odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | সোমবার, ২৫ আগস্ট ২০২৫, ৯ ভাদ্র ১৪৩২

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে সবুজের বুনন

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২৫ ২০:০৩

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৪ আগস্ট ২০২৫ ২০:০৩

ভাবুনতো আপনি একটি সবুজ উদ্যানে বসে আছেন। চারিদিকে স্নিগ্ধ বাতাস, গাছে গাছে পাখির মিষ্টি কলরব। যেখানে প্রকৃতি আপন পরশে আপনার মনকে প্রশান্ত করে দিচ্ছে। সেই উদ্যান যদি পৃথিবী জুড়ে বিস্তার লাভ করতো— কত-ই-না ভালো হতো! এটা অসম্ভব কিছু না। প্রতিটি উদ্যানেই মালি থাকে৷ যার হাতের পরশেই উদ্যানগুলো প্রাণবন্ত হয়ে উঠে। এই পৃথিবীর তখনই উদ্যানে পরিণত হবে, যখন আমরা সকলে একত্রে মালির ভূমিকায় অবতার করবো।

তেমনই মালি ভূমিকায় অবতার করে সবুজের ছোঁয়া দিতে "Green Memento" নামে একটি ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা হাতে নিয়েছে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিল্প-সংশ্লিষ্ট, সৃজনশীল ও স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘বুনন’—যা আল্পনা, সজ্জা, ইভেন্ট আয়োজনসহ নানামুখী শৈল্পিক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে থাকে।

যেখানে আজ আমরা প্রকৃতি ধ্বংসের খেলায় মেতেছি। যেখানে জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাবে জীববৈচিত্র্যের ক্ষয় আর দূষণের তিক্ত হয়ে উঠছে আমাদের এই ধরা। প্রকৃতির অর্তনাদ, পাখিদের চিৎকারে অস্থির হয়ে উঠছে এই বসুন্ধরায়। সেখানে প্রকৃতি রক্ষায় "বুনন" এর এমন উদ্যোগ প্রশাংনীয় বলছেন সংশ্লিষ্ট সচেতন মহল।

গত ২৩ আগস্ট থেকে শুরু হয়েছে "Green Memento" নামে বিশেষ বৃক্ষরোপণ কর্মসূচি। যার মাধ্যমে বুননের পক্ষ থেকে সরাসরি ক্যাম্পাসে বৃক্ষরোপণ কার্যক্রম গৃহীত হবে।

এরই অংশ হিসেবে ক্যাম্পাসের সক্রিয় সামাজিক স্বেচ্ছাসেবী ও সাংবাদিক সংগঠন সহ প্রায় ২২টি সংগঠনকে একটি করে গাছ উপহার হিসেবে পৌঁছে দেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে সংগঠনটি। প্রতিটি গাছের মধ্য দিয়ে ‘বুনন’ পৌঁছে দেয় গভীর বার্তা— ‘প্রকৃতির প্রতি দায়িত্ব ভাগাভাগি করা আমাদের সবার কর্তব্য।’

এই কর্মসূচিতে গাছের বৈচিত্র্য বিশেষভাবে দৃষ্টি কাড়ে। ফলজ, বনজ, ঔষধি ও ফুলের নানা প্রজাতি এতে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। উপহার হিসেবে দেওয়া হয়—জাম, মেহগনি, কড়ই, জাম্বুরা, আশফল, নাগমনি, লটকন, কামিনী, ছাতিম, কৃষ্ণচূড়া, শিউলি, বাগানবিলাস, নারিকেল, বেলী, চালতা, নিম, হরিতকী, দোলনচাঁপা, অলকানন্দা এবং জুইফুলসহ বহু প্রজাতির গাছ। প্রতিটি চারা যেন কেবল একখণ্ড সবুজ নয়, বরং ভবিষ্যৎ প্রজন্মের প্রতি একটি দায়বদ্ধতার প্রতীক।

বুননের "Green Memento" কর্মসূচি মূলত একটি প্রতীকী উদ্যোগ হলেও এর অন্তরালে নিহিত রয়েছে গভীর বার্তা। এই কর্মসূচির মাধ্যমে সামনে আনা হয়েছে পরিবেশ সংরক্ষণের গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য— বায়ুর মান উন্নয়ন, জীববৈচিত্র্য রক্ষা, মাটির ক্ষয় রোধ এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে সচেতনতা সৃষ্টি।

একটি গাছ একদিনে বন হয়ে ওঠে না, কিন্তু একটি গাছই একদিন বনের জন্ম দেয়। সেই দর্শনকে সামনে রেখেই বুননের এই ক্ষুদ্র প্রয়াস হয়তো আগামী দিনের বৃহৎ পরিবর্তনের সূচনা হয়ে উঠবে। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস যখন আরও সবুজে ঘেরা হয়ে উঠবে, তখন এই উদ্যোগই হবে তার অন্যতম দৃঢ় ভিত্তি।

বুননের সভাপতি সাজিয়া তাসনিম আপন বলেন, “আমরা চাই আমাদের ক্যাম্পাস কেবল জ্ঞানচর্চার কেন্দ্রই না, বরং একটি সবুজ আশ্রয় হয়ে উঠুক। তাই গাছ লাগানোকে আমরা সৌন্দর্যের অংশ নয়, বরং আমাদের নৈতিক দায়িত্ব মনে করি। প্রতিটি সংগঠনকে একটি করে গাছ উপহার দিয়ে আমরা আসলে তাদের হাতে দায়িত্ব তুলে দিয়েছি— এই গাছ শুধু তাদের নয়, বরং পুরো ক্যাম্পাসের ভবিষ্যতের প্রতীক।”

পৃথিবীটা যেমন আমাদের, তেমনই এর উপর আমাদের কিছু দায়বদ্ধও আছে। ছোট ছোট উদ্যোগেই শুরু হোক পরিবর্তনের সূচনা। সবুজের সমারোহে সেঁজে উঠুক বসুন্ধরা।

মো. সামিউল ইসলাম, ইবি



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: