
আন্তর্জাতিক ডেস্ক | অধিকার পত্র ডটকম
নেপালে দুর্নীতি বিরোধী আন্দোলনের জেরে সরকার পতন ও সহিংসতায় নিহত অন্তত ৫১ জন। সংসদ ভবনে অগ্নিসংযোগের পর সেনাবাহিনী রাজপথের নিয়ন্ত্রণ নেয়। অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে আলোচনায় সাবেক প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি।
নেপাল এই মুহূর্তে এক ভয়াবহ রাজনৈতিক ও সামাজিক অস্থিরতার মধ্যে দিয়ে যাচ্ছে। দুর্নীতিবিরোধী আন্দোলন থেকে সৃষ্ট অভ্যন্তরীণ বিশৃঙ্খলার ফলে সরকার পদত্যাগ করেছে, সংসদে অগ্নিসংযোগ হয়েছে এবং রাজধানী কাঠমান্ডুতে সেনাবাহিনী নিয়ন্ত্রণ নিয়েছে।
এখন দেশটির প্রেসিডেন্ট রামচন্দ্র পাউডেল ও সেনাবাহিনী একটি অন্তর্বর্তীকালীন ঐক্যমত্যের সরকার গঠনের প্রচেষ্টায় রয়েছেন।
কি ঘটেছে নেপালে?
- ???? সরকার পতন: দুর্নীতির প্রতিবাদে গণবিক্ষোভের মুখে প্রধানমন্ত্রী কেপি শর্মা অলি পদত্যাগ করেন।
- ???? সহিংসতা ও হতাহতের ঘটনা: সবচেয়ে ভয়াবহ সহিংসতায় নিহত হয়েছেন অন্তত ৫১ জন, যাদের মধ্যে ২১ জন বিক্ষোভকারী।
- ???? অগ্নিসংযোগ: বিক্ষুব্ধ জনতা সংসদ ভবন, সরকারি অফিস এবং একটি হিলটন হোটেলে আগুন লাগায়।
- ???? সেনা হস্তক্ষেপ: পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সেনাবাহিনী রাজপথের দায়িত্ব নেয় এবং কারফিউ জারি করে।
- ???? কারাগার থেকে পালানো: দেশজুড়ে ১২,৫০০ এর বেশি বন্দী পালিয়ে গেছে, যাদের অনেকে এখনও পলাতক।
নতুন নেতা খুঁজছে নেপাল
রাজনৈতিক শূন্যতা কাটিয়ে উঠতে আলোচনায় এগিয়ে আসছেন নেপালের প্রথম নারী প্রধান বিচারপতি সুশীলা কার্কি (৭৩)। প্রেসিডেন্ট, সেনাপ্রধান এবং নাগরিক সমাজের নেতাদের সঙ্গে এক আলোচনায় কার্কি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান হিসেবে এগিয়ে আছেন বলে সূত্র জানিয়েছে।
‘সংসদ এখনও অটল’, বলেও মন্তব্য করেন তিনি, তবে সাময়িক সংকট কাটাতে বিশেষজ্ঞদের আলোচনায় বসার ওপর জোর দেন।
জেন জেড আন্দোলনের ভূমিকা
নেপালের এই আন্দোলনে নেতৃত্ব দিচ্ছে তরুণ প্রজন্ম — জেনারেশন জেড (Gen Z)।
তাদের অন্যতম প্রতিনিধি সুদান গুরুং বলেন,
"আমাদের প্রথম দাবি সংসদ ভেঙে দেওয়া। বর্তমান ব্যবস্থা ব্যর্থ।"
২৪ বছর বয়সী আরেক আন্দোলনকারী জেমস কার্কি জানান,
"আমরা একটি উন্নত নেপাল গড়তে চাই। এই পরিবর্তন জরুরি
"মূল সংকট: দুর্নীতি ও বেকারত্ব
বিশ্লেষকদের মতে, চলমান সংকটের পেছনে রয়েছে দীর্ঘদিনের দুর্নীতি, দুর্বল শাসন ব্যবস্থা ও তরুণদের বেকারত্ব।
বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী:
- ???? ১৫–২৪ বছর বয়সীদের এক-পঞ্চমাংশ বেকার
- ???? মাথাপিছু আয় মাত্র $1,447
- ???? আন্দোলনকারীদের প্রায় ৪০% বয়স ১৬–৪০ এর মধ্যে
নিরাপত্তা পরিস্থিতি আপডেট:
- সেনাবাহিনী রাজধানীর রাস্তায় টহল দিচ্ছে
- কারফিউ সাময়িকভাবে তুলে নেওয়া হয়েছে
- নাগরিকরা নিরাপত্তার অভাবে আতঙ্কে ঘরে অবস্থান করছে
- খাবার, ওষুধ ও জ্বালানি সরবরাহে হাহাকার
চোখে পড়া দৃশ্য (স্থানীয়দের ভাষ্য):
"আমরা তিন দিন ঘরে আটকে ছিলাম, খাবার ফুরিয়ে যাচ্ছিল। আজ একটু বের হয়েছি খাবার কিনতে।"
— নবীন কুমার দাস, কাঠমান্ডু বাসিন্দা
"জ্বালানি ভরতে বাইকে করে বের হয়েছি, পরিবার নিয়ে খুব ভয়ে আছি।"
— লক্ষ্মী থাপা (৩২)ল
নেপাল এই মুহূর্তে রাজনৈতিক পরিবর্তনের এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে। সেনাবাহিনীর হস্তক্ষেপ, সরকারের পতন এবং তরুণদের সরব উপস্থিতি ইঙ্গিত দিচ্ছে এক নতুন রাজনৈতিক ধারার উত্থান।
এই সংকট কাটিয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজন একটি অন্তর্বর্তীকালীন গ্রহণযোগ্য সরকার, এবং সেই সঙ্গে প্রয়োজন আন্তর্জাতিক সহায়তা ও দেশের তরুণদের আস্থার পুনর্গঠন।
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: