ঢাকা | রবিবার, ১৯ মে ২০২৪, ৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

মানবতার জননীর মত, বাড়িওয়ালারা মানবিকতার পরিচয় দিন

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২০ ০৫:২৮

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২৩ এপ্রিল ২০২০ ০৫:২৮

 

মানবতার জননীর মত, বাড়িওয়ালারা মানবিকতার পরিচয় দিন

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনা দিন রাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে দেশের মানুষের জন্য। দেশের সাধারন মানুষ যাতে এক বেলাও না খেয়ে থাকতে না হয় তার জন্য চেষ্টা করে যাচ্ছেন । হত দরিদ্র, দরিদ্র, নিম্নবিত্তদের জন্য অনেক ত্রাণ ও নগদ অর্থ দিচ্ছে। ৫ কোটি মানুষকে খাদ্যের আওতায় এনেছেন কিন্তু মধ্যবিত্ত যারা আছে যারা মাসিক বেতনে চাকরি করে বা ব্যাবসা করে সংসার চালায় তাদের জন্য কিছু করা উচিত। অনেকেরই বাসা ভাড়া বা অফিস ভাড়া দেওয়া কষ্ট সাধ্য হয়ে গেছে।

পৃথিবীজুড়ে মানবজাতির জীবনে নেমে আসা করোনার অভিশাপে জীবন ও সম্পদ আজ লন্ডভন্ড।মহামারি করোনাভাইরাস ছড়িয়ে পড়েছে আমাদের প্রিয় বাংলাদেশেও । দেশজুড়ে ঘরবন্দি মানুষ। আয়-উপার্জন বন্ধ খেটে খাওয়া মানুষদের। আর এই সংকট মোকাবিলায় যে যতটুকু পারছে ত্রাণ তহবিলে সাহায্য করে যাচ্ছে। এই সাহায্যে এগিয়ে আসলেন এক ভিক্ষুক। তিনি ইউএনওর করোনা তহবিলে ১০ হাজার টাকা দান করেছেন।গত দুই বছর ধরে তিনি ৫-১০ টাকা করে জমিয়ে ১০ হাজার টাকা সঞ্চয় করেন। ইচ্ছে ছিল এবার বর্ষাকালের আগেই ঘর ঠিক করবেন। কিন্তু দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর মানুষের দুঃখকষ্ট দেখে ওই বৃদ্ধ ঠিক থাকতে পারলেন না। তাদের কষ্ট দেখে তিনি সিদ্ধান্ত নেন ওই টাকা করোনা তহবিলে দান করবেন। যাতে গরিব মানুষের কাজে লাগে।ভিক্ষুক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন বলেন, ভাঙ্গা ঘর ঠিক পরেও করা যাবে । কিন্তু দেশের এখন খুব বিপদ। দেশের মানুষ কষ্ট আছে তাই তিনি সবটুকু দিয়ে মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছেন।একেই বলে মানবতা।

এর মধ্যে অনেক বাড়িওয়ালা একমাসের ভাড়া মওকুফ করেছেন। কত মানুষ খাবার নিয়ে মানুষের দুয়ারে যাচ্ছে। এই মানবিক বাংলাদেশই আমাদের পরিচয়। অপর দিকে কিছু অমানবিক বাড়িওয়ালারা মাত্র এক মাসের ভাড়া না দিতে পারায় ঝড়ের মধ্যে দুই মাসের শিশুসন্তানসহ ভাড়াটিয়াকে বাসা থেকে জোর করে বের করে দেয়। আবার কিছু বাড়িওয়ালি আছে যাকে সমস্যার কথা বলা হলেও ভাড়াটিয়াদের বারবার ফোন করে অতিষ্ট করে তোলে।পরে ভাড়াটিয়ারা বাধ্য হয় ভাড়া দিতে। হয়তো কারো কাছে খাবার টাকা টুকুও নাই।

আমি আজ অমানবিক বাড়িওয়ালা/বাড়িওয়ালিদের বলতে চাই আপনাদের বাড়ি গাড়ি থাকতে পারে কিন্তু মানবিকতার দিক থেকে আপনারা ভিখারী। ভিক্ষুক মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন থেকেও আপনারা ভিখারী।ভিক্ষুক নাজিম উদ্দিনের কাছ থেকে আপনাদের শিখতে হবে মানবিকতা কী? কিভাবে অসহায় মানুষের পাশে দাঁড়াতে হয়। নাজিম উদ্দিনের মতো ভিক্ষুক চোখে আঙ্গুল দিয়ে আপনাদের দেখিয়ে দিয়েছে বাড়ি গাড়ি থাকলেই বড় লোক বা বড় মানুষ হয় না। বড়লোক হতে হলে একটা বড় মনের দরকার হয়।

বাড়িওয়ালাদের কাছে অনুরোধ এক মাসের ভাড়া মওকুফ করতে না পারেন, অর্ধেক করেন, তা করতে না পারেন পরিশোধের সময় দিন। দুঃসময় থাকবে না। অমানবিকতার বেদনা যন্ত্রণা কলঙ্কের ইতিহাস হয়ে থাকবে। যারা ভাড়া দেন সেই বাড়িওয়ালার থাকার জায়গা আছে, অন্য আয়ও আছে অনেকের। কিন্তু ভাড়াটের হয়তো ছোট ব্যবসা থাকলেও বন্ধ। চাকরি বাকরি করে থাকলে বেতন হয়নি। তাই এই সময়ে অমানবিক নয়, মানবিক হন। যার যে ভূমিকায় মানুষের পাশে দুর্দিনে দাঁড়াবার সামর্থ তা নিয়েই পাশে দাঁড়ান। বাড়িওয়ালারা মানবিক হন। কঠিন অমানবিক দুঃসময়ের মুখে আজ মানবজাতি, ভুলবেন না। সবাইকে এক হয়েই জিততে হবে, বাঁচতে হবে। 

করোনা পরিস্থিতি আজ বিশ্বকে এমন এক জায়গায় দাড় করিয়েছে আমরা কেউ জোর দিয়ে বলতে পারবোনা যে আমি আক্রান্ত হবনা বা আমি বেঁচে থাকবই।বেঁচে থাকবে শুধু মানবিকতার দৃষ্টান্ত। তাই বাড়িওয়ালাদের বলছি ভারাটিয়াদের সাথে খারাপ ব্যবহার করবেন না। ভাড়াটিয়ারাই কিন্তু আপনাদের লক্ষী।ভাড়াটিয়া না থাকলে বাড়িওয়ালাদের কী দাম আছে? লক্ষীকে যত্নে রাখুন তাতে কিন্তু আপনাদেরই লাভ। অমানবিকতার বেদনা যন্ত্রণা কলঙ্কের ইতিহাস হয়ে থাকবেন না।

পৃথিবীজুড়ে মানবজাতির জীবনে নেমে আসা করোনার অভিশাপে জীবন ও সম্পদ আজ লন্ডভন্ড। গোটা মানবজাতি আজ লড়ছে করোনাভাইরাসের বিরুদ্ধে। বেঁচে থাকার কি করুণ আকুতির মধ্যে আজ লাশের মিছিলে মর্মান্তিকভাবে প্রিয়জনের স্নেহ সান্নিধ্য ছাড়াই চলে গেছেন পৌনে দু'লাখ মানুষ। ২৫ লাখের বেশি মানুষ আজ আক্রান্ত। প্রিয়জন পাশে নেই। একা নিঃসঙ্গ। কোটি কোটি মানুষ এখন কোয়ারেন্টিনে। লকডাউনের পৃথিবীজুড়ে এক বিভীষিকাময় পরিস্থিতি।

এমন বিরল ভয়ঙ্কর ভাইরাস কখনো আসেনি পৃথিবীতে। এমন ভয়ঙ্কর ধ্বংসলীলার সামনে কখনো পৃথিবীর মানবজাতি একযোগে অসহায় হয়নি। আজ গরিব ধনী মিলে মিশে একাকার।বাতাস আজ বেদনায় ভারি। নিস্তব্ধ নিথর পৃথিবী বিষাদময়। ব্যবসা-বাণিজ্য বন্ধ। মুখ থুবড়ে পড়ছে অর্থনীতি। ধর্ণাঢ্য দেশগুলো আজ অসহায় ক্ষুদ্র ভাইরাসটির কাছে। কেউ পারছে অসহাদের পাশে  দাঁড়িয়েছে, আবার কেউ অসহায়দের ত্রাণ চুরি করেছে।মানবিক বিপর্যয়ের এ পৃথিবীতে ভয়ঙ্কর ছোঁয়াচে রোগে ছেলে মাকে জঙ্গলে ফেলে চলে গেছে। পিতা মারা গেছে, মা আক্রান্ত আইসোলেশনে, শিশু মাকেও কাছে পায় না। ডাক্তার, পুলিশ, সেনাবাহিনী, ও সংবাদকর্মীরা জীবনের ঝুঁকি নিয়ে কাজ করছেন। তাদের মধ্যে অনেকে আক্রান্ত,অনেকে মারা গেছেন। তবু ডাক্তাররা লড়ছে মানুষকে বাঁচাতে। আমরা সবাই সচেতন হলে বাঁচব আমি, বাঁচবে আমাদের পরিবার, বাঁচবে দেশ, বাঁচবে পৃথিবী ও বাঁচবে অর্থনীতি।

 

তন্দ্রা বিশ্বাস মুকু

লেখক



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: