করে যাচ্ছে প্রতিনিয়ত। ইদানীং পলাশ এস,এস,সি ৯৭/এইচ,এস,সি ৯৯ নামক এক ফেসবুক গ্রুপের সাথে মিশে গিয়ে তার পরিচয় গোপন করার চেষ্টায় লিপ্ত। মুখোশধারী এই রাজাকারের বংশধর এখন গোপনে সরকার বিরোধী কর্মকান্ডে ইন্ধন যোগায় এবং প্রচুর অর্থের জোগান দিচ্ছে নিয়মিত।

এই রাজাকারের বিরুদ্ধে সাভারে প্রথম আন্দোলনে নেমেছিলেন সাভার উপজেলা আওয়ামী লীগের যুগ্ম সম্পাদক মঞ্জুরুল আলম রাজীব ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা তেতুঁলঝোড়া ইউনিয়ন চেয়ারম্যান ফকরুল আলম সমর।

সেই আন্দোলনের জের ধরে এই দুজনকে জোট সরকারের আমলে একের পর এক মিথ্যে মামলায় জর্জরিত হয়ে সাভার ছাড়তে হয়েছিল।

তারপরের ইতিহাস অন্যরকম। কেবলই সুবিধে নেবার ইতিহাস। উপরে রাজনৈতিক মতাভেদ আর নিচে সন্ধি ও সখ্যতার ইতিহাস। রাজনৈতিকভাবে এই রাজাকারের কাছ থেকে অনেকে সুবিধা নিয়ে মুখে কুলুপ এটে বসে আছেন।আবার অনেকে ভয়ে মুখ খোলে না।

ঢাকা জেলা ছাত্রলীগের সে সময়ের সভাপতি মঞ্জুরুল আলম রাজীব বলেছেন আমরা এই রাজাকারের বিরুদ্ধে জনমত গঠন করেছিলাম। আন্দোলন করেছিলাম। পদযাত্রা, পথসভা, ঝাড়ু মিছিল করেছিলাম। এর জেরে বিএনপি জোট সরকারের সময় আমাদের মিথ্যে মামলা দিয়ে এলাকা ছাড়া করা হয়েছিলো। কিন্তু পরবর্তীতে আঁতাতের রাজনীতির বিনিময়ে পার পেয়ে যায় এই রাজাকার।

গণহত্যা করে নোয়াখালী ছেড়ে আসা এই রাজাকার সাভারে গেড়েছেন নিরাপদ আস্তানা। বৃহত্তর নোয়াখালী সমিতির নামে সাভারে বসবাসকারী নোয়াখালীর বাসিন্দাদের নিয়ে গড়ে তোলেন নোয়াখালী সমিতি। যোগ দেন বিএনপিতে। হয়ে উঠেন জাতীয়তাবাদী সামাজিক সংস্থা জাসাসের কেন্দ্রীয় নেতা।

ক্রমেই হয়ে উঠেছিলেন বি,এন,পি রাজনীতির কথিত গডফাদার। সংসদ নির্বাচন থেকে শুরু করে ইউপি নির্বাচন এমনকি স্কুল কমিটির নির্বাচন হলেও সবাই ছুটতেন এই রাজাকারের কাছে। দোয়া আর আশীর্বাদ নিতে। গত আওয়ামী লীগের আমলেও বহাল তবিয়তেই ছিলেন এই যুদ্ধাপরাধী।

মনসুর মার্কেটে অফিস খুলে করতেন বিচার সালিস। আর নেপথ্যে সক্রিয় ছিলেন যুদ্ধাপরাধের বিচার বানচাল করার ষড়যন্ত্রে।

পুড়িয়ে মানুষ হত্যা,গাড়িতে আগুনসহ নানা ভাবে যুদ্ধারপাধীদের বিচারে বিঘ্ন সৃষ্টিতে নানা তৎপরতার বিষয় উঠে আসে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো পুলিশ রিপোর্টে।

একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধকালীন নোয়াখালীর সুধারাম থানায় ১১১ জনকে হত্যাসহ তিনটি অভিযোগ রয়েছে কুখ্যাত এই রাজাকারের বিরুদ্ধে। প্রসিকিউশনের আনা অভিযোগে বলা হয়, একাত্তরের ১৫ জুন নোয়াখালীর সুধারামে শতাধিক ব্যক্তিকে হত্যা-গণহত্যায় নেতৃত্ব দেন রাজাকার একেএম মনসুরসহ পাঁচ আসামি।

তদন্ত সংস্থার প্রতিবেদন অনুযায়ী, একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে নোয়াখালী জেলার সুধারাম থানার এই পাঁচ রাজাকারের বিরুদ্ধে তিনটি অভিযোগ আমলে নেন ট্রাইব্যুনাল। গত বছরের ১৪ অক্টোবর পাঁচজন আসামির মধ্যে গ্রেফতারকৃত চারজনকে ট্রাইব্যুনালে হাজির করা হয়।

বিচারপতি আনোয়ারুল হকের নেতৃত্বে তিন সদস্যের আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল অভিযোগ আমলে নিয়ে যুদ্ধাপরাধী রাজাকার আবুল কালাম ওরফে মনসুরকে গ্রেপ্তারে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তির নির্দেশ দেন।

কিন্তু তার আগেই বিচার এড়াতে পুলিশ ও স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাদের সাথে আঁতাত করে থাইল্যান্ড পাড়ি জমান কুখ্যাত রাজাকার আবুল কালাম ওরফে একেএম মনসুর।এখন এলাকায় লোকজনের কাছে জানা যায় সে এখন ফ্রান্সে অবস্থান করছে। আর তার ছেলে অবৈধ উপায়ে উপার্জন করা লক্ষ লক্ষ টাকা হুন্ডির মাধ্যমে তার বাবার কাছে পাঠাচ্ছে নিয়মিত এবং সে নিয়মিত আনন্দ, ফূর্তি, মাদক আর নারীলিপ্সা নিয়ে মেতে আছে।

আদালত ততকালীন তার বিচারের সময় এয়ারপোর্টে কিভাবে চোখ ফাকি দিয়ে এই রাজাকার বিদেশে পাড়ি দিলো তা নিয়ে বিস্ময় প্রকাশ করেছেন।

মাননীয় সেতুমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সম্মানিত সাধারণ সম্পাদক জনাব ওবায়দুল কাদেরের বক্তব্য অনুযায়ী রাজাকার আর তাদের বংশধরদের এখনই বিচারের আওতায় এনে প্রতিহত করার জোর দাবি জানিয়েছেন স্বাধীনতার স্বপক্ষের মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম সহ সারা দেশের মানুষ।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: