নিউজ ডেস্ক │অধিকারপত্র
দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সাম্প্রতিক সময়ে ভূমিকম্প অনুভূত হওয়ায় নতুন করে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে সাধারণ মানুষের মধ্যে। বিশেষজ্ঞদের মতে, বাংলাদেশ ভূমিকম্পপ্রবণ দেশ না হলেও ভূমিকম্পজনিত ঝুঁকির দিক দিয়ে শীর্ষ অবস্থানে রয়েছে। ইন্ডিয়ান ও বার্মা প্লেটের মধ্যবর্তী অঞ্চলে শক্তি সঞ্চিত হয়ে থাকায় যেকোনো সময় বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সম্প্রতি বাংলাদেশে ভূমিকম্পের শঙ্কা প্রকাশ করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। সংস্থাটি জানিয়েছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট ও ময়মনসিংহ অঞ্চল ভূমিকম্পের উচ্চ ঝুঁকিতে রয়েছে। তাই প্রস্তুতি ও সচেতনতা ছাড়া ভয়াবহ ক্ষয়ক্ষতি ঠেকানো সম্ভব নয়।
ভূমিকম্প কীভাবে হয়:
ভূ-পৃষ্ঠের হঠাৎ পরিবর্তন, আগ্নেয়গিরির অগ্ন্যুত্পাত এবং শিলাচ্যুতির মতো তিনটি প্রধান কারণ থেকে ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়। গবেষণা বলছে, বিশ্বে বছরে গড়ে ছয় হাজারের মতো ভূমিকম্প ঘটে যার বেশিরভাগই মৃদু, অনেকে টেরই পায় না।
উৎপত্তিস্থলের গভীরতার ভিত্তিতে ভূমিকম্প তিন ভাগে:
অগভীর: ৭০ কিলোমিটারের মধ্যে
মধ্যবর্তী: ৭০–৩০০ কিলোমিটার
গভীর: ৩০০ কিলোমিটারের নিচে
মাত্রা পরিমাপের জন্য ব্যবহৃত হয় রিখটার স্কেল, যা ১ থেকে ১০ পর্যন্ত। ৫-এর বেশি মাত্রা মানেই উল্লেখযোগ্য ঝুঁকি আর ৭-এর ওপরে হলে তা ভয়াবহ বিপর্যয় ডেকে আনতে পারে।
ভূমিকম্প হলে করণীয়: কী করবেন দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং ফায়ার সার্ভিস কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ পরামর্শ দিয়েছে:
১. ভূমিকম্পের সময়
- আতঙ্কিত না হয়ে স্থির থাকুন।
- ঘরে থাকলে ড্রপ–কাভার–হোল্ড অন পদ্ধতি অনুসরণ করুন। মেঝেতে বসে পড়ুন, শক্ত টেবিল/ডেস্কের নিচে আশ্রয় নিন এবং টেবিল শক্তভাবে ধরে থাকুন।
- বিছানায় থাকলে বালিশ দিয়ে মাথা ঢেকে রাখুন।
- রান্নাঘরে থাকলে দ্রুত গ্যাস বন্ধ করে বেরিয়ে আসুন।
- বহুতলে থাকলে লিফট ব্যবহার করবেন না, জানালা দিয়ে লাফ দেবেন না।
- বাইরে থাকলে গাছ, বৈদ্যুতিক খুঁটি ও উঁচু ভবন থেকে দূরে খোলা স্থানে আশ্রয় নিন।
- গাড়িতে থাকলে সেতু, ফ্লাইওভার, খুঁটি ও ভবন থেকে দূরে গাড়ি থামান এবং ভেতরেই থাকুন।
- প্রথম কম্পনের পর আফটার শক হতে পারে, তাই সতর্ক থাকুন।
২. কম্পন থেমে গেলে
- সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত নিচে নেমে যান।
- গ্যাস, পানি ও বিদ্যুৎলাইনে কোনো লিক বা ক্ষতি দেখলে মেইন সুইচ বন্ধ করুন।
- আশপাশের মানুষকে বের হতে সাহায্য করুন।
৩. ধ্বংসস্তূপে আটকে পড়লে করণীয়
- বেশি নড়াচড়া করবেন না। রক্তক্ষরণ বা ধ্বংসাবশেষ নড়ার ঝুঁকি বাড়ে।
- ম্যাচ জ্বালাবেন না, গ্যাস লিক থাকতে পারে।
- চিৎকার না করে প্রথমে পাইপ, দেয়াল বা বস্তুতে ধাতব শব্দ তৈরি করুন।
- কাপড় দিয়ে মুখ ঢেকে ধুলাবালি থেকে বাঁচুন।
৪. ভূমিকম্পের আগে যা করবেন (প্রি–প্রিপারেশন)-
- বাংলাদেশ ন্যাশনাল বিল্ডিং কোড (BNBC 2020) অনুযায়ী ভবন নির্মাণ করুন।
- পুরোনো ঝুঁকিপূর্ণ ভবন সংস্কার করুন।
- বাসা বাড়িতে রাখুন: টর্চলাইট, ব্যাটারি, বাঁশি, হেলমেট, শুকনো খাবার, পানি, ফার্স্ট এইড বক্স।
- জরুরি ফোন নম্বর দৃশ্যমান স্থানে লিখে রাখুন।
- নিয়মিত ভূমিকম্প মহড়ায় অংশগ্রহণ করুন।
- গ্যাস, পানি, বিদ্যুতের লাইন নিয়মিত পরীক্ষা করুন।
বিশেষজ্ঞদের সতর্কবার্তা
ইন্ডিয়ান-বার্মা প্লেট সংযোগস্থলে যে শক্তি জমে আছে তা যদি মুক্ত হয় তবে ৮.২ থেকে ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হতে পারে। এটি আগামীকালও হতে পারে আবার ৫০ বছর পরেও। কিন্তু যখনই হবে তা হবে ভয়াবহ। তাই ভূমিকম্পের পূর্বাভাস না দেওয়া গেলেও প্রস্তুতি ও সচেতনতা প্রাণহানি কমাতে পারে এমনটাই বলছেন বিশেষজ্ঞরা। ঢাকায় আজকের ভূমিকম্প আবার মনে করিয়ে দিল দুর্যোগ কোনো সতর্কবার্তা দিয়ে আসে না। তাই আগে থেকেই প্রস্তুতি নেওয়াই সবচেয়ে বড় নিরাপত্তা। ঘরের ভারী আসবাবপত্র ঠিকভাবে স্থির করে রাখা, জরুরি ব্যাগ প্রস্তুত রাখা, পরিবারের সবাইকে নিরাপদ আশ্রয়ের নিয়ম শেখানো এবং ভূমিকম্পের সময় কী করতে হবে তা অনুশীলন করা। এসব অভ্যাসই বড় ক্ষতি কমাতে পারে। সচেতনতা, প্রস্তুতি আর দ্রুত সিদ্ধান্তই পারে জীবন ও সম্পদের ঝুঁকি কমাতে।
-মো: সাইদুর রহমান (বাবু), বিশেষ প্রতিনিধি. অধিকারপত্র

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: