odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Friday, 14th November 2025, ১৪th November ২০২৫

দুর্নীতি বিষয়ে কুবি উপাচার্যের বক্তব্য  সরকার প্রধানের জন্য অবমাননাকর : টিআইবি

আহসানুল ইসলাম আমিন | প্রকাশিত: ৩ August ২০২৩ ০১:৫৩

আহসানুল ইসলাম আমিন
প্রকাশিত: ৩ August ২০২৩ ০১:৫৩

জাহিদুল ইসলাম, কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়  প্রতিনিধি:

দুর্নীতির বিষয়ে সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈনের দেওয়া বক্তব্য সরকার প্রধানের  জন্য অবমাননাকর বলে মন্তব্য করেছেন ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান। তিনি বলেন, উপাচার্যের বক্তব্য প্রধানমন্ত্রীর ধারাবাহিকভাবে  দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে শূন্য সহনশীলতার ঘোষণা দিয়েছেন তার পরিপন্থী। এছাড়াও তিনি উপাচার্যের বক্তব্যকে সংবিধানের ২০(২) অনুচ্ছেদের সাথে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেন।

চীনে দুর্নীতি হয় বলে চীন এত উন্নত মন্তব্য করে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য সম্প্রতি একটি অনুষ্ঠানে বলেন, ‘করাপশন একচুয়ালি ব্লকস ডেভেলপমেন্ট, দ্যাটস নট ট্রু (দুর্নীতি আসলে উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করে, এটি সত্য নয়)। তাহলে চায়না কেন এত উন্নতি করে। চায়নায় তো সবাই দুর্নীতি করে।’

একই অনুষ্ঠানে তিনি বলেন, 'অনেকেই বলেন দেশে দুর্নীতির কারণে উন্নয়ন হচ্ছে না। কিন্তু আমি বলব উলটো কথা। দেশে দুর্নীতি হচ্ছে বলেই উন্নতি হচ্ছে। এটা নিয়ে অনেকেই অনেক কথা বলতে পারেন। যে ঘুষ খায়, সে পদ্মা পাড়ে যায় ইলিশ খেতে। এতে পদ্মা পাড়ের গরীব মানুষেরা ধনী হচ্ছে। দুর্নীতি এভাবে অর্থনীতিতে অবদান রাখে। তাই অর্থনীতিবিদগণ দুর্নীতি নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করে না। তবে যারা পলিটিক্যাল ইকোনমি নিয়ে কাজ করে তারা দুর্নীতি নিয়ে কথা বলে থাকে। নৈতিকতার জায়গায়ও এটি প্রশ্নবিদ্ধ। তবে অর্থনীতির জায়গায় থেকে যদি বল, দুর্নীতি কখনোই উন্নয়নের জন্য বাঁধা নয়।’

উপাচার্যের এ বক্তব্য গণমাধ্যমে প্রকাশিত হলে শিক্ষক সমাজসহ বিভিন্ন জায়গায় সমালোচনার সৃষ্টি হয়। বিষয়টি নিয়ে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. শামীমুল ইসলাম বলেন, ‘মানুষ তাঁর নৈতিকতার জন্য শ্রেষ্ঠ জীব হিসেবে পরিচিত। কেউ যদি জোর জবরদস্তি করে উন্নয়ন করে চাহিদা পূরণ করে তা কেবল নিজের ‘উন্নয়ন’ই হবে, জাতির উন্নয়ন হতে পারে না। জাতির উন্নয়নের জন্য নৈতিকভাবে উন্নয়ন করতে হবে, দুর্নীতির আশ্রয় নিয়ে নয়।'

একই বিষয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সায়মা হক বিদিশা বলেন, ‘দুর্নীতি বৈষম্য তৈরির অন্যতম উৎস। বৈষম্য টেকসই উন্নয়নের বিভিন্ন লক্ষ্যমাত্রা ও পরিকল্পনার বিপরীতে অবস্থান করে। দুর্নীতির সাথে বৈষম্যের একটা সম্পর্ক রয়েছে। বাংলাদেশের সংবিধান ও উন্নয়নের দর্শন সততা, নৈতিক মূল্যবোধের উপর গুরুত্ব দেয়। উন্নয়ন মানে শুধু আর্থিক উন্নয়ন না। সার্বিক উন্নয়নে সৎ, ন্যায্য ও সাম্যের উপর ভিত্তি করে উন্নয়নকে প্রতিষ্ঠা করতে হবে। বৈষম্য তৈরি করে শুধু আর্থিক উন্নয়ন হবে, যা আমাদের সার্বিক উন্নয়নের সাথে পরিপন্থি।’

অধ্যাপক বিদিশা আরও বলেন, ‘দুর্নীতি মূলত অন্যজনকে বঞ্চিত করে, ক্ষতিগ্রস্ত করে। দুর্নীতি করে মানুষ যে অর্থ উপার্জন করে তা সাময়িক, দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সৎ থাকা ও সৎপথে প্রচেষ্টা করা। সফল মানুষদের দিকে দেখলে আমরা দেখতে পাই, সবাই সৎভাবে ও পরিশ্রমকে পুঁজি করে সফল হয়েছেন। কাজেই শিক্ষকদের উচিত সর্বদা নৈতিকতা, সততা ও ন্যায্যতার কথা বলা।’

সার্বিক বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, উপাচার্য প্রত্যক্ষভাবে দুর্নীতি সহায়ক অবস্থান গ্রহণ করেছেন এবং দেশবাসীকে, বিশেষ করে তরুণ প্রজন্মকে দুর্নীতির মতো জঘন্য, অবৈধ ও অসাংবিধানিক অপরাধের সাথে সংশ্লিষ্ট হওয়ার জন্য উৎসাহ দিয়েছেন। যা একজন উপাচার্যের জন্য আত্মঘাতীমূলক অনৈতিকতার উদাহরণ এবং বাস্তবে একটি অপরাধ। দুর্নীতি করা যেমন আইনের লঙ্ঘন, তেমনি কাউকে দুর্নীতি করতে প্রশ্রয় দেওয়া বা প্ররোচিত করা একই ধরনের অপরাধ।

 

 

 



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: