নিউইয়র্ক-লন্ডন, ৬ নভেম্বর ২০২৫
লন্ডনের মেয়র সাদিক খান ও নিউইয়র্কের নবনির্বাচিত মেয়র জোহরান মামদানি—দুজনই মুসলিম, অভিবাসী পরিবারের সন্তান এবং প্রগতিশীল রাজনীতির প্রতীক। তবে তাঁদের রাজনৈতিক যাত্রা ও বাস্তবতা একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ ভিন্ন।
সাদিক খান লন্ডনের এক শ্রমজীবী পাকিস্তানি পরিবারে জন্ম নেন। বাসচালকের ছেলে সেই খুদে এখন তিন মেয়াদে লন্ডনের মেয়র। তাঁর রাজনীতির ভিত্তি—সাশ্রয়ী আবাসন, পরিবেশবান্ধব নগরনীতি ও গণপরিবহন উন্নয়ন।
অন্যদিকে, উগান্ডায় জন্ম নেওয়া এবং শৈশবে নিউইয়র্কে অভিবাসী হয়ে আসা জোহরান মামদানি বামপন্থী গণতান্ত্রিক সমাজতন্ত্রের ধারায় বেড়ে উঠেছেন। তাঁর নির্বাচনী প্রতিশ্রুতির মূল লক্ষ্য ছিল “সবার নাগালে থাকা জীবন”—ভাড়া নিয়ন্ত্রণ, সামাজিক সুরক্ষা ও ধনীদের ওপর কর বৃদ্ধি।
দুজনই যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যের ডানপন্থী রাজনীতির সমালোচনার লক্ষ্যবস্তু। ডোনাল্ড ট্রাম্প সাদিক খানকে বলেছেন “stone cold loser” এবং মামদানিকে “pure communist”। ট্রাম্পের সাবেক উপদেষ্টা স্টিভ ব্যানন তাঁদের ‘red-green alliance’-এর সদস্য হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন—যেখানে লাল মানে বাম রাজনীতি, আর সবুজ মানে ইসলাম।
এই আক্রমণ শুধু রাজনৈতিক নয়, ব্যক্তিগত নিরাপত্তাকেও প্রভাবিত করেছে—দুজনকেই বাড়াতে হয়েছে নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
গাজা যুদ্ধ প্রসঙ্গে দুজনের অবস্থানও তাদের শহরের বাস্তবতা অনুযায়ী ভিন্ন। সাদিক খান প্রকাশ্যে ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের স্বীকৃতি চেয়েছেন ও ইসরায়েলি অভিযানে ‘genocide’ বলেছেন। অন্যদিকে, মামদানি যুদ্ধবিরতির পক্ষে অবস্থান নিলেও রিপাবলিকান নেতারা তাঁকে ‘জিহাদিস্ট’ আখ্যা দিয়েছেন।
লন্ডনে মুসলিম জনসংখ্যা প্রায় ১৫ শতাংশ, আর নিউইয়র্কে মাত্র ৬ শতাংশ—যেখানে ইহুদি জনগোষ্ঠী দ্বিগুণেরও বেশি। ফলে রাজনৈতিক সমীকরণও ভিন্ন।
খান মুসলিম পরিচয়কে সামঞ্জস্যপূর্ণভাবে উপস্থাপন করেন—ঈদ উদযাপনে অংশ নেন, আবার খ্রিষ্টান ক্যাথেড্রালে মেয়র হিসেবে দায়িত্ব নেন। LGBTQ অধিকারের পক্ষেও তিনি অবস্থান নিয়েছেন।
অন্যদিকে, মামদানি তরুণ, নারী ও অভিবাসী ভোটারদের যৌথ প্ল্যাটফর্ম গড়ে তুলেছেন, যা নিউইয়র্কের বাম রাজনীতিতে নতুন প্রাণ সঞ্চার করেছে।
দুজনেরই লক্ষ্য এক—বৈচিত্র্যময় শহরে অন্তর্ভুক্তিমূলক ও মানবিক নেতৃত্ব গড়ে তোলা। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, তাঁরা আজ বিশ্বের দুই বৃহত্তম নগরের প্রতীক—যেখানে প্রগতিশীলতা, ধর্মীয় সহাবস্থান ও মানবিক রাজনীতি হাত ধরাধরি করে এগিয়ে চলছে।
লন্ডনের সাদিক খান ও নিউইয়র্কের জোহরান মামদানি—দুজনই মুসলিম, অভিবাসী ও প্রগতিশীল নেতা। ভিন্ন অভিজ্ঞতা সত্ত্বেও তাঁরা আজ বৈচিত্র্য, মানবিকতা ও বাম রাজনীতির বৈশ্বিক প্রতীক।

আপনার মূল্যবান মতামত দিন: