
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
জাপানের রাজনীতিতে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত এসেছে সানায়ে তাকাইচি দেশটির প্রথম নারী প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব নিয়েছেন। বহু দশক ধরে পুরুষতান্ত্রিক রাজনীতির নিয়ন্ত্রণে থাকা জাপানে এক নারীর নেতৃত্বে ওঠা নিঃসন্দেহে যুগান্তকারী ঘটনা। কিন্তু প্রশ্ন উঠছে এটি কি সত্যিই নারীর ক্ষমতায়নের নতুন সূচনা নাকি কেবল রাজনৈতিক কৌশল মাত্র? ২১ বছর বয়সী আয়দা ওগুরা বলেন, অনেকে ভাবছে এটি নারীর ক্ষমতায়নের বড় সুযোগ, কিন্তু আমি মনে করি এটি একধরনের সরল ব্যাখ্যা। তাকাইচির রাজনৈতিক অবস্থান বরং বিদ্যমান পুরুষতান্ত্রিক কাঠামোকেই টিকিয়ে রাখে। আয়রন লেডি’খ্যাত যুক্তরাজ্যের সাবেক প্রধানমন্ত্রী মার্গারেট থ্যাচারের বড় ভক্ত তাকাইচি বরাবরই নিজেকে জাপানের থ্যাচার হিসেবে দেখতে চেয়েছেন। তিনি সমলিঙ্গ বিবাহের বিরোধিতা করেন এবং বিবাহিত দম্পতিদের আলাদা পদবি রাখার অধিকারকেও অস্বীকার করেন। যা জাপানে নারীদের ব্যক্তিগত স্বাধীনতা সীমিত করে রেখেছে। এমনকি তিনি নারীকে রাজপরিবারের উত্তরাধিকারী হওয়ার বিরুদ্ধেও অবস্থান নিয়েছেন। যদিও নির্বাচনী প্রচারণায় তিনি কিছুটা নরম সুরে কথা বলেছেন। কর্মজীবী মায়েদের সহায়তায় শিশু পরিচর্যা সুবিধা ও কর রেয়াতের কথা তুলেছেন, কিন্তু মূল দর্শনে তিনি রক্ষণশীল অবস্থানেই অনড়।
বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ২০২৫ সালের জেন্ডার গ্যাপ সূচকে ১৪৮ দেশের মধ্যে জাপানের অবস্থান ১১৮তম। বিশ্বের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থনীতি হওয়া সত্ত্বেও দেশটিতে নারী নেতৃত্বের সংখ্যা এখনো হতাশাজনকভাবে কম। গণপরিষদে নারীদের প্রতিনিধিত্ব মাত্র ১৫.৭% যা জি-৭ দেশগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। এমনকি প্রজননস্বাস্থ্যেও দেশটি পিছিয়ে সম্প্রতি মাত্র ঘোষণা হয়েছে যে মর্নিং আফটার পিল এখন থেকে প্রেসক্রিপশন ছাড়াই কেনা যাবে, যা ইতিমধ্যেই ৯০টিরও বেশি দেশে বহু বছর ধরে অনুমোদিত। নারীদের জন্য এটি নিঃসন্দেহে একটি প্রতীকী মাইলফলক। সাবেক নারী মেয়র নাওমি কোশি মনে করেন, তাকাইচির প্রধানমন্ত্রী হওয়া নারীদের মানসিক বাধা কমাবে। মেয়েরা ভাবতে পারবে, নেতৃত্ব দেওয়া স্বাভাবিক। তাকাইচির উত্থানের পেছনে বড় ভূমিকা ছিল প্রয়াত প্রধানমন্ত্রী শিনজো অ্যাবে ও প্রভাবশালী নেতা তারো আসো’র। তাঁরা দুজনই জাপানের ডানপন্থী ও রক্ষণশীল রাজনীতির স্তম্ভ, এবং তাকাইচি তাঁদের ঘনিষ্ঠ সহযোগী। ফলে অনেকের মতে, তাঁর নেতৃত্ব আসলে পুরনো রক্ষণশীল শক্তিরই ধারাবাহিকতা। ২১ বছর বয়সী মিনোরি কোনিশি বলেন, তাকাইচির সাফল্য নারীদের জন্য অনুপ্রেরণা হতে পারত, কিন্তু বাস্তবে এটি বোঝায় যে আমাদেরও পুরুষদের নির্ধারিত নিয়ম মানতে হবে। তাকাইচির সামনে এখন বড় চ্যালেঞ্জ মুদ্রাস্ফীতি, মন্থর অর্থনীতি ও ক্ষুব্ধ জনগণের আস্থা পুনরুদ্ধার করা। অতিসম্প্রতি নির্বাচনের পর তাঁর অন্যতম বড় আন্তর্জাতিক কাজ হবে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পকে আতিথ্য দেওয়া। তবে পর্যবেক্ষকরা বলছেন, জেন্ডার সমতা ও নারীর অধিকার এখনো তাঁর অগ্রাধিকারের তালিকায় নেই। সানায়ে তাকাইচির ক্ষমতায় আসা নিঃসন্দেহে এক ঐতিহাসিক ঘটনা ।তবে সেটি নারীর মুক্তির নয় বরং জাপানের রক্ষণশীল রাজনীতিরই এক নতুন অধ্যায়। তিনি ইতিহাস তৈরি করেছেন কিন্তু পরিবর্তন আনবেন কিনা সেই প্রশ্নের উত্তর এখনো ভবিষ্যতের হাতে।
- মো : সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি, অধিকারপত্র
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: