ঢাকা | সোমবার, ২১ এপ্রিল ২০২৫, ৮ বৈশাখ ১৪৩২
সোনার মানুষ হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে বাংলা নববর্ষ বরণ

কটি অসাম্প্রদায়িক উন্নত-সমৃদ্ধ দেশ গড়তে সোনার মানুষ হওয়ার দৃঢ় প্রত্যয়ে বাঙালি জাতি ১৪২৫ বাংলা নববর্ষকে বরণ করেছে ।

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৮:৫৩

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১৪ এপ্রিল ২০১৮ ১৮:৫৩

 

 
বিশ্বায়নের বাস্তবতায় বাঙালির আত্মপরিচয়ের তালাশে আহবানে রমনার বটমূলে সংগীতায়ন ছায়ানট ১৪২৫ বঙ্গাব্দ বরণ করেছে। সূর্যোদয়ের সাথে সাথে মর্তুজা কবিরের বাঁশিতে রাগ আহীর ভাঁয়রো পরিবেশনার মধ্য দিয়ে রমনা বটমূলে শুরু হয় ছায়ানটের প্রভাতী আয়োজন। একক ও সম্মিলিত কন্ঠে সংগীত পরিবেশনা আর কবিতায় ছায়ানটের শিল্পীরা স্বাগত জানান পহেলা বৈশাখকে। হলুদ সবুজ পোশাকে এ সময় রমনার বটমূলে প্রায় দেড় শতাধিক শিল্পী তাদের সুর-ছন্দ আর তাল-লয়ে বৈশাখের বন্দনা করে স্বাগত জানান নতুন বছর ১৪২৫-কে। তাদের সে আয়োজনে ছিলো বৈশাখের মগ্নতা, হৃদয়ে নতুনকে কাছে পাবার তৃষ্ণা আহবান।
‘মানুষ ভজলে সোনার মানুষ হবি’ এই স্লোগানে বাংলা নতুন বছরকে সাদরে বরণ করা হয়েছে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্য দিয়ে।
শনিবার সকাল ৯ টায় শোভাযাত্রাটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সামনে থেকে শুরু হয়। এরপর এটি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল, শাহবাগ ও টিএসসি মোড় ঘুরে ফের চারুকলার সামনে গিয়ে সকাল ১০টা ১০ মিনিটের দিকে শেষ হয়। ধর্ম-বর্ণ-নির্বিশেষে মঙ্গল শোভাযাত্রায় সকলের অংশগ্রহণ ও উচ্ছ্বাসে আরো দীপ্ত হয়েছে নতুন বছর ১৪২৫।
শোভাযাত্রায় আবহমান বাংলার ইতিহাস-ঐতিহ্যের সঙ্গে সাম্প্রতিক ঘটনাপ্রবাহের প্রতীকী উপস্থাপনের জন্য নানা বিষয় স্থান পেয়েছে।
শোভাযাত্রায় সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রী আসাদুজ্জামান নূর, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য মো. আখতারুজ্জামানসহ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও বিভিন্ন স্তরের মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশ নিয়েছেন। কঠোর নিরাপত্তার চাদরে মোড়ানো ছিল পুরো এলাকা।
শোভাযাত্রায় নিরাপত্তার কড়াকড়ি থাকলেও তারুণ্যের উচ্ছ্বাসের কাছে হার মানে সবকিছুই। ঢাক-ঢোলের বাদ্য আর তালে তালে তরুণ-তরুণীদের নৃত্য, হৈ-হুল্লোড় আর আনন্দ-উল্লাস মাতিয়ে রেখেছিল পুরো শোভাযাত্রা।
২০১৬ সালের নভেম্বর মাসে ইউনেস্কোর সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের তালিকায় স্থান করে নিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের উদ্যোগে হওয়া এ শোভাযাত্রা।
সাম্প্রদায়িক অশুভ শক্তিকে রুখে দেবার অঙ্গীকার নিয়ে রাজধানীর বাহাদুর শাহ পার্ক থেকে বাংলা নববর্ষের শোভাযাত্রা বের করে আওয়ামী লীগ। দলের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের শোভাযাত্রা উদ্বোধন করেন।
আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের সর্বস্তরের নেতা-কর্মীরা নববর্ষের এই শোভাযাত্রায় অংশ নেন। ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ উত্তর ও দক্ষিণ যৌথভাবে এ শোভাযাত্রার আয়োজন করে। সকাল সাড়ে ৮টায় শোভাযাত্রা শুরু হয়। ঢাক, ঢোল, বাঁশি বাজিয়ে নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রায় নানা রঙের সাজসজ্জার মধ্য দিয়ে বাঙালি ঐতিহ্য তুলে ধরা হয়। এতে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছবি শোভা পায়। ঘোড়ার গাড়ি, পিকাপ ভ্যানে চড়েও নেতা-কর্মীরা শোভাযাত্রায় অংশ নেন। শোভাযাত্রায় দুটি হাতিও রাখা হয়।
শোভাযাত্রায় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের সভাপতিম-লীর সদস্য ড. আব্দুর রাজ্জাক, ঢাকা মহানগর আওয়ামী লীগ দক্ষিণের সভাপতি আবুল হাসনাত ও সাধারণ সম্পাদক শাহে আলম মুরাদ।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, নববর্ষ উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ^বিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগ আজ বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং গেটের সামনে বিনামূল্যে রক্তের গ্রুপ নির্ণয় ও স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর আয়োজন করে। স্বেচ্ছায় রক্তদান কর্মসূচীর উদ্বোধন করেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ডা. কনক কান্তি বড়–য়া। এসময় বিশ^বিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ডা. এবিএম আব্দুল হান্নান, ট্রান্সফিউশন মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. আসাদুল ইসলাম ও পরিচালক (হাসপাতাল) ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আব্দুল্লাহ আল হারুন উপস্থিত ছিলেন।
অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, রাজধানীর আজিমপুর অগ্রণী স্কুল এন্ড কলেজের সবুজ চত্বরে আম গাছ তলায় বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। ঢাকা-৭ আসনের সংসদ সদস্য হাজী মোহাম্মদ সেলিম ও স্কুলের অধ্যক্ষ রেজাউজ্জামান ভূঁইয়া সকালে বর্ষবরণের অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন। ‘এসো হে বৈশাখ এসো এসো.....’ এই গানটির মধ্য দিয়ে অনুষ্ঠান শুরু হয়। এরপর শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন গান, নাচ, কবিতা ও ছড়া পরিবেশন করে।
জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, মঙ্গল শোভাযাত্রা ও নানা সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের মধ্যদিয়ে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি) পহেলা বৈশাখকে বরণ করে নিয়েছে।
সকালে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস থেকে একটি মঙ্গল শোভাযাত্রা বের হয়। শোভাযাত্রায় প্রধান অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামাল এবং নেতৃত্ব দেন উপাচার্য অধ্যাপক ড. মীজানুর রহমান।
শোভাযাত্রাটি জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনার প্রাঙ্গণ থেকে রায়সাহেব বাজার, তাঁতীবাজার মোড় হয়ে পুনরায় বিশ্ববিদ্যালয়ের ফিরে আসে।
শোভাযাত্রার মূল প্রতিপাদ্য ‘জাতীয় ফল কাঁঠাল’। শোভাযাত্রায় পাশাপাশি ছিল কাঁঠবিড়ালী, শেয়াল ও তাল, কামরাঙ্গাসহ দেশীয় বিভিন্ন ফল-ফলাদির প্রতিকৃতি, পুতুল, পাখি, পেঁচা ও রাজা-রানীর মুখোশ, ঘোড়া, সিকা, সরা, অন্যান্য লোকজ ঐতিহ্য, অলঙ্কৃতপাত্র ইত্যাদি। শোভাযাত্রায় গ্রাম বাংলার নৈসর্গিক দৃশ্য ফুটিয়ে তোলা হয়।
কেবল দেশের বড় শহরগুলোতেই নয়- এবারের বর্ষবরণ দেশের উপজেলা থেকে ইউনিয়ন পর্যন্ত বিস্তৃত হয়েছে।
সকল বিভাগীয় শহর, সরকারি-বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়, উপজেলা শহর ও নদীবন্দর এলাকায় আজ সকালে মঙ্গল শোভাযাত্রার মধ্যদিয়ে বাংলা নববর্ষ-১৪২৫ বরণ-উৎসব শুরু হয়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: