ঢাকা | রবিবার, ২০ এপ্রিল ২০২৫, ৭ বৈশাখ ১৪৩২

বিজিবি-বিজিপি’র ঐকমত্য আন্তঃসীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধে

Mahbubur Rohman Polash | প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০১৮ ১৫:২৪

Mahbubur Rohman Polash
প্রকাশিত: ১২ জুলাই ২০১৮ ১৫:২৪

 

সীমান্তে মাদকদ্রব্য, অস্ত্র, নারী ও শিশু পাচারসহ সবধরণের আন্তঃসীমান্ত অপরাধ প্রতিরোধ এবং সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় পরস্পরের মধ্যে তাৎক্ষণিক তথ্য বিনিময়ে বাংলাদেশ ও মায়ানমার সীমান্ত রক্ষীবাহিনী একমত পোষণ করেছে।
ঢাকায় অনুষ্ঠিত বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এবং মায়ানমারের বর্ডার গার্ড পুলিশ (বিজিপি)’র সিনিয়র পর্যায়ে ৪দিনব্যাপী সীমান্ত সম্মেলনের শেষ দিনে আজ বিজিবি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক মো, মজিবুর রহমান এ কথা বলেন।
রাজধানীর পিলখানায় বিজিবি’র সদর দপ্তরে ৯ জুলাই এ সম্মেলন শুরু হয়। আজ বৃহস্পতিবার যৌথ আলোচনার দলিল (জয়েন্ট রেকর্ড অব ডিসকাশন্স-জেআরডি) স্বাক্ষরের মধ্য দিয়ে সম্মেলন শেষ হয়।
এতে মিয়ানমারের চিফ অব পুলিশ ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মায়ো থানের নেতৃত্বে ১১ সদস্যের প্রতিনিধিদল অংশগ্রহণ করেন। মায়ানমার প্রতিনিধিদলে মায়ানমার পুলিশ ফোর্স (এমপিএফ) এর উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও সেদেশের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, ইমিগ্রেশন বিভাগ, মাদক নিয়ন্ত্রণ বিভাগ ও ঢাকায় নিযুক্ত মায়ানমার দূতাবাসের প্রতিনিধিবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
অপরদিকে বিজিবি’র অতিরিক্ত মহাপরিচালক, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো: আনিছুর রহমানের নেতৃত্বে ১৩ সদস্যের বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে বিজিবি’র উর্দ্ধতন কর্মকর্তাবৃন্দ ছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এবং মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
অতিরিক্ত মহাপরিচালক বলেন, সীমান্তের নিরাপত্তা রক্ষায় সমন্বিত যৌথ টহল, সীমান্তে নজরদারি ও অন্যান্য তৎপরতা বৃদ্ধি, উভয় পক্ষের মাঠ পর্যায়ের অধিনায়কদের মধ্যে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রক্ষা, সীমান্তে মাইন বা আইইডি অপসারণে এক সঙ্গে কাজ করতে উভয় পক্ষ সম্মত হয়েছে।
এক প্রশ্নের জবাবে মো, মজিবুর রহমান বলেন, মায়ানমার সিকিউরিটি ফোর্স কখনো সীমান্তে মাইন বা আইইডি পুতে রাখে না, তথাপি সীমান্তে মাইন বা আইইডি দেখা গেলে তাৎক্ষণিকভাবে তাদের সঙ্গে যোগাযোগ করে তা নিষ্ক্রিয় করতে প্রয়োজনে উভয় পক্ষ যৌথ্যভাবে কাজ করবে।
সীমান্ত সম্পর্ক উন্নয়নে কোন চ্যালেঞ্চ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমানে বিজিবি ও বিজিপি’র মধ্যে চমৎকার ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক বিরাজ করছে। তাদের সঙ্গে সম্পর্ক উন্নয়নে কোন চ্যালেঞ্চ নেই। তবে মাঠপর্যায়ে ভাষাগত সমস্যা রয়েছে। তারাও আমাদের ভাষা বুঝেন না, আমরাও তাদের ভাষা বুঝি না। কিন্তু উচ্চ পর্যায়ে এ ধরনের সমাস্যা নেই। অফিসার্স পর্যায়ে ইংরেজীতে কথা হয়।
তিনি বলেন, উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষী বাহিনীর মধ্যে সম্পর্ক উন্নয়নে সীমান্ত লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করা হয়েছে। সম্মেলনে উভয় পক্ষই বর্ডার লিয়াজোঁ অফিসের কার্যক্রম দ্রুত বাস্তবায়নের উপর গুরুত্ব আরোপ করেন। মায়ানমার পক্ষ হতে জানানো হয়, মংডুতে ইতিমধ্যে একটি বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করা হয়েছে। টেকনাফ উপজেলায়ও অনুরূপ একটি বর্ডার লিয়াজোঁ অফিস স্থাপন করা হয়েছে, যা সীমান্ত ব্যবস্থাপনায় নতুন দিগন্তের সূচনা করবে।
সীমান্তে মাদক ব্যবসায়ী ও ডিলারদের তালিকা তৈরি করে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে বলে সম্মেলনে জানানো হয়। সম্মেলনে ইয়াবার ব্যাপকতার বিষয়ে উভয় পক্ষ উদ্বেগ প্রকাশ করেন। যুব সমাজের উপর মাদক বিশেষ করে ইয়াবার ক্ষতিকর প্রভাবের কথা উল্লেখ করে উভয় পক্ষ সবধরণের মাদক চোরাচালান প্রতিরোধে পরস্পরকে সহযোগিতা প্রদানের বিষয়ে সম্মত হয়েছেন। মায়ানমারেও একই সমস্যা বিরাজ করছে এবং মায়ানমার কর্তৃপক্ষ সীমান্তে ইয়াবা পাচার প্রতিরোধে তৎপরতা অব্যাহত রেখেছে বলে সম্মেলনে জানানো হয়।
মায়ানমারের নাগরিকদের সীমান্ত অতিক্রমসহ সীমান্তে গুলিবর্ষণের ঘটনায় বিজিবির পক্ষ হতে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়। একই সাথে সীমান্তের শান্তি ও স্থিতিশীলতা রক্ষায় এধরণের কর্মকান্ডের পুনরাবৃত্তি বন্ধে মায়ানমারের প্রতি আহবান জানানো হয়। এ ধরণের অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা বন্ধে ইতোমধ্যে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে বলে মায়ানমারের পক্ষ হতে জানানো হয়।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: