odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Thursday, 27th November 2025, ২৭th November ২০২৫

কুয়েটে আইন লঙ্ঘন করে ‘গোপন’ সিন্ডিকেট পুনর্গঠন: ভিসি হেলালীর অবৈধ কার্যক্রমে বিপন্ন প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২৭ November ২০২৫ ০২:১৫

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২৭ November ২০২৫ ০২:১৫

ইনভেস্টিগেটিভ রিপোর্ট | অধিকার পত্র ডটকম
প্রকাশিত: ২৭ নভেম্বর ২০২৫

খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয় (কুয়েট)-এর সর্বোচ্চ সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী সংস্থা সিন্ডিকেট পুনর্নিয়োগ প্রক্রিয়ায় গুরুতর আইনগত অসঙ্গতি এবং ক্ষমতার অপব্যবহারের অভিযোগ উঠেছে বর্তমান উপাচার্য (ভিসি) ড. হেলালীর বিরুদ্ধে। অভিযোগ অনুযায়ী, কুয়েট আইনকে পুরোপুরি উপেক্ষা করে অতি গোপনে দুইজন সিন্ডিকেট সদস্যকে অপসারণ করে নতুন দুইজন অযোগ্য ব্যক্তিকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। এই পদক্ষেপ কুয়েট-এর পুরো সিন্ডিকেটকে অবৈধ করে তুলেছে, যা ভবিষ্যতে প্রতিষ্ঠানের সকল গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তকে প্রশ্নবিদ্ধ ও বাতিলযোগ্য করে তুলতে পারে।

আইনের চোখে অপসারণ: ২ বছরের মেয়াদ অমান্য
কুয়েট আইন, ২০০০ (সংশোধিত) অনুযায়ী, সিন্ডিকেট সদস্যদের মেয়াদ ২ বছর এবং রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত এই দুই বছর অতিবাহিত না হওয়া পর্যন্ত কাউকে অপসারণ করা যায় না।

আইনের লঙ্ঘন: কুয়েট আইনের ১৮(২) ধারা অনুযায়ী, সিন্ডিকেট সদস্যদের ২ বছরের মেয়াদ পূর্ণ হওয়ার আগে অপসারণ অবৈধ।

ঘটনা: গত ২৪/১১/২০২৫ তারিখে যাদের অপসারণ করা হয়েছে, তারা ২০২৪ সালের ১২ নভেম্বর রাষ্ট্রপতি কর্তৃক অনুমোদিত ও নিয়োগপ্রাপ্ত। অর্থাৎ, তাদের দুই বছরের বাধ্যতামূলক মেয়াদ এখনো প্রায় এক বছর বাকি।*

বিশ্লেষণ: এই অবস্থায় তাড়াহুড়ো করে কাউকে অপসারণ করা কিংবা নতুন কাউকে নিয়োগ দেওয়া মহান জাতীয় সংসদ কর্তৃক পাশ করা আইনের পুরোপুরি লঙ্ঘন।

যোগ্যতা বিতর্ক: সরকারি পদে কর্মরতদের সরিয়ে স্ব-ঘোষিত এমডি নিয়োগ
কুয়েট আইনে স্পষ্টভাবে সিন্ডিকেট সদস্যদের যোগ্যতার মানদণ্ড নির্দিষ্ট করা আছে। কিন্তু নতুন নিয়োগে সেই মানদণ্ডও মানা হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে।

আইনের ধারা: আইনটির ১৮(চ) ধারা-এ বলা আছে, সরকার কর্তৃক মনোনীত ‘বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক গবেষণা বা শিল্প প্রতিষ্ঠান থেকে দুইজন প্রতিনিধি’ নিয়োগ করতে হবে।

* অপসারিত সদস্য: যাদের অপসারণ করা হয়েছে, তারা দেশের স্বনামধন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদে কর্মরত ছিলেন এবং এখনো সেই পদে বহাল আছেন—যা কুয়েট আইনের সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ।

নতুন নিয়োগ: অভিযোগ অনুযায়ী, নতুন নিয়োগ পাওয়া দুজনই নিজেদের ব্যক্তিগত কনসালটেন্সি প্রতিষ্ঠান খুলে চেয়ারম্যান বা ম্যানেজিং ডিরেক্টর (MD) হিসেবে আছেন—যা কার্যত একটি self-proclaimed বা স্ব-ঘোষিত অবস্থান। গুরুতর অভিযোগ উঠেছে যে এই অযোগ্য ব্যক্তিরা কুয়েট সিন্ডিকেট সদস্য হওয়ার ন্যূনতম যোগ্যতাও রাখেন না।

গোপনীয়তার দেয়াল ও প্রশাসনিক ত্রুটি
পুরো নিয়োগ প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করা হয়েছে 'অতি গোপনে', যা প্রশাসনের স্বাভাবিক প্রক্রিয়ার পরিপন্থী।
* গোপনীয়তা: অভিযোগ, বর্তমান ভিসি ড. হেলালী রেজিস্ট্রার ছাড়া আর কাউকে না জানিয়ে গোপনে মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে এই অবৈধ নিয়োগ সম্পন্ন করিয়েছেন।

প্রশাসনিক ত্রুটি: নতুন নিয়োগের আদেশে সরকারি দলিলে বাধ্যতামূলকভাবে উল্লেখিত ‘স্মারক নাম্বার’ অনুপস্থিত। এছাড়া প্রতিটি সরকারি আদেশের বাধ্যতামূলক অংশ “নির্দেশক্রমে” লেখাটিও এই নতুন আদেশে নেই। এ ধরনের ত্রুটিপূর্ণ সরকারি আদেশ পুরো প্রক্রিয়াটির বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন তুলেছে।

 আইনি ঝুঁকি ও প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ

এই অবৈধ পুনর্নিয়োগের ফলে কুয়েট এখন এক গভীর আইনি সংকটের মুখে।
* অবৈধ সিন্ডিকেট: যেহেতু আইন ভঙ্গ করে সদস্যদের অপসারণ করা হয়েছে, তাই বর্তমানের পুরো সিন্ডিকেটই আইনের চোখে অবৈধ।
* সিদ্ধান্ত বাতিলের ঝুঁকি: ভবিষ্যতে এই অবৈধ সিন্ডিকেট ভর্তি, নিয়োগ, অর্থায়ন বা অন্য কোনো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে যেসকল সিদ্ধান্ত নেবে, তার সবই বাতিলযোগ্য বা Null and Void হওয়ার প্রবল সম্ভাবনা রয়েছে। এর ফলে কুয়েট-এর দীর্ঘমেয়াদী প্রশাসনিক ও প্রাতিষ্ঠানিক মর্যাদা ক্ষুণ্ন হতে পারে।
> "কুয়েট কোনো ব্যক্তির সম্পত্তি নয়। কুয়েট-কে অবৈধতা, অনৈতিকতা আর ক্ষমতার অপব্যবহারের আখড়ায় পরিণত করার জবাব ড. হেলালী এবং তাঁর ঘনিষ্ঠদের একদিন দিতে হবে।"
>

 বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করানোর আহ্বান
কুয়েট কর্তৃপক্ষ, শিক্ষক, শিক্ষার্থী ও সংশ্লিষ্ট সকল মহলের প্রতি আহ্বান জানানো হয়েছে এই অবৈধ সিন্ডিকেট নিয়োগের বিরুদ্ধে সোচ্চার হতে। বুয়েটের একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক হয়েও ড. হেলালী কুয়েট আইন একের পর এক লঙ্ঘন করে চলেছেন। কুয়েট-এর মর্যাদা রক্ষা, আইনের শাসন বজায় রাখা এবং প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ বাঁচানোর জন্য এই হঠকারী সিদ্ধান্ত গ্রহণকারী ভিসি ড. হেলালীকে অচিরেই এসব অনিয়মের জন্য বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড় করাতে হবে বলে অভিমত সংশ্লিষ্টদের।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: