odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | রবিবার, ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ৩০ ভাদ্র ১৪৩২
বৈশ্বিক খেলনা বাজার

লাবুবু VS লাফুফু: বিশ্বব্যাপী চলছে আসল-নকলের লড়াই

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৩১

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ১৯:৩১

বিশেষ প্রতিবেদন

চীনের তৈরি ছোট্ট কার্টুন চরিত্রভিত্তিক খেলনা ‘লাবুবু’ (Labubu) এ বছর বিশ্বজুড়ে শিশু-কিশোরদের কাছে সবচেয়ে কাঙ্ক্ষিত সংগ্রহে পরিণত হয়েছে। রঙিন চেহারা, অনন্য নকশা আর কিউটনেসে ভরপুর এই খেলনা মুহূর্তেই বাজার মাতিয়েছে। শুধু শিশু নয়, তরুণ-তরুণীদের কাছেও এটি এখন সংগ্রহযোগ্য পণ্য হিসেবে দারুণ জনপ্রিয়। তবে জনপ্রিয়তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে নকল লাবুবু। বাজারে ছড়িয়ে পড়া এসব নকল পণ্য দেখতে আসলের মতো হলেও গুণগত মানে কম এবং বেশিরভাগ ক্ষেত্রে বিপজ্জনক।

পপ মার্টের জনপ্রিয় ‘লাবুবু’ খেলনা এখন কালোবাজারি ও নকল সংস্করণে সয়লাব। চীনের বাজার থেকে যুক্তরাষ্ট্র পর্যন্ত ছড়িয়ে পড়ছে ‘লাফুফু’। চীনের হেবেই প্রদেশের এক ব্যস্ত বাজারে লাবুবু আর কাচের কেসে সাজানো কাঙ্ক্ষিত সংগ্রহযোগ্য খেলনা নয়। এখন এগুলো রাখা হচ্ছে আলুর বস্তা বা বাঁধাকপির মতো। ডজন ডজন করে প্লাস্টিক ব্যাগে ভরা কিংবা গাড়ির ট্রাঙ্কে স্তূপ করা। তবে এগুলো আসল নয়। এগুলো হলো নকল যা স্থানীয়ভাবে বলা হচ্ছে ‘লাফুফু’। শুধু লাফুফুই নয়, সংগ্রাহকেরা মজার ছলে নাম দিয়েছেন ‘লাগোগো’, ‘লাবাবা’, এমনকি ‘লাপুপু’। চীনের পপ মার্ট সম্প্রতি জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে তাদের লাভ বেড়েছে প্রায় ৪০০ শতাংশ। অথচ একই সময়ে লাফুফু বিক্রিও দ্রুত বেড়েছে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে মিম, মজার ভিডিও আর আনবক্সিং ব্লগে নকল লাবুবুর প্রচারণা আরও তীব্র হচ্ছে। এই নকল পুতুলগুলো মূলত চীনের গুয়াংডং ও হেবেই প্রদেশের ছোট কারখানায় তৈরি হয়ে দেশ-বিদেশে ছড়িয়ে পড়ছে। বিশেষ করে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি সবচেয়ে বেশি।

যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ভোক্তা সুরক্ষা সংস্থাগুলো সতর্ক করেছে— নকল লাবুবুতে খারাপ মানের প্লাস্টিক ও আলগা অংশ (চোখ, হাত, পা) থাকে, যা ছোট শিশুদের জন্য শ্বাসরোধের ঝুঁকি তৈরি করে। চীনা কর্তৃপক্ষও নকল ধরপাকড় শুরু করেছে। চলতি বছরের শুরু থেকে ১৮ লাখের বেশি নকল লাবুবু জব্দ করা হয়েছে। রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম সিনহুয়ার সম্পাদকীয়তেও বলা হয়েছে, নকলের দাপট চীনের উদ্ভাবনী সাফল্যকে ক্ষতিগ্রস্ত করছে। নকল হলেও লাফুফুর আলাদা কদর আছে। এগুলো সাধারণত সস্তা এবং আসল লাবুবুর এক দশমাংশ দামে পাওয়া যায়। এমনকি কিছু নকল সংস্করণ গান গায়, নাচে, আলো জ্বালে যা আসল লাবুবুতে নেই। ফলে অনেকেই মনে করছেন, দামি ব্র্যান্ডেড সংস্করণের চেয়ে নকল খেলনাই বেশি বিনোদনমূলক। একজন মার্কিন ভোক্তা জানিয়েছেন, “আমি আসল লাবুবু কিনতে চাই না। লাফুফু শুধু সস্তাই নয়, বরং মজার কিছু করে দেখায়।” অন্যদিকে চীনের ফুজিয়ান প্রদেশের এক তরুণীর ভাষায়, “লাবুবুর দাম কয়েকশ’ ইউয়ান পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। আমি সেই ‘হাইপ’ মেনে নিতে পারি না। তাই লাফুফুই কিনি।”

আসল লাবুবু এতটাই দুষ্প্রাপ্য হয়ে গেছে যে, কালোবাজারে এর দাম কয়েকগুণে বিক্রি হচ্ছে। ৯৯ ইউয়ানের (প্রায় ১৪ ডলার) একটি পুতুল পুনর্বিক্রির বাজারে ১,৪০০ ইউয়ান (প্রায় ১৯৫ ডলার) পর্যন্ত উঠেছে। যুক্তরাষ্ট্রে তো দাম দ্বিগুণ প্রায় ৬০ ডলার প্রতি পুতুল। নকল ধরতে ইতোমধ্যেই চীনা কাস্টমস একাধিক অভিযানে লক্ষাধিক লাফুফু আটক করেছে। এমনকি পপ মার্ট প্রতিরক্ষামূলক পদক্ষেপ হিসেবে ‘লাফুফু’ নামটিও ট্রেডমার্ক হিসেবে নিবন্ধন করেছে। তবে বাজার বিশেষজ্ঞদের মতে, যতদিন ভোক্তারা সস্তায় খেলনা কিনতে চাইবেন, ততদিন নকল লাবুবুর বাজার টিকে থাকবে। লাবুবু আজ চীনের এক বৈশ্বিক ব্র্যান্ড। কিন্তু এর জনপ্রিয়তার ফাঁক গলেই জন্ম নিয়েছে ‘লাফুফু’ যা একদিকে ভোক্তাদের হাসি-ঠাট্টার খোরাক, অন্যদিকে চীনের ব্র্যান্ড সুনামের জন্য বড় হুমকি।

-লেখক: মোসাইদুর রহমান বাবু, স্পেশাল করোসপন্ডেন্টস, অধিকারপত্র



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: