
বাণিজ্যযুদ্ধের উত্তাপে টিকটক ইস্যুতে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি। সমঝোতার এই মোড় কূটনীতি ও বিশ্ব অর্থনীতিতে নতুন ইঙ্গিত দিচ্ছে।
ওয়াশিংটন ও বেইজিংয়ের মধ্যে টিকটকের যুক্তরাষ্ট্র কার্যক্রম নিয়ে প্রাথমিক সমঝোতায় পৌঁছেছে দুই দেশ। সোমবার মাদ্রিদে অনুষ্ঠিত বৈঠকের পর মার্কিন অর্থমন্ত্রী স্কট বেসেন্ট জানিয়েছেন, একটি “ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি” হয়েছে, যা শুক্রবার প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিনপিং চূড়ান্ত করবেন। ট্রাম্প তার সোশ্যাল প্ল্যাটফর্ম ট্রুথ সোশ্যাল-এ লিখেছেন যে আলোচনা খুবই সফল হয়েছে। অন্যদিকে চীন নিশ্চিত করেছে যে, সমঝোতা হলেও তা কোনোভাবেই তাদের কোম্পানির স্বার্থ বিসর্জন দিয়ে হবে না।
টিকটকের মূল কোম্পানি বাইটড্যান্সকে বুধবারের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রে তাদের কার্যক্রম বিক্রি করতে হবে, নইলে দেশটিতে অ্যাপটি নিষিদ্ধ করা হবে। তবে ডেডলাইন ইতোমধ্যেই তিনবার বাড়ানো হয়েছে, এবং সর্বশেষ সময়সীমা শেষ হবে ১৭ সেপ্টেম্বর। মার্কিন গণমাধ্যম সিবিএস জানিয়েছে, প্রযুক্তি জায়ান্ট ওরাকলসহ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান টিকটকের মার্কিন কার্যক্রম চালু রাখতে অংশীদার হতে পারে, যদি চুক্তি সফল হয়। যুক্তরাষ্ট্র-চীন বাণিজ্যযুদ্ধের মাঝেই এই আলোচনা হচ্ছে। একসময় দুই দেশের মধ্যে আমদানীকৃত পণ্যের ওপর শুল্ক ১৪৫% পর্যন্ত বেড়ে গিয়েছিল। বেসেন্ট বলেছেন, সমঝোতার বাণিজ্যিক শর্তগুলো যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় নিরাপত্তার স্বার্থ রক্ষা করবে। গত জানুয়ারিতে মার্কিন সুপ্রিম কোর্ট একটি আইন বহাল রাখে, যাতে বলা হয়েছিল টিকটকের মূল কোম্পানি যদি মার্কিন শাখা বিক্রি না করে, তবে অ্যাপটি নিষিদ্ধ থাকবে। আইন কার্যকর হওয়ার পর একদিনের জন্য টিকটক অচল হয়ে যায়, তবে ট্রাম্প ৭৫ দিনের স্থগিতাদেশ দেন। মার্কিন বিচার বিভাগ অভিযোগ করেছে, টিকটক মার্কিন ব্যবহারকারীদের তথ্যের মাধ্যমে অপরিমেয় জাতীয় নিরাপত্তা ঝুঁকি তৈরি করছে। তবে বাইটড্যান্স বারবার দাবি করেছে, তাদের মার্কিন কার্যক্রম স্বাধীনভাবে পরিচালিত হয় এবং কোনো তথ্য চীনা সরকারের কাছে যায়নি।
চুক্তির সুনির্দিষ্ট বিবরণ এখনও প্রকাশ হয়নি। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মূল প্রশ্ন হলো টিকটকের শক্তিশালী রেকমেন্ডেশন অ্যালগরিদম কে নিয়ন্ত্রণ করবে এবং ব্যবহারকারীদের তথ্য পুরোপুরি যুক্তরাষ্ট্রে সংরক্ষণ ও এনক্রিপ্ট করা হবে কিনা। করনেল বিশ্ববিদ্যালয়ের টেক পলিসি ইনস্টিটিউটের পরিচালক সারা ক্রেপস বলেন, “যতক্ষণ না এসব বিষয় স্পষ্ট হচ্ছে, ততক্ষণ ঝুঁকি থেকে যাবে যে কাগজে মালিকানা বদলালেও মূল দুর্বলতাগুলো অমীমাংসিত থেকে যাবে। প্রাক্তন মার্কিন জাতীয় নিরাপত্তা কর্মকর্তা জিম সেক্রেটো বলেছেন, যদি জাতীয় নিরাপত্তা উদ্বেগ দূর করা যায় তবে এটি একটি বড় ধরনের সাফল্য হবে। তবে তিনি সতর্ক করে বলেন, বাইটড্যান্স এখন চীনের অন্যতম বৃহত্তম কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা কোম্পানি, আর টিকটকের সংগৃহীত ডেটা ভবিষ্যতে চীনের সামরিক ও গোয়েন্দা প্রযুক্তিকে শক্তিশালী করতে পারে। টিকটক নিয়ে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের টানাপোড়েন কেবল একটি অ্যাপকে ঘিরে নয়, বরং এর সঙ্গে জড়িয়ে আছে ডিজিটাল সার্বভৌমত্ব, জাতীয় নিরাপত্তা ও বৈশ্বিক প্রযুক্তি প্রতিযোগিতা। মাদ্রিদের আলোচনায় পাওয়া এই ফ্রেমওয়ার্ক চুক্তি সমস্যার সমাধানের একটি দিক উন্মোচন করলেও অনেক প্রশ্ন এখনো অমীমাংসিত—বিশেষ করে টিকটকের অ্যালগরিদমের নিয়ন্ত্রণ এবং মার্কিন ব্যবহারকারীদের তথ্য সুরক্ষা। আগামী দিনে ট্রাম্প-সি বৈঠকে চুক্তি চূড়ান্ত হলে তা শুধু টিকটকের ভবিষ্যৎ নয়, বরং দুই পরাশক্তির বাণিজ্যিক ও কূটনৈতিক সম্পর্কের দিকনির্দেশও নির্ধারণ করবে।
- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)
আপনার মূল্যবান মতামত দিন: