বিশেষ প্রতিনিধি, অধিকার পত্র ডটকম
📰 সংবাদ প্রতিবেদন
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে এক বেদনাবিধুর অধ্যায়ের সূচনা হলো। সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী দল (বিএনপি) চেয়ারপারসন **বেগম খালেদা জিয়া** ইন্তেকাল করেছেন। তাঁর মৃত্যুতে দেশজুড়ে নেমে এসেছে গভীর শোকের ছায়া। রাজনৈতিক অঙ্গন থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের হৃদয়ে আজ এক শূন্যতার হাহাকার।
মায়ের মৃত্যুসংবাদ জানিয়ে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান **তারেক রহমান** সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি আবেগঘন শোকবার্তা প্রকাশ করেন। তাঁর সেই লেখায় ফুটে ওঠে একদিকে একজন রাষ্ট্রনায়কের প্রতি জাতির শোক, অন্যদিকে এক সন্তানের অপার বেদনা।
তারেক রহমান ফেসবুক পোস্টে লেখেন,
> “আমার মা, বিএনপি চেয়ারপারসন বেগম খালেদা জিয়া, সর্বশক্তিমান আল্লাহর ডাকে সাড়া দিয়ে আজ আমাদের ছেড়ে চলে গেছেন। ইন্না লিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন।”
এই একটি বাক্যেই যেন ভেঙে পড়ে বহু দশকের সংগ্রাম, ভালোবাসা ও আত্মত্যাগের ইতিহাস। তাঁর মৃত্যুসংবাদ ছড়িয়ে পড়ার সঙ্গে সঙ্গে দেশে ও বিদেশে শোকের বার্তা আসতে শুরু করে।
তারেক রহমান লেখেন, অনেকের কাছে খালেদা জিয়া ছিলেন **দেশনেত্রী**, আপোষহীন সংগ্রামী নেত্রী, গণতন্ত্রের মা কিংবা বাংলাদেশের মা। কিন্তু তাঁর কাছে তিনি ছিলেন সবার আগে একজন **মমতাময়ী মা**, যিনি নিজের সমগ্র জীবন উৎসর্গ করেছিলেন দেশ ও মানুষের কল্যাণে।
তিনি উল্লেখ করেন, খালেদা জিয়া আজীবন লড়াই করেছেন স্বৈরাচার, ফ্যাসিবাদ ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও গণতন্ত্র রক্ষার প্রশ্নে তিনি ছিলেন অবিচল ও আপসহীন। রাষ্ট্রক্ষমতায় থাকুক বা বিরোধী দলে—গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামে তাঁর ভূমিকা ছিল ঐতিহাসিক।
শোকবার্তায় তারেক রহমান আরও বলেন, খালেদা জিয়ার রাজনৈতিক জীবন ছিল ত্যাগ ও সংগ্রামে ভাস্বর। কিন্তু সেই কঠিন ও সংগ্রামী জীবনের আড়ালে তিনি ছিলেন পরিবারের সত্যিকারের অভিভাবক। একজন মা হিসেবে তাঁর ভালোবাসা, ধৈর্য ও সহানুভূতি পরিবারকে সবচেয়ে কঠিন সময়েও শক্তি ও প্রেরণা দিয়েছে।
তিনি লেখেন, খালেদা জিয়া বারবার গ্রেফতার হয়েছেন, দীর্ঘ সময় কারাবন্দি থেকেছেন, চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হয়েছেন এবং নির্দয় নিপীড়নের শিকার হয়েছেন। তবুও অসহনীয় যন্ত্রণা, একাকিত্ব ও অনিশ্চয়তার মধ্যেও তিনি কখনো ভেঙে পড়েননি। বরং নিজের অদম্য সাহস ও দৃঢ় মনোবল দিয়ে পরিবারের প্রতিটি সদস্যের মাঝে দেশপ্রেম ও মানবিকতার আলো জ্বালিয়ে রেখেছেন।
তারেক রহমানের লেখায় উঠে আসে এক গভীর ব্যক্তিগত বেদনার কথাও। তিনি জানান, দেশের জন্য খালেদা জিয়া হারিয়েছেন তাঁর স্বামী, হারিয়েছেন সন্তান। ব্যক্তিগত জীবনের এই অপূরণীয় ক্ষত সত্ত্বেও তিনি কখনো দেশ ও মানুষের প্রতি দায়বদ্ধতা থেকে সরে যাননি।
বরং এই দেশ, এই দেশের মানুষই হয়ে উঠেছিল তাঁর পরিবার, তাঁর অস্তিত্ব ও আত্মপরিচয়ের মূল ভিত্তি। রাষ্ট্র ও জনগণের কল্যাণেই তিনি নিজের জীবনের সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য বিসর্জন দিয়েছেন।
শোকবার্তায় তারেক রহমান বলেন, খালেদা জিয়া জনসেবা, ত্যাগ ও সংগ্রামের এমন এক অবিস্মরণীয় ইতিহাস রেখে গেছেন, যা বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক পরিক্রমায় চিরস্মরণীয় হয়ে থাকবে। ভবিষ্যৎ প্রজন্ম তাঁর নেতৃত্ব, সাহস ও আত্মত্যাগ থেকে অনুপ্রেরণা গ্রহণ করবে।
তিনি দেশের মানুষকে তাঁর মায়ের আত্মার মাগফিরাত কামনায় দোয়া করার আহ্বান জানান। একই সঙ্গে দেশবাসী ও আন্তর্জাতিক মহলের পক্ষ থেকে যে ভালোবাসা, আবেগ ও শ্রদ্ধা জানানো হয়েছে, তার জন্য তিনি ও তাঁর পরিবার গভীর কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন।
খালেদা জিয়ার মৃত্যু শুধু একটি রাজনৈতিক দলের বা একটি পরিবারের শোক নয়—এটি বাংলাদেশের গণতান্ত্রিক ইতিহাসের এক অপূরণীয় ক্ষতি। তিনবারের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হিসেবে তিনি রাষ্ট্র পরিচালনার পাশাপাশি বিরোধী রাজনীতিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাঁর নেতৃত্ব ও সংগ্রাম বাংলাদেশের বহুদলীয় গণতন্ত্র পুনঃপ্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখেছে। বিশেষ করে স্বৈরশাসনবিরোধী আন্দোলনে তাঁর ভূমিকা ইতিহাসে আলাদা স্থান করে নিয়েছে।
তাঁর মৃত্যুতে বিএনপিসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠন এবং সাধারণ মানুষ গভীর শোক প্রকাশ করেছে। দেশজুড়ে শোকসভা, দোয়া মাহফিল ও স্মরণ অনুষ্ঠান পালনের প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
খালেদা জিয়া চলে গেলেও তাঁর আদর্শ, সংগ্রাম ও দেশপ্রেম বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে চিরজাগরুক হয়ে থাকবে। গণতন্ত্র, স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের প্রশ্নে তাঁর আপসহীন অবস্থান ভবিষ্যতেও রাজনৈতিক প্রেরণার উৎস হয়ে থাকবে বলে মনে করছেন অনেকে।
একজন মা হিসেবে সন্তানের হৃদয়ে, একজন নেত্রী হিসেবে জাতির স্মৃতিতে—**বেগম খালেদা জিয়া** থেকে যাবেন অমলিন।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: