নিউজ ডেস্ক:
ভয়, রহস্য আর অজানার প্রতি মানুষের কৌতূহল চিরকালীন। কেউ কেউ ভূতের গল্পে ভীত হয় আবার অনেকে সেই ভয়কে কাছে টেনে নেয় ভ্রমণের অজুহাতে। বিশ্বজুড়ে এমন অনেক স্থান আছে যেগুলো কেবল সৌন্দর্য নয় বরং ভয়ঙ্কর ইতিহাস অদ্ভুত পরিবেশ আর রহস্যময়তার জন্য পরিচিত। নিচে এমন সাতটি স্থান তুলে ধরা হলো যে স্থান গুলোকে বলা হয় পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ঙ্কর ও রহস্যময় জায়গা।
সেডলেক অস্যুয়ারি- চেক প্রজাতন্ত্র
চেক প্রজাতন্ত্রের সেডলেক শহরের ছোট্ট একটি ক্যাথলিক চ্যাপেলই যেন মৃত্যু ও শিল্পের মিলনস্থল। এখানে প্রায় ৪০ হাজার মানুষের কঙ্কাল দিয়ে তৈরি করা হয়েছে অভ্যন্তরীণ সজ্জা ঝাড়বাতি, ক্রুশ ও রাজবংশের প্রতীক চিহ্ন। ভয়ঙ্কর হলেও এর পেছনের কারণ ছিল বাস্তবিক ১৩শ শতকে যিশুর ক্রুশবিদ্ধ স্থানের মাটি এনে এখানে ছড়িয়ে দেওয়ায় অসংখ্য মানুষ এখানেই সমাধি নিতে চেয়েছিলেন। জায়গা কমে গেলে ১৬শ শতকে কঙ্কালগুলো শিল্পকৌশলে সাজানো হয়।
বেল উইচ কেভ- টেনেসি, যুক্তরাষ্ট্র
১৮০০ এর দশকে টেনেসির বেল পরিবারকে নাকি এক দুষ্ট আত্মা তাড়া করত। এই বেল উইচ আত্মাই নাকি পরিবারের কর্তা জন বেলকে হত্যা করে। স্থানীয়রা বিশ্বাস করে ভূতটি ছিল প্রতিবেশী এক নারী কেট ব্যাটস। এমনকি প্রেসিডেন্ট অ্যান্ড্রু জ্যাকসনও নাকি এই বাড়ি পরিদর্শনের পর ভয় পেয়ে পালিয়ে গিয়েছিলেন! এখনো পর্যটকরা জন বেলের কেবিন ও গুহাটি দেখতে যান| হয়তো খুঁজে ফেরেন সেই অদৃশ্য আত্মাকে।
লা ইসলা দে লাস মুনিয়েকাস- মেক্সিকো
মেক্সিকোর তেশুইলো হ্রদের একটি দ্বীপজুড়ে ঝুলছে শত শত ভাঙা বিকৃত পুতুল। বলা হয় ডন জুলিয়ান সানতানা নামে এক ব্যক্তি এখানে একাকী বসবাস করতেন এবং এক ডুবে মারা যাওয়া মেয়ের আত্মার উদ্দেশ্যে পুতুলগুলো ঝুলিয়ে রাখতেন। ৫০ বছর ধরে তিনি এভাবেই পুতুল সংগ্রহ করেন। এখনো দ্বীপটিতে গেলে মনে হয় যেন হাজারো চোখ একসঙ্গে তাকিয়ে আছে ভয়ঙ্কর অথচ হৃদয়ছোঁয়া।
ব্যাটলশিপ আইল্যান্ড- নাগাসাকি, জাপান
জাপানের নাগাসাকির কাছে সাগরের মাঝখানে অবস্থিত হাশিমা দ্বীপ যা দেখতে যুদ্ধজাহাজের মতো। একসময় এখানে হাজারো কয়লাখনি শ্রমিকের বসবাস ছিল। ১৯৭৪ সালে খনি বন্ধ হয়ে গেলে দ্বীপটি পরিত্যক্ত হয়। এখনো ধ্বংসপ্রায় কংক্রিট ভবনগুলো ও নিঃসঙ্গ পরিবেশে ছড়িয়ে আছে এক অদ্ভুত নিঃশব্দতা। ২০১২ সালের জেমস বন্ড চলচ্চিত্র Skyfall এ খলনায়কের গোপন আস্তানা হিসেবে এটি ব্যবহৃত হয়।
প্যারিসের ক্যাটাকম্বস– ফ্রান্স
ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসের জমজমাট রাস্তার নিচে লুকিয়ে আছে মৃত্যুর শহর। এখানে প্রায় ছয় মিলিয়ন মানুষের হাড় দিয়ে তৈরি করিডোর ও গুহা। ১৮শ শতকে শহরের কবরস্থান ভরে গেলে এসব হাড় এনে এখানে সংরক্ষণ করা হয়। তবে সাবধান! পথ হারালে তিনদিনও লাগতে পারে বের হতে| যেমনটা ঘটেছিল ২০১৭ সালে দুই কিশোরের ক্ষেত্রে।
পোভেলিয়া দ্বীপ– ইতালি
ভেনিসের কাছে ছোট এই দ্বীপটি একসময় ছিল প্লেগ আক্রান্ত রোগীদের বিচ্ছিন্ন রাখার জায়গা। পরে ১৯২০-এর দশকে মানসিক রোগীদের হাসপাতাল চালু হয়। কথিত আছে, এক নির্মম চিকিৎসক এখানেই আত্মহত্যা করেন এবং এখনো তার আত্মা দ্বীপে ঘুরে বেড়ায়। ২০১৪ সালে দ্বীপটি বিলাসবহুল হোটেলে রূপান্তরের পরিকল্পনা হলেও রহস্যজনক কারণে তা বন্ধ হয়ে যায়।
দারভাজা ক্রেটার– তুর্কমেনিস্তান
তুর্কমেনিস্তানের মরুভূমিতে রয়েছে এক ভয়ঙ্কর আগুনের গহ্বর দারভাজা ক্রেটার, যাকে অনেকে বলেন The Gateway to Hell বা নরকের দ্বার। ১৯৭১ সালে সোভিয়েত ভূতাত্ত্বিকরা গ্যাসভর্তি এক গুহায় আগুন ধরিয়ে দেন যা আজও জ্বলছে! রাতের অন্ধকারে এটি যেন অন্য কোনো গ্রহের দৃশ্য ভয়ঙ্কর অথচ মুগ্ধকর।
এই স্থানগুলো প্রমাণ করে ভয় কেবল আতঙ্ক নয় এটি কৌতূহল, ইতিহাস ও মানবিক অনুভূতিরও প্রতিচ্ছবি। পৃথিবীর এসব ভয়ঙ্কর জায়গা আমাদের মনে করিয়ে দেয় সৌন্দর্যের সঙ্গে অজানাও সমান আকর্ষণীয়।
-মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: