
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সমর্থনে একে একে সড়কে নামছে রাজধানীর সরকারি সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। সবাই নিজ নিজ জায়গা থেকে সরব হচ্ছেন। ক্ষোভ ঝারছেন সড়কে। ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের ওপর চলমান মারধরের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত সরকারি ৭ কলেজের শিক্ষার্থীরা পুরো ঢাকা শহর অচল করে দেয়ার হুমকি দিয়েছেন।
ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের সঙ্গে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীদের ধারাবাহিক সংঘর্ষে বেশ হতাহতের ঘটনা ঘটছে। এর জেরে ঢাকা কলেজের ছাত্রবাস বন্ধের ঘোষণা দিয়েও রাস টানা যায়নি আন্দোলনে। এই ঘোষণায় শিক্ষার্থীরা ফের সড়কে নেমে প্রতিবাদ জানিয়েছেন।
মঙ্গলবার সড়কে নেমে বিক্ষোভ দেখিয়েছে ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীরা। ইডেন মহিলা কলেজের ছাত্রীরা বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা কলেজের দিকে যেতে চাইলে নিউমার্কেটের ব্যবসায়ীরা বাধা দেন। ব্যবসায়ীদের বাধার মুখে ছাত্রীরা নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নেন। প্রায় শ খানেক ছাত্রী এ বিক্ষোভে অংশ নেন। বেলা তিনটার কিছু পরে ইডেন কলেজ থেকে মিছিল নিয়ে সড়কে বের হয় একদল ছাত্রী। মিছিলটি নীলক্ষেত মোড় হয়ে ঢাকা কলেজের দিকে যাচ্ছিল। এ সময় নিউমার্কেটের ফটকের সামনে ব্যবসায়ী ও দোকানকর্মীরা মিছিলটির সামনে দাঁড়িয়ে যান। দুই পক্ষের মধ্যে কিছুক্ষণ বাগ্বিতণ্ডা চলে। এরপর ছাত্রীরা মিছিল নিয়ে নীলক্ষেত মোড়ে এসে অবস্থান নেন।
নীলক্ষেত মোড়ে অবস্থান নিয়ে ছাত্রীরা বিভিন্ন স্লোগান দেন। ঢাকা কলেজের ছাত্রদের ওপর হামলার বিচার চান তাঁরা। পুলিশের ভূমিকার সমালোচনা করেও তাঁরা স্লোগান দেন।
ইডেন কলেজের ছাত্রীদের হাতে থাকা প্ল্যাকার্ডে ‘স্ট্যান্ড উইথ ঢাকা কলেজ’, ‘আমার ভাইয়ের রক্ত, বৃথা যেতে দেব না’, ‘ঢাকা কলেজের ভাইদের কিছু হলে ইডেন কন্যারা জ্বালাবে আগুন ঘরে ঘরে’ প্রভৃতি লেখা ছিল। বিকাল চারটার দিকে ইডেনের ছাত্রীরা নীলক্ষেত মোড় থেকে সরে যান।
নিউমার্কেটে সংঘর্ষের ঘটনায় সরকারি তিতুমীর কলেজের শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ সমাবেশ করেছে। ব্যবসায়ীদের শাস্তির আওতায় আনার জন্য দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। বুধবারের মধ্যে দাবি মানা না হলে প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেন বিক্ষোভকারী। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় কলেজের প্রধান ফটকে বিক্ষোভ মিছিলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের পাশে একাত্বতা পোষণ করেন তিতুমীর কলেজে শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা।
বিক্ষোভ মিছিলে সাধারণ শিক্ষার্থীদের সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তিলোত্তমা সিকদার, তিতুমীর কলেজে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিপন মিয়া, সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়লসহ অন্যরা।
এ সময় কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তিলোত্তমা সিকদার বলেন, ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা মানে আমাদের উপর হামলা। ঢাকা কলেজের সাধারণ শিক্ষার্থীদের সাথে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ সব সময় আছে। আমরা হামলার ঘটনার সুষ্ট তদন্ত করে বিচারের দাবি জানাই।
বিক্ষোভ মিছিলে তিতুমীর কলেজে শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি রিপন মিয়া বলেন, শুধু ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর হামলার করা হয়নি হামলা করা হয়েছে বাংলাদেশের সকল শিক্ষর্থীদের উপর।ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের পাশে বাংলাদেশ ছাত্রলীগে আছে। যদি আর কোনো শিক্ষার্থীদের উপর হামলা হয় তাহলে হকার ও ব্যবসায়ী সন্ত্রাসীদের কঠোর ভাবে দমন করা হবে।ঢাকা কলেজের পাশে তিতুমীর কলেজের ৫৮ হাজার শিক্ষার্থী আছে। আর কোনো হামলার ঘটনা ছাত্ররা দেখতে চায় না। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জুয়েল মোড়ল বলেন, নীলক্ষেত- নিউমার্কেটের ব্যবসায়ী ও হকাররা শিক্ষার্থীদের উপর যে হামলা চালিয়েছে তার কঠোর প্রতিবাদ জানাই।বাংলাদেশের ছাত্র সমাজ এমন ঘটনা মেনে নিবে না।শিক্ষার্থীরা যদি একবার জেগে উঠে কোনো ভাবেই তাদের থামানো যাবে না।শিক্ষার্থীদের উপর হামলার বিচার যদি না করে তাহলে কঠোর ভাবে প্রতিহত করা হবে।
এ সময় বিক্ষোভকারী শিক্ষার্থীরা আরও বলেন, যেখানে ক্যাম্পাসগুলোতে শিক্ষার পরিবেশ সুষ্ট সেখানে ব্যবসায়ী ও হকাররা ক্যাম্পাসে হামলা ও ঢাকা কলেজের শিক্ষার্থীদের উপর হামলা কোনো ভাবেই মেনে নেয়া যায় না।আমরা তিতুমীর কলেজের হাজারো শিক্ষার্থী তা মেনে নিবে না। যদি এর সুষ্ট বিচার না করা হয় আমরা প্রয়োজনে কঠোর আন্দোলনের ডাক দিবো।
এদিকে কবি নজরুল সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীরা ঢাকা কলেজের পাশে দাঁড়িয়েছেন। মঙ্গলবার সকালে কবি নজরুল সরকারি কলেজের মূল ফটকে এক মানববন্ধনে তারা ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই মেডিকেলে কেন, প্রশাসন জবাব চাই’, ‘হামলাকারীর কালো হাত ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’ এসব স্লোগান দেন।
বিক্ষোভ মিছিল শেষে ইতিহাস বিভাগের শিক্ষার্থী শিমুল আহমেদ বলেন, ঢাকা কলেজে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে নিউ মার্কেটের ব্যবসায়ীরা। তাদের সাহস হয় কীভাবে সাধারণ শিক্ষার্থীদের গায়ে হাত তোলার? পুলিশও রাবার বুলেট ও টিয়ার শেল ছুঁড়েছে। শিক্ষার্থীদের ওপর এমন বর্বর হামলার প্রতিবাদ জানাই। দ্রুত বিচার না হলে আমরা সাত কলেজ পুরো ঢাকা শহর অচল করে দেব।
ইংরেজি বিভাগের শিক্ষার্থী বাপ্পী বলেন, ব্যবসায়ী ও পুলিশ মিলে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছে। আমরা এর বিচার চাই। দ্রুত বিচার না হলে কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হব। বন্ধু ঢাকা কলেজ থেকে কল দিয়ে বলছে, আমাদের বাঁচা।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: