odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Wednesday, 5th November 2025, ৫th November ২০২৫

রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসন ত্বরান্বিত করতে রাখাইনের অর্থনীতিতে সহায়তার প্রস্তাব ঢাকার

odhikarpatra | প্রকাশিত: ১৯ December ২০২৪ ২৩:৫৬

odhikarpatra
প্রকাশিত: ১৯ December ২০২৪ ২৩:৫৬

জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গাদের নিজ মাতৃভূমিতে প্রত্যাবাসন শুরু করার ভিত্তি হিসাবে মিয়ানমারের শান্তি, স্থিতিশীলতা এবং গণতন্ত্রের গুরুত্বের ওপর জোর দিয়ে রাখাইন রাজ্যের অর্থনীতি পুনর্গঠনে সহায়তা প্রদানের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ।

আজ পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, মিয়ানমারে স্থায়ী শান্তি, স্থিতিশীলতা ও গণতন্ত্র এবং রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গাদের নিরাপদে ও মর্যাদার সঙ্গে ফিরে যাওয়ার জন্য অনুকূল পরিবেশ দেখতে চায় বাংলাদেশ।

ব্যাংককে মিয়ানমার ও এর পাঁচ প্রতিবেশী দেশের মধ্যে মন্ত্রী/উপদেষ্টা পর্যায়ের অনানুষ্ঠানিক পরামর্শে বক্তব্য প্রদানকালে তিনি এ আহ্বান জানান।

রাখাইনে স্থিতিশীলতাকে অগ্রাধিকার দিয়ে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের জন্য একটি বিস্তারিত রোডম্যাপ তৈরির জন্য ঢাকার আহ্বান পুনর্ব্যক্ত করে তৌহিদ উপযুক্ত সময়ে রাখাইনের অর্থনীতি পুনর্গঠনে বাংলাদেশের সহায়তার প্রস্তাব দেন।

তিনি মিয়ানমারে শান্তি, নিরাপত্তা ও গণতন্ত্র পুনরুদ্ধারে আরও সক্রিয় ভূমিকা পালনের জন্য আসিয়ান ও অন্যান্য প্রধান আঞ্চলিক স্টেকহোল্ডারদের প্রতি আহ্বান জানান।

থাইল্যান্ডের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মারিস সাঙ্গিয়াম্পংসার সভাপতিত্বে আজ সকালে ছয় দেশের মধ্যে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী উ থান সোয়ে।

বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা দীর্ঘায়িত রোহিঙ্গা মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে জানান, গত কয়েক মাসে মিয়ানমার থেকে ৬০ হাজার মানুষের অনুপ্রবেশের কারণে আশ্রয়প্রাপ্তের সংখ্য আরো বেড়েছে।

তিনি সীমান্ত এলাকায় চলমান সশস্ত্র সংঘাতের পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সংগঠিত অপরাধ, মাদক, অস্ত্র ও মানব পাচারের বিষয়েও গুরুতর উদ্বেগ প্রকাশ করেন।

বাংলাদেশের উপদেষ্টা এই বছরের সেপ্টেম্বরে নিউইয়র্কে জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে অন্তর্র্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের দেওয়া তিন দফা প্রস্তাব পুনর্র্ব্যক্ত করেন।

তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদের তৃতীয় কমিটির সিদ্ধান্ত অনুযায়ী রোহিঙ্গা ইস্যুতে আন্তর্জাতিক সম্মেলন ২০২৫ সালের প্রথম ভাগে অনুষ্ঠিত হবে।

অনলাইন স্ক্যাম সেন্টারসহ আন্তঃদেশীয় অপরাধ মোকাবিলায় সংশ্লিষ্ট আইন প্রয়োগকারী সংস্থা ও সীমান্ত সংস্থাগুলোর মধ্যে আরও গোয়েন্দা তথ্য আদান-প্রদান ও সহযোগিতার পরামর্শ দেন তিনি।

মিয়ানমারের উপ-প্রধানমন্ত্রী এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী বিভিন্ন জাতিগত সশস্ত্র সংস্থার (ইএও) সঙ্গে সংলাপের জন্য তার সরকারের গৃহীত প্রচেষ্টা সম্পর্কে বৈঠকে অবহিত করেন।

তিনি বলেন, এই সংলাপের লক্ষ্য ২০২৫ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠানের পরিবেশ তৈরি করা, সশস্ত্র সংঘাতকে উসকে দেওয়া আন্তঃদেশীয় সংগঠিত অপরাধ মোকাবেলা করা এবং রাখাইন রাজ্য থেকে বাস্তুচ্যুত ব্যক্তিদের প্রত্যাবর্তনের জন্য সক্ষম সহায়তা কাঠামো গড়ে তোলা।

চীনা ও ভারতীয় প্রতিনিধিদলের প্রধানরা টেকসই আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও উন্নয়নের জন্য মিয়ানমারের শান্তি প্রক্রিয়ার প্রতি তাদের সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন।

তারা মিয়ানমারে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও স্থিতিশীল সরকারের জন্য সাধারণ ভিত্তি খুঁজে পেতে সহায়তা করার জন্য মিয়ানমারের বিভিন্ন পক্ষের মধ্যে সংলাপকে এগিয়ে নিতে নিজ নিজ প্রচেষ্টার কথা তুলে ধরেন।

থাই পররাষ্ট্রমন্ত্রী সীমান্ত এলাকা জুড়ে আইন-শৃঙ্খলার উন্নয়ন, অপরাধী অপারেটিভদের বিরুদ্ধে সমন্বিত ফ্রন্ট স্থাপন এবং শান্তিপূর্ণ ও অন্তর্ভুক্তিমূলক ভবিষ্যতের জন্য মিয়ানমারকে সমর্থন করতে প্রতিবেশী দেশগুলোর মধ্যে এই ধরনের অনানুষ্ঠানিক পরামর্শের প্রয়োজনীয়তার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন।

এর আগে, ব্যাংককে পৌঁছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেন।

তারা অভিন্ন স্বার্থের ক্ষেত্রে সহযোগিতা অব্যাহত রাখতে এবং দুই পক্ষের মধ্যে আগে সম্মত হওয়া ব্যবস্থার আলোকে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে একসঙ্গে কাজ চালিয়ে যেতে একমত হয়েছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা তৌহিদ প্রাসঙ্গিক দ্বিপক্ষীয় ও বহুপক্ষীয় বিষয়ে মত বিনিময়ের জন্য লাও পিডিআর-এর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এবং চীনের পররাষ্ট্র বিষয়ক উপমন্ত্রীর সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করেছেন।

এসব বৈঠকে তৌহিদ নির্দিষ্ট সময়সীমার মধ্যে স্বেচ্ছায়, নিরাপদ ও মর্যাদাপূর্ণ রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের বিষয়ে মিয়ানমার কর্তৃপক্ষের একটি কার্যকর রোডম্যাপের গুরুত্বের ওপর জোর দেন।

আজকের বৈঠকের পর শুক্রবার ব্যাংককে আসিয়ান পর্যায়ের একটি অনানুষ্ঠানিক বর্ধিত পরামর্শ অনুষ্ঠিত হবে, তাতে মিয়ানমার ও সংশ্লিষ্ট ইস্যুতে আঞ্চলিক ফোরামের পাঁচ দফা ঐকমত্যের অগ্রগতি নিয়ে আলোচনা করা হবে



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: