odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | বৃহঃস্পতিবার, ৪ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২০ ভাদ্র ১৪৩২

চীনের নতুন অস্ত্র প্রদর্শন: মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে কড়া বার্তা

odhikarpatra | প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:২২

odhikarpatra
প্রকাশিত: ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫ ২৩:২২

বেইজিংয়ে আয়োজিত এক বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজে নতুন প্রজন্মের অস্ত্র, ড্রোন ও প্রযুক্তি প্রদর্শন করেছে চীন। রাষ্ট্রপতি শি জিনপিংয়ের আয়োজিত এ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন রাশিয়ার ভ্লাদিমির পুতিন ও উত্তর কোরিয়ার কিম জং উনসহ ২০টিরও বেশি দেশের রাষ্ট্রপ্রধান। বিশ্লেষকরা বলছেন, এটি শুধু চীনের সামরিক শক্তি প্রদর্শন নয়, বরং যুক্তরাষ্ট্র ও তার মিত্রদের উদ্দেশে এক শক্ত বার্তা।

. দ্রুত উৎপাদন ও বহুমুখী অস্ত্র ভাণ্ডার: চীনের প্রতিরক্ষা শিল্প এখন আর কেবল অনুকরণ নয়, বরং উদ্ভাবনী ও বৈচিত্র্যময় অস্ত্র তৈরির ক্ষমতা অর্জন করেছে। বিপুল সংখ্যক মিসাইল, যুদ্ধজাহাজ, ড্রোন ও প্ল্যাটফর্ম দ্রুত উৎপাদনের সক্ষমতা দেখিয়ে দিয়েছে দেশটি। তবে প্রশ্ন থেকেই যায়—এগুলো কতটা দক্ষতার সঙ্গে যুদ্ধক্ষেত্রে ব্যবহার করতে পারবে তারা, যেহেতু চীনের সেনাবাহিনী দীর্ঘদিন বড় কোনো যুদ্ধে অংশ নেয়নি।

. মার্কিন নৌবাহিনীর মোকাবেলায় ক্ষেপণাস্ত্র কৌশল: চীনের প্রদর্শনীতে ছিল ডংফেং-৬১, ডংফেং-৫সি আন্তঃমহাদেশীয় ব্যালিস্টিক মিসাইল, আর কুখ্যাত “গুয়াম কিলার” ডংফেং-২৬ডি। এ ছাড়া প্রদর্শিত হয় সুপারসনিক জাহাজবিধ্বংসী মিসাইল ও LY-1 লেজার অস্ত্র। বিশ্লেষকদের মতে, যুক্তরাষ্ট্রের শক্তিশালী বিমানবাহী রণতরী বহরের পাল্টা ভারসাম্য তৈরির কৌশল হিসেবেই এই ক্ষেপণাস্ত্রভিত্তিক শক্তি গড়ে তুলছে চীন।

. কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও ড্রোনে ভবিষ্যতের যুদ্ধনীতি: ড্রোনের বহর এবার ছিল নজরকাড়া। পানির নিচে বিশাল সাবমেরিন ড্রোন AJX-002 থেকে শুরু করে স্টেলথ আক্রমণ ড্রোন GJ-11 চীনের এআই-নির্ভর সামরিক কৌশলের ইঙ্গিত দেয়। এমনকি “রোবোটিক উলফ” পর্যন্ত দেখানো হয়েছে, যেগুলো শত্রু অনুসন্ধান থেকে শুরু করে মাইন শনাক্তকরণে ব্যবহৃত হতে পারে। ইউক্রেন যুদ্ধ থেকে শিক্ষা নিয়ে চীন এখন ‘ড্রোন বনাম প্রতিরক্ষা’ লড়াইকে অগ্রাধিকার দিচ্ছে।

. প্রযুক্তিতে অগ্রগতি, তবে যুক্তরাষ্ট্র এখনো এগিয়ে: যদিও চীনের প্রযুক্তি দ্রুত এগোচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র এখনো এগিয়ে আছে কৌশলগত পরিচালনায়। মার্কিন বাহিনীর মাঠপর্যায়ের সিদ্ধান্ত নেওয়ার স্বাধীনতা তাদেরকে বেশি দ্রুত ও কার্যকর করে তোলে। বিপরীতে চীনের শীর্ষনির্ভর কাঠামো মাঠপর্যায়ে তাৎক্ষণিক অভিযানে দুর্বলতা তৈরি করতে পারে।

. অস্ত্র বিক্রি ও কূটনৈতিক বার্তা:  এ কুচকাওয়াজ ছিল সম্ভাব্য অস্ত্র ক্রেতাদের জন্য এক বিশাল প্রচারণা। মিয়ানমারসহ একাধিক দেশ আগে থেকেই চীনা অস্ত্র কিনছে। নতুন ক্রেতা আকৃষ্ট করাই চীনের কৌশল। একই সঙ্গে পুতিন ও কিম জং উনের উপস্থিতি যুক্তরাষ্ট্রকে স্পষ্ট বার্তা দিয়েছে—বেইজিং, মস্কো ও পিয়ংইয়ং এখন একসঙ্গে শক্তি প্রদর্শন করছে।

চীনের এই মহাপ্যারেড শুধু সামরিক শক্তির প্রদর্শনী নয়, বরং ভূরাজনৈতিক বার্তাও। ক্ষেপণাস্ত্র, ড্রোন ও কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তাভিত্তিক অস্ত্রশস্ত্রের প্রদর্শন যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলারই ইঙ্গিত বহন করে। তবে যুদ্ধক্ষেত্রে কার্যকারিতা ও কৌশলগত পরিচালনায় চীন এখনও অনেকখানি পিছিয়ে যা তাকে সুপারপাওয়ার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার পথে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ।

- বিশেষ প্রতিনিধি (Special National Correspondent) মোঃ সাইদুর রহমান (বাবু)



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: