ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১
জলাবদ্ধতা থেকে নগরবাসীর মুক্তি কবে

জলাবদ্ধতার দায় জনগণের!

shahidul Islam | প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০১৭ ১১:০৯

shahidul Islam
প্রকাশিত: ২৭ জুলাই ২০১৭ ১১:০৯

অধিকারপত্র প্রতিবেদক : রাজধানীর জলাবদ্ধতা পরিদর্শনে রাজপথে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটির দুই মেয়র
সামান্য বৃষ্টি হলেই রাজধানীর সড়ক গুলোতে তীব্র জলাবদ্ধতা দেখা দেয়। এই জলাবদ্ধতা নিয়ে নির্বাচনের আগে দুই মেয়রের প্রতিশ্রুতি থাকলেও এখন যেন ভুলে গেছেন তারা। জলাবদ্ধতা নিরসনের মূল প্রতিষ্ঠান ঢাকা ওয়াসাও তার দায়িত্ব থেকে সরে দাঁড়িয়েছে। এখন নগরীতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হলে একে অপরকে দোষারোপের সংস্কৃতিই দেখে যাচ্ছেন নগরবাসী।
গতকাল ধানমণ্ডির জলাবদ্ধতাপ্রবণ সড়ক পরিদর্শন করতে এসে ঢাকা দক্ষিণের মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকন আবারও বলেন, এই জলাবদ্ধতার দায় ঢাকা ওয়াসার। আর উত্তর সিটির মেয়র অনিসুল হক বলছেন, তার হাতে কোনো ক্ষমতা বা জাদু নেই।
এদিকে, ঢাকা ওয়াসার সাফ জবাব, পৃথিবীর কোনও দেশে যারা বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করে, ময়লা পানি তাদের দায়িত্বে থাকে না। এমন কি দেশের ভেতরে চট্টগ্রাম শহরেও এই দায়িত্ব চট্টগ্রাম ওয়াসার কাঁধে নেই। শুধু ঢাকা শহরই ব্যতিক্রম।

নগরীর জলাবদ্ধতার যখন এমন অবস্থা তখন এর জন্য সমস্যার গভীরে না গিয়ে বিভিন্ন সময়ে উল্টো নাগরিকদেরও দায়ী করেছেন দুই মেয়র। বিভিন্ন সময়ে ঢাকা উত্তরের মেয়র আনিসুল হক বলেছেন, মেয়র কিংবা তার গুটি কয়েক কর্মকর্তাকে দিয়ে এই শহরের সমস্যাগুলো সমাধাণ করা সম্ভব না। আর দক্ষিণের মেয়র সাঈদ খোকন প্রত্যেক নগরবাসীকে মেয়রের ভূমিকা পালন করার আহ্বান জানিয়েছেন।
জলাবদ্ধতার দায়িত্ব কোনও সংস্থা নিতে না চাইলেও আইনেই বিষয়টি স্পষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। ১৯৮৯ সালে শহরের পানি নিষ্কাশনের মূল দায়িত্ব দেওয়া হয় ঢাকা ওয়াসাকে। পাশাপাশি এ কাজে যুক্ত হয় ঢাকা সিটি করপোরেশনসহ আরও কয়েকটি সংস্থা। অন্য প্রতিষ্ঠানগুলো দায়িত্ব পালন করলেও ঢাকা ওয়াসা তার মূল দায়িত্ব থেকে সরে গিয়ে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহের নামে এখন কোটি কোটি টাকার প্রকল্প নিয়ে ব্যস্ত। ফলে ওয়াসার এই ব্যর্থতার দায় যাচ্ছে সিটি করপোরেশনের ঘাড়ে। তাই দুই সিটি করপোরেশন ওয়াসার ড্রেনেজ ব্যবস্থা নিয়ে নিতে চায়।

ঢাকার জলাবদ্ধতা নিয়ে যখন তিনটি সংস্থা একে অপরকে দোষারোপ করছে ঠিক তখন জলাবদ্ধতা নিরসনের জন্য আন্তঃবিভাগীয় সমন্বয় সভা করেছেন ঢাকা উত্তর সিটি মেয়র আনিসুল হক। চলতি মাসের ১৬ তারিখে অনুষ্ঠিত ওই বৈঠকে ছিলেন, স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী খন্দকার মোশাররফ হোসেন, গৃহায়ণ ও গণপূর্ত মন্ত্রী ইঞ্জিনিয়ার মোশাররফ হোসেন, পানি সম্পদমন্ত্রী আনিসুল ইসলাম মাহমুদ ও ঢাকা ওয়াসা এমডি ইঞ্জিনিয়ার তাকসিম এ খানসহ বিভিন্ন সংস্থার প্রতিনিধিরা। ওই বৈঠকে জলাবদ্ধতা নিরসনে ঢাকা ওয়াসাকে ব্যর্থ আখ্যা দিয়ে তার দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে নেওয়ার সিদ্ধান্ত দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রী। তবে সিদ্ধান্ত হলেও তা পুরোপুরি কার্যকর হতে আরও অনেক সময় লাগবে বলে মনে করেন আনিসুল হক। অবশ্যই সেদিনই ওয়াসার এই ড্রেনেজ ব্যবস্থাকে বিকলাঙ্গ শিশুতুল্য আখ্যা দিয়ে তাকে সুস্থ করে দেওয়ার দাবিও জানিয়েছিলেন আনিসুল হক।
গতকাল রাজধানীর মিরপুর এলাকার সাংবাদিক আবাসিক এলাকার খাল পরিদর্শনে গিয়ে আনিসুল হক বলেন, ‘গত সপ্তাহে আমরা কো-অর্ডিনেশন মিটিং করেছি। ওয়াসা বলেছে, মেয়রকে দায়িত্ব দিয়ে দাও। আমরা বলেছি, আমরা দায়িত্ব নিতে চাই। কিন্তু কিভাবে? টোটাল শহরই বন্ধ হয়ে গেছে। কাল-পরশুর মধ্যে সমাধান হবে না। আমরা আশা করি বৃষ্টি আরও কম হোক। মেয়রের হাতে আসলে কোনও জাদু নেই। কারও হাতেই কোনও জাদু নেই। যেভাবে আমরা খাল বন্ধ করে রেখেছি সেখানে মেয়র কী করবে? মেয়রের হাতে তো ক্ষমতা নেই দখলকারীদের তুলে দেওয়ার।’
রাজধানীর রাজপথে ভ্যানে করে পানি পারাপার সেবা

ঢাকার বৃষ্টি মানেই জলাবদ্ধতা। আর জলাবদ্ধতার দায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট তিন সংস্থার কাদা ছোড়াছুড়িতে অতিষ্ঠ নগরবাসী। নির্বাচনের সময় আনিসুল হক সব সমস্যা চিহ্নিত করে সমাধান যাত্রা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু তিনিই এখন বলছেন, আমার হাতে কোনও ক্ষমতা নেই। অপরদিকে সাঈদ খোকন এই জলাবদ্ধতাকে সবার আগে প্রাধান্য দিবেন বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন।
তিন সংস্থার প্রধানদের এমন অবস্থানে নগরবাসীর প্রশ্ন, জলাবদ্ধতার দায় যদি তারা কেউ নিতে না চায়, তাহলে এই দায় কার? সম্প্রতি জলাবদ্ধতা নিয়ে অনুষ্ঠিত ডিএনসিসির এক অনুষ্ঠানে নগর পরিকল্পনাবিদ মোবাশ্বের আলী মেয়র আনিসুল হককে উদ্দেশ করে বলেন, ‘কোনও সংস্থাই যখন এর দায় নিবে না। তাহলে জনগণই এর জন্য দায়ী!’
তার মতে, খুব দ্রুত ব্যবস্থা না নিলে এই রাজধানী ঢাকা চট্টগ্রামের মতো পরিণতির দিকে যাবে। তিনি বলেন, ‘জলাবদ্ধতা দূর করতে হলে আগে জনগণকে সঙ্গে নিয়ে একটি মাস্টার প্ল্যান তৈরি করতে হবে। এরপর কাজ শুরু করতে হবে।
অপরদিকে স্থপতি ইকবাল হাবিবের মতে, হাঁটু পানি কিংবা কোমর পানিতে দাঁড়িয়ে শুধু প্রতিশ্রুতি দিলেই হবে না। এ জন্য জনগণকে সম্পৃক্ত করতে হবে।
জলাবদ্ধতার কারণ উল্লেখ করে তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পানি নিষ্কাশনের দুটি পথ রয়েছে। প্রথমত ভূ-গর্ভে পানি শোষণ করে নেওয়া এবং অন্যটি খাল বিল ও ড্রেন দিয়ে নদীতে চলে যাওয়া। রাজধানী ঢাকায় এই দুটি পথের একটিও কার্যকর নেই। যে কারণে জলাবদ্ধতা বাড়ছে। এ থেকে মুক্তি পেতে হলে জনগণকে সম্পৃক্ত করে পরিকল্পিত উপায়ে খাল উদ্ধার করতে হবে।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: