odhikarpatra@gmail.com ঢাকা | Thursday, 6th November 2025, ৬th November ২০২৫

জাতিসংঘ সফরে প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের সঙ্গে রাজনৈতিক নেতারা: ঐক্যের প্রদর্শন নাকি কৌশলী দায় বণ্টন?

odhikarpatra | প্রকাশিত: ২০ September ২০২৫ ২৩:০৬

odhikarpatra
প্রকাশিত: ২০ September ২০২৫ ২৩:০৬

ঢাকা, ২০ সেপ্টেম্বর ২০২৫ | অধিকার পত্র ডটকম

অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৯তম অধিবেশনে যোগ দিতে রোববার যুক্তরাষ্ট্র যাচ্ছেন। তবে এবারের সফর আলোচনায় এসেছে অন্য কারণে—তার সঙ্গে থাকছেন তিনটি রাজনৈতিক দলের চারজন প্রতিনিধি। এই সিদ্ধান্তকে কেউ দেখছেন জাতীয় ঐক্যের বার্তা হিসেবে, আবার কেউ দেখছেন কৌশলী দায় বণ্টনের প্রচেষ্টা হিসেবে।


রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তির তাৎপর্য

অন্তর্বর্তী সরকারের পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন জানিয়েছেন, প্রধান উপদেষ্টা জাতিসংঘ অধিবেশনের পাশাপাশি একাধিক দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন। আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমেও সাক্ষাৎকার দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে তার।
সরকারি ব্যাখ্যা অনুযায়ী, ভবিষ্যতে রাষ্ট্র পরিচালনায় রাজনৈতিক শক্তিরাই দায়িত্ব নেবে। তাই আন্তর্জাতিক মঞ্চে তাদের সম্পৃক্ত করাই সরকারের উদ্দেশ্য।

প্রেস সচিব ফয়েজ আহম্মদ বলেন:

“যে দলগুলোর প্রভাব ও সক্ষমতা বেশি, এবং ভবিষ্যতে নেতৃত্ব দেওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে—তাদের প্রতিনিধিকেই এ সফরে নেওয়া হয়েছে।”


ঐক্যের বার্তা নাকি সীমিত প্রতিনিধিত্ব?

রাজনৈতিক নেতাদের মতে, গণঅভ্যুত্থানের পর দেশে রাজনৈতিক শক্তির মধ্যে যে ঐক্য গড়ে উঠেছে, এই সফরে তারই প্রতিফলন ঘটানো হচ্ছে।
তবে সমালোচকদের প্রশ্ন—কেন কেবল তিনটি দল থেকেই প্রতিনিধি নেওয়া হলো? এতে কি নির্বাচনের আগে অন্যান্য দলগুলোকে বঞ্চিত করা হচ্ছে না?

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা মনে করছেন, এখানে দুটি উদ্দেশ্য একসঙ্গে কাজ করছে—

১.আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঐক্যের বার্তা দেওয়া।

২.রাজনৈতিক দায় ভাগাভাগি করে নেওয়া।


আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে প্রভাব

বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে এই সফরের গুরুত্ব অনেক। দীর্ঘ রাজনৈতিক অস্থিরতা ও অভ্যুত্থানের পর বাংলাদেশের নতুন সরকার কেমন অবস্থান নিচ্ছে, তা আন্তর্জাতিক মহল নিবিড়ভাবে পর্যবেক্ষণ করছে।
রাজনৈতিক প্রতিনিধিদের অন্তর্ভুক্তি একদিকে জাতীয় ঐক্যের চিত্র তুলে ধরতে পারে, অন্যদিকে আন্তর্জাতিক কূটনীতিতে ভবিষ্যৎ নেতৃত্ব নিয়ে এক ধরনের সংকেতও বহন করছে।


সম্ভাব্য ঝুঁকি ও চ্যালেঞ্জ

তবে কিছু ঝুঁকিও রয়েছে—

  • অন্যান্য রাজনৈতিক দল এই প্রক্রিয়াকে বৈষম্যমূলক হিসেবে দেখতে পারে।
  • নির্বাচনের আগে এর ফলে অন্য দলগুলোর মধ্যে আস্থাহীনতা বাড়তে পারে।
  • আন্তর্জাতিক মহল যদি এটিকে সীমিত রাজনৈতিক অংশগ্রহণ হিসেবে ব্যাখ্যা করে, তবে সরকারের ঐক্যের বার্তা দুর্বল হয়ে যেতে পারে।

পরিশেষে :

জাতিসংঘ সফরে রাজনৈতিক নেতাদের অন্তর্ভুক্তি নিঃসন্দেহে বাংলাদেশের কূটনৈতিক ইতিহাসে একটি ব্যতিক্রমী উদ্যোগ। এটি যদি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে ঐক্যের ইতিবাচক বার্তা পৌঁছে দিতে পারে, তবে দেশের ভাবমূর্তি উজ্জ্বল হবে। তবে সীমিত দলীয় অংশগ্রহণ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা যদি সমাধান না হয়, তাহলে ঐক্যের পরিবর্তে বিভাজনের ইঙ্গিতও দিতে পারে।

বাংলাদেশ এখন এক সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে—এই সফর তাই কেবল কূটনৈতিক সফর নয়, বরং দেশের রাজনীতির ভবিষ্যৎ দিকনির্দেশনাও নির্ধারণ করতে পারে।



আপনার মূল্যবান মতামত দিন: