odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Wednesday, 5th November 2025, ৫th November ২০২৫

চলতি মাসেই প্রশাসনের শীর্ষ ৮ পদে পরিবর্তন

অনলাইন ডেস্ক | প্রকাশিত: ৭ December ২০২২ ১৫:২৬

অনলাইন ডেস্ক
প্রকাশিত: ৭ December ২০২২ ১৫:২৬

চলতি মাসে মন্ত্রিপরিষদ সচিব, প্রশাসনের মুখ্য সচিবসহ আট সচিবের পদে রদবদল হয়েছে। প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস আগামীকাল অবসরে যাচ্ছেন।

মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলাম ১৫ ডিসেম্বর অবসরে যাবেন। জ্যেষ্ঠতা অনুযায়ী ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাচ্ছেন আরও ছয় সচিব।

এই আট পদে পরিবর্তনের ভিত্তিতে প্রশাসনের আরও বেশ কয়েকটি পদে রদবদল হতে পারে বলে জনপ্রশাসন সূত্র থেকে জানা যায়। প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব পদেও রদবদলের সম্ভাবনা রয়েছে।

প্রশাসনের সর্বোচ্চ পদ মন্ত্রিপরিষদ সচিব। বর্তমান মন্ত্রিপরিষদ সচিব খন্দকার আনোয়ারুল ইসলামের দ্বিতীয় দফা চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মেয়াদ শেষ হবে ১৫ ডিসেম্বর। এরপর নতুন মন্ত্রিসভায় নিয়োগ পাচ্ছেন পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ও বাংলাদেশ অ্যাডমিনিস্ট্রেটিভ সার্ভিস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি কবির বিন আনোয়ার। সচিব, সংশ্লিষ্ট সূত্র নিশ্চিত করেছেন। এ বিষয়ে একটি সারসংক্ষেপ তৈরি করা হয়েছে।

সাধারণত প্রশাসন ক্যাডারের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের একজনকে মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়। কবির বিন আনোয়ারও সেদিক থেকে এগিয়ে। তিনি বিসিএস সপ্তম ব্যাচের একমাত্র সিনিয়র অফিসার। এ ছাড়া তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মহাপরিচালক (প্রশাসন) ছিলেন।

নিয়োগের ১৯ দিন পরে অবসর: সিনিয়র সচিব কবির বিন আনোয়ার ৩ জানুয়ারী, ২০২৩-এ অবসরে যাওয়ার কথা রয়েছে। যদি তিনি মন্ত্রিপরিষদ সচিব হিসাবে নিযুক্ত হন তবে তিনি ১৯ দিন পরে অবসরে যাবেন। এরপর তাকে এ পদে রাখতে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে হবে। সরকার গত এক বছরে গুরুত্বপূর্ণ পদে কোনো চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়নি।

মন্ত্রিপরিষদ সচিবের পদ আলোচনায় থাকায় বিসিএস অষ্টম ব্যাচের কর্মকর্তারা নীতিগত ভাবে চুক্তিতে নিয়োগের বিপক্ষে। কারণ তিনি চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ পেলে অষ্টম ব্যাচের অন্য কোনো কর্মকর্তা মন্ত্রিপরিষদ সচিব হতে পারবেন না। এই ব্যাচের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা আগামী ছয় মাসের মধ্যে অবসরে যাবেন।

চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে দশম ও একাদশ ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে অনীহা রয়েছে। সম্প্রতি জননিরাপত্তা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিবের অবসরে যাওয়ার পাঁচ দিন আগে প্রজ্ঞাপন জারি করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের ধাক্কা ঠেকাতে স্থানীয় সরকার বিভাগে শূন্য পদের অন্তত এক মাস আগে নতুন নিয়োগও করা হয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত খাদ্য সচিব নাজমানারা খানুমকে চুক্তিতে নিয়োগ দিতে ডিও লেটার জারি করেছেন খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার। কিন্তু সরকার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়নি।

সাবেক সচিব এ কে এম আবদুল আউয়াল মজুমদার গণমাধ্যমকে বলেন, 'প্রশাসন ক্যাডারের সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তা হবেন মন্ত্রিপরিষদ সচিব, দ্বিতীয় সিনিয়র কর্মকর্তা হবেন মুখ্য সচিব, এটাই নিয়ম। শুধু বাংলাদেশে নয়, ভারত, সিঙ্গাপুর, দক্ষিণ কোরিয়াসহ উন্নত দেশ গুলোতেও এই নিয়ম অনুসরণ করা হয়। আমাদের দেশে এটি বেশিরভাগ সময় গ্রহণ করা হয়েছে। কিন্তু কিছু বাধা বিপত্তি ঘটেছে। যখন বিঘ্ন ঘটেছে, তখন তা রাজনৈতিক বিবেচনায়। কিন্তু এই ধরনের ঘটনা খুবই বিরল।'

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব (নিয়োগ, পদোন্নতি ও প্রেষণ বিভাগ) আবদুস সবুর মণ্ডল বলেন, প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ পদে বদলি-পদোন্নতির সিদ্ধান্ত শেষ মুহূর্তে হয়। কে কোন পদে আসছেন তা আগে থেকে বলা যাচ্ছে না। কারণ এসব সিদ্ধান্ত হয় সর্বোচ্চ পর্যায়ে।

মুখ্য সচিব হতে চান ৮ম ও ৯ম ব্যাচের কর্মকর্তারা: প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব আহমেদ কায়কাউস আগামীকাল অবসরে যাচ্ছেন। গত রবিবার মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ ধন্যবাদ ও অবসরের ঘোষণা দিয়ে প্রজ্ঞাপন জারি করে। আহমেদ কায়কাউস অবসর গ্রহণের পর বিশ্বব্যাংকের বিকল্প নির্বাহী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ পাবেন। তবে বিসিএস প্রশাসন ক্যাডারের অষ্টম ও নবম ব্যাচের কর্মকর্তারাও এ পদে নিয়োগ পেতে চাচ্ছেন বলে সচিবালয়ে আলোচনা রয়েছে।

অষ্টম ব্যাচের একাধিক কর্মকর্তা  বলেন, মন্ত্রিপরিষদ সচিবকে জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ দেওয়া হলে মুখ্য সচিবকেও জ্যেষ্ঠতার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। এই ব্যাচের সিনিয়র কর্মকর্তারা হলেন প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব গোলাম মোঃ হাসিবুল আলম, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ বিভাগের সিনিয়র সচিব মাহবুব হোসেন, বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ।

নবম ব্যাচের কর্মকর্তাদের মধ্যে আলোচনায় রয়েছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সিনিয়র সচিব তোফাজ্জল হোসেন মিয়া। চলতি বছরের ১২ জানুয়ারি থেকে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এর আগে তিনি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে বিভিন্ন পদে দায়িত্ব পালন করেছেন। তাই মুখ্য সচিবের কর্মকাণ্ড সম্পর্কে তিনি ভালোই অবগত। তাকে মুখ্য সচিব করা হলে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সচিবের পদও শূন্য হয়ে যাবে।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ফরহাদ হোসেন বলেন, 'আমরা সব সময় মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়ার চেষ্টা করছি। প্রশাসনের শীর্ষ পদের ক্ষেত্রেও তাই হবে। দেশের উন্নয়নের স্বার্থে নিরপেক্ষভাবে এসব কাজ করা হয়।'

৩১ ডিসেম্বর যারা অবসরে যেতে পারেন: ৩১ ডিসেম্বর অবসরে যাওয়া ছয় সচিব হলেন বিপিএটিসির রেক্টর রমেন্দ্রনাথ বিশ্বাস, পরিকল্পনা বিভাগের সচিব মামুন-আল রশিদ, কৃষি মন্ত্রণালয়ের সচিব সাইদুল ইসলাম, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন সচিব মোকাম্মেল হোসেন, ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের সচিব মো. . খলিলুর রহমান এবং যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক মেজবাহ উদ্দিন।

জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে সরকারের বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে ৭৮ জন সচিব রয়েছেন। এদের মধ্যে ৩৫ জন ২০২৩ সালের মধ্যে অবসরে যাবেন। এর বাইরে ৪০০ অতিরিক্ত সচিব বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগে কর্মরত আছেন। এর মধ্যে ১৩তম ব্যাচের কর্মকর্তারা অতিরিক্ত সচিব থেকে সচিব পদে পদোন্নতি পেতে পারেন।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: