odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

মার্কিন-ভারত বাণিজ্য যুদ্ধ: ট্রাম্পের শুল্ক, রাশিয়ার তেল ও ভূরাজনীতির টানাপড়েন

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:১৯

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:১৯

ভারত ও যুক্তরাষ্ট্রের সম্পর্ক দীর্ঘদিন ধরে অর্থনৈতিক ও কৌশলগত অংশীদারিত্বের ভিত্তিতে গড়ে উঠলেও সম্প্রতি বাণিজ্য ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধকে ঘিরে দুই দেশের মধ্যে নতুন ধরনের উত্তেজনা তৈরি হয়েছে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সর্বশেষ মন্তব্য পরিস্থিতিকে আরও তীব্র করেছে। তিনি বলেছেন, ভারত নাকি মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক শূন্যে নামাতে রাজি, যদিও বর্তমান পরিস্থিতিকে তিনি "একতরফা বিপর্যয়" বলে উল্লেখ করেছেন।

ট্রাম্পের বাণিজ্য অভিযোগ: গত সপ্তাহে যুক্তরাষ্ট্র ভারতের পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে, যার মধ্যে ২৫ শতাংশ সরাসরি জরিমানা যুক্ত হয়েছে। কারণ, নয়াদিল্লি রাশিয়া থেকে অপরিশোধিত তেল আমদানি বন্ধ করতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে। ট্রাম্পের অভিযোগ, ভারত দশক ধরে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিপুল পণ্য বিক্রি করছে, অথচ মার্কিন পণ্যের জন্য শুল্কের দেয়াল তুলে রেখেছে। তার ভাষায়, “আমরা ভারতের সাথে খুব সামান্য ব্যবসা করি, তারা আমাদের কাছে বিশাল রপ্তানি করে। এটা বহু বছরের একতরফা সম্পর্ক।”

ভারতের প্রতিক্রিয়া অবস্থান: ভারত শুল্ককে "অন্যায়, অযৌক্তিক ও অগ্রহণযোগ্য" বলছে। বাণিজ্যমন্ত্রী পীযূষ গয়াল স্পষ্ট ভাষায় জানিয়েছেন, ভারত কোনো পরিস্থিতিতে মাথা নত করবে না। অথবা দেশটি মুক্তবাণিজ্য চুক্তির জন্য প্রস্তুত—যদিও সমান শর্তে কেউ এগিয়ে আসে। নয়াদিল্লি একথাও মনে করিয়ে দিয়েছে যে, রাশিয়া থেকে তেল আমদানি তার ১.৪ বিলিয়ন জনসংখ্যার জ্বালানি নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য।

ভূরাজনীতির প্রভাব: রাশিয়া-চীন-ভারত সমীকরণ: ট্রাম্পের বক্তব্য যখন আলোচনার কেন্দ্রবিন্দু, তখনই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি তিয়ানজিনে এসসিও সম্মেলনে যোগ দেন। সেখানে তিনি চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং ও রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে বৈঠক করেন। পুতিন ও মোদির দীর্ঘ আলাপ, এমনকি গাড়িতে ৪৫ মিনিট একসাথে সময় কাটানো, আন্তর্জাতিক মহলে তাৎপর্যপূর্ণ বার্তা দিয়েছে। একদিকে ট্রাম্পের শুল্কের চাপ, অন্যদিকে চীন ও রাশিয়ার সঙ্গে ভারতের বাড়তি ঘনিষ্ঠতা—এটি নিঃসন্দেহে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি কূটনৈতিক সংকেত।

এসসিও - মার্কিন আধিপত্যের চ্যালেঞ্জ? সাংহাই কো-অপারেশন অর্গানাইজেশন (এসসিও) বর্তমানে চীন, রাশিয়া, ভারত, ইরান ও পাকিস্তানের মতো শক্তিশালী দেশগুলোকে এক ছাতার নিচে এনেছে। বিশ্লেষকদের মতে, এটি মার্কিন প্রভাববলয়ের বিকল্প একটি শক্তি হয়ে উঠছে। এই প্রেক্ষাপটে ট্রাম্পের বক্তব্য আরও স্পষ্ট করে দিচ্ছে যে, বাণিজ্য যুদ্ধ আসলে কেবল অর্থনৈতিক ইস্যু নয়, বরং এক গভীর ভূরাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতার অংশ।

মার্কিন-ভারত সম্পর্ক বর্তমানে এক জটিল মোড়ে দাঁড়িয়ে আছে। ট্রাম্পের শুল্কনীতি এবং ভারতের রাশিয়ার প্রতি জ্বালানি নির্ভরতা শুধু অর্থনীতির প্রশ্ন নয়, বরং বৈশ্বিক শক্তি–রাজনীতির নতুন বাস্তবতা তুলে ধরছে। একদিকে যুক্তরাষ্ট্র চাইছে ভারতকে নিজের ঘনিষ্ঠ বাণিজ্য ও কৌশলগত অংশীদার হিসেবে ধরে রাখতে, অন্যদিকে দিল্লি বহুমুখী সম্পর্কের মাধ্যমে স্বাধীন অবস্থান বজায় রাখতে চায়। সামনের দিনগুলোতে দেখা যাবে, ভারত কি ওয়াশিংটনের চাপ মেনে নেবে, নাকি এসসিও–কেন্দ্রিক আঞ্চলিক জোটের মাধ্যমে বিকল্প শক্তি গঠনে আরও সক্রিয় ভূমিকা নেবে।

- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: