odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Monday, 10th November 2025, ১০th November ২০২৫

মিশনে কর্মরত বাংলাদেশীদের বিদেশী পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগের সমালোচনায় প্রধানমন্ত্রী

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ২ February ২০২০ ০৩:০৩

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ২ February ২০২০ ০৩:০৩

ঢাকা, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ : ঢাকার কয়েকটি বিদেশি মিশন সেখানে কর্মরত বাংলাদেশীদের সিটি করপোরেশন নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগ করার তীব্র সমালোচনা করে একে গর্হিত কাজ হিসাবে বর্ণনা করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ।
তিনি বলেন, ‘অনেক বাংলাদেশী নাগরিক এখানকার বিদেশী দূতাবাস এবং হাই কমিশনগুলোতে কাজ করছেন। এই মিশনগুলো তাদের (বাংলাদেশী) ঢাকা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বিদেশী পর্যবেক্ষক হিসাবে নিয়োগে মাধ্যমে একটি গর্হিত কাজ করেছে।’
আজ সকালে ঢাকা সিটি কলেজ কেন্দ্রে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট দেওয়ার পরে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘বাংলাদেশীরা কিভাবে বিদেশী পর্যবেক্ষক হয়? তারা তাদের মিশনে কাজ করছেন। মিশন তাদের বিদেশী পর্যবেক্ষক হিসেবে পাঠাতে পারে না এবং তারা সঠিক কাজ করেননি।’
প্রধানমন্ত্রী আরো বলেন, ‘ওই সব মিশনে অনেক বৈরী মানুষ কাজ করছেন। আমি তাদেরকে চিনি। এদের কারো বাবা ১৫ আগস্ট হত্যাকা-ের ষড়যন্ত্রের সাথে জড়িত ছিলেন আবার এদের মধ্যে অনেকের বাবা স্বাধীনতা বিরোধী ছিলেন।’
তিনি বলেন, ‘এদের মধ্যেই কেউ কেউ বাংলাদেশের মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় গণহত্যা ও মা-বোনের সম্ভ্রমহানী এবং এই সব জঘন্য কাজে পাকিস্তানীদের দোসরদের সহযোগিতা করেন।’
শেখ হাসিনা বলেন, তারা স্বাধীনতা বিরোধীদের উত্তরসূরী। মিশন তাদের নামই বিদেশী পর্যবেক্ষক হিসেবে অন্তর্ভূক্ত করেছে। আমি মনে করি এই কাজটা তারা ঠিক করেন নি।’
এ ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রী নির্বাচন কমিশনের ভূমিকার সমালোচনা করেন।
তিনি আরো বলেন, ‘ইসি রুলে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে যে শুধুমাত্র বিদেশীরাই বিদেশী পর্যক্ষেক হতে পারবেন। কিন্তু আমি জানি না কিভাবে কমিশন বাংলাদেশীদের বিদেশী পর্যবেক্ষক হিসেবে অনুমতি দিল। বিদেশী পর্যবেক্ষক হিসেবে তাদের গ্রহণ করে নির্বাচন কমিশন ঠিক করেনি।’
শেখ হাসিনা বলেন, নির্বাচন কমিশনের তাদের ভোটকেন্দ্রগুলোতে ঢোকার ও বিদেশী পর্যবেক্ষক হিসেবে কাজ করার অনুমতি দেয়া উচিৎ হয়নি। এরা বিদেশী মিশনগুলোতে কর্মরত বাংলাদেশী নাগরিক।
তিনি আরো বলেন, ‘তারা ভোট দিতে পারেন, তবে, পর্যবেক্ষক হিসেবে ভোটকেন্দ্রে থাকতে পারেন না।’

ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে নিয়ে বিদেশী কূটনীতিকদের উদ্বেগ সম্পর্কে এক প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আমাদের অতীত ইতিহাস সুখকর নয়, তাই তারা উদ্বেগ প্রকাশ করতেই পারেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘১৯৭৫ সালে জাতির পিতার হত্যাকা-ের পর এ দেশের মানুষের ভোটের অধিকার নিয়ে ছিনিমিনি খেলা হয়েছে।’
শেখ হাসিনা বলেন, এ দেশে নির্বাচনের নামে অতীতে হ্যাঁ-না ভোট, ১৯৯৬ সালের ১৫ ফেব্রুয়ারির নির্বাচন এবং মাগুরা ও ঢাকা-১০ আসনে নির্বাচনের নামে প্রহসন হয়েছিল।
তিনি আরো বলেন, ‘কিন্তু, আমরা ওই পরিস্থিতি থেকে ভোট প্রদানের পদ্ধতিকে বের করে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছুই নেই। যারা উদ্বেগ প্রকাশ করছেন তাদের দেশে কিভাবে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় সেই প্রমাণ আমাদের আছে।’
বিএনপি’র বিরুদ্ধে সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্ত্রাসী, মাস্তান ও জঙ্গিদের জড়ো করার বিষয়ে এক প্রশ্নের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, যখন কোন দল জনগণের ওপর থেকে বিশ্বাস হারিয়ে ফেলে, তখন তারা ভিন্ন পথ বেছে নেয়।
তিনি আরো বলেন, ‘এটাই বিএনপি’র আসল চরিত্র। দলটি অবৈধভাবে ক্ষমতা দখলের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়েছে। এদেশে তারাই ভোটে কারচুপি শুরু করে। তাই এটা খুবই স্বাভাবিক যে তারা মাস্তান ও সন্ত্রাসীদের ব্যবহার করে নির্বাচনে জিততে চাইবে।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বিএনপি জনগণের উপর কখনোই আস্থা রাখতে পারে না। তারা ডিজিটাল পদ্ধতির প্রতিও আস্থাশীল নয়।
শেখ হাসিনা বলেন, ডিজিটাল পদ্ধতিতে ভোট কারচুপি করা খুবই কঠিন। এখানে গুন্ডামী-সন্ত্রাসীর মাধ্যমে বিএনপি’র নির্বাচনে জয়ের কোন সম্ভাবনা নেই। তারা অতীতে যা করেছে, তাই করতে চাইছে।
প্রধানমন্ত্রী এ ব্যাপারে বিএনপি-কে জনগণের আস্থা অর্জনের পরামর্শ দিয়েছেন।
জনগণের আস্থাই যে কোন রাজনৈতিক দলের প্রধান শক্তি উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, আওয়ামী লীগ টানা তিনবার ক্ষমতায় এসেছে। এছাড়াও আরো একবার মিলিয়ে মোট চারবার ক্ষমতায় এসেছে। আওয়ামী লীগ মানুষের আস্থা অর্জন করেই ক্ষমতায় এসেছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মানুষ এখন এর সুফল ভোগ করছে। আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে মানুষের জীবন যাত্রার মান অনেক উন্নত হয়েছে।
তিনি আরো বলেন, ‘আমরা দারিদ্রের হার ২০ শতাংশে নামিয়ে এনেছি এবং আমরা একটি দারিদ্রমুক্ত দেশ গঠনে সক্ষম হব ইনশাআল্লাহ্।’
ইভিএম সম্পর্কে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এটি একটি ডিজিটাল পদ্ধতি। এর মাধ্যমে সবাই অবাধে তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগ করতে পারে। এখানে লুকোচুরির কিছু নেই। তবে ইভিএম নিয়ে কেন এই অহেতুক উদ্বেগ?’
তিনি বলেন, ‘কিন্তু আমি মনে করি, এর কারণ ভোটে কারচুপি করার কোন সুযোগ নেই। যারা দীর্ঘদিন ধরে ওই পদ্ধতিতে কারচুপি করে আসছে তারা এই নতুন পদ্ধতিতে কারচুপি করতে পারবে না।’



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: